ছেলের মৃত্যুর পর তাঁকে দেখা গিয়েছিল কংগ্রেসের প্রতিবাদ সভায়। কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, ‘বিচার চাই’। সেই ‘বিচারের’ আশাতেই তৃণমূল প্রার্থীর মিছিলে হাঁটলেন সবং কলেজের নিহত ছাত্র পরিষদ কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানার বাবা ভানুভূষণ।
গত বছর অগস্টে সবং সজনীকান্ত কলেজ চত্বরে কৃষ্ণপ্রসাদ খুনের ঘটনায় বরাবর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) দিকে আঙুল তুলেছে সিপি। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুরের তৎকালীন এসপি ভারতী ঘোষ একে ‘ছাত্র পরিষদের কোন্দল’ বলে দাবি করেন। টিএমসিপি ধৃতদের লঘু ধারাও দেওয়া হয়। এ নিয়ে রীতিমতো সরব হন সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। কলকাতায় মানসের অনশন মঞ্চেও ছিলেন কৃষ্ণপ্রসাদের বাবা। এখন অবশ্য বলছেন, ‘‘এত দিন কংগ্রেসের লোকেরা অনেক কথা বলেছেন। কিছুই তো হয়নি। আমরা সব সময় বিচার চেয়েছি। সেটা তৃণমূল দেখবে বলেছে।’’
ভোটের মুখে এই ঘটনায় অন্য গন্ধ পাচ্ছে বিরোধীরা। দেখছে কামদুনির ছায়া। কামদুনিতে নির্যাতিতার পরিজনেরা চাকরি পেয়েছেন। মিলেছে ক্ষতিপূরণের টাকা। তার পাল্টা হিসেবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁদের প্রতিবাদী স্বর। ভোটে সবং কাণ্ডের ছায়া এড়াতে তৃণমূল সেই কৌশল নিয়েছে বলেই বিরোধীদের অভিযোগ। তাঁদের মতে, এখানে টোপ কৃষ্ণপ্রসাদের দাদা-বৌদিদের চাকরি আর নিহতের বাবা-মার বার্ধক্য ভাতা। মানসবাবুও বলছেন, ‘‘কৃষ্ণপ্রসাদের পরিবারকে রমাপ্রসাদ গিরি, অমূল্য মাইতি, নির্মল ঘোষ টাকা ও চাকরির টোপ দিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছে।”
এ বার ভোটে জোট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী মানসবাবুর বিরুদ্ধেই লড়ছেন তৃণমূলের নির্মল ঘোষ। বুধবার সবংয়ের বেনেদিঘি থেকে বসন্তপুর হাইস্কুল পর্যন্ত মিছিলে হাঁটেন নির্মলবাবু। তাতেই পা মিলিয়েছিলেন ভানুভূষণবাবু, তাঁর মেজো ছেলে চন্দন, বৌমা সবিতাদেবী। হঠাৎ কেন তৃণমূলের মিছিলে? এ বার কৃষ্ণপ্রসাদের বাবার গলায় ক্ষোভ। বৃদ্ধ বললেন, ‘‘সে দিন মানস ভুঁইয়া এসে আমার বাড়ির পিছনের জমিতে সভা করল। ছেলেকে নিয়ে অনেক কথা বলল। কিন্তু আমার বাড়িতে এক বার খোঁজ নিল না। এখন তৃণমূল আমাদের পাশে দাঁড়াতে চাইছে। তাই ওঁদের সমর্থন জানিয়ে মিছিলে গিয়েছি।” মানসবাবুর অবশ্য ব্যাখ্যা, “ওই দিন বামেরাই সভা করেছিল। কারও বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ ছিল না।’’
মিছিলে যাওয়ার অন্য কারণ শোনা গেল কৃষ্ণপ্রসাদের বৌদির কথায়। সবিতাদেবীর দাবি, ‘‘সে দিন ভেবেছিলাম প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী আসবেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারব ভেবেই মিছিলে গিয়েছিলাম।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ঘটনার পর থেকেই কৃষ্ণপ্রসাদের পরিবারকে কাছে টানতে মরিয়া যুব তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি। তাঁর মাধ্যমেই কখনও পরিবারের কাউকে চাকরি, কখনও ভাতা, কখনও খোদ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে পুত্রহারা বাবা-মাকে।
রমাপ্রসাদের অবশ্য দাবি, “ওঁদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ওঁদের নিয়ে যাব বলেছি। কিন্তু চাকরি নিয়ে কোনও কথা হয়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy