Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

শিল্পাঞ্চলে সংযত ঘাসফুল, অন্যত্র নামল জনজোয়ার

দুধ সাদা এসইউভি-তে জোড়া ফুলের পতাকা। প্রার্থী নামতেই পিছন পিছন অনুগামীরাও। ব্যারাকপুর প্রশাসনিক ভবনের সামনে বাঁশের ব্যারিকেড। ব্যারাকপুর মহকুমার ১২টি বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থীদের মনোনয়নের দিন।

উৎসাহী কর্মী। ছবি: নির্মল বসু।

উৎসাহী কর্মী। ছবি: নির্মল বসু।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৪৯
Share: Save:

দুধ সাদা এসইউভি-তে জোড়া ফুলের পতাকা। প্রার্থী নামতেই পিছন পিছন অনুগামীরাও। ব্যারাকপুর প্রশাসনিক ভবনের সামনে বাঁশের ব্যারিকেড। ব্যারাকপুর মহকুমার ১২টি বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থীদের মনোনয়নের দিন। প্রার্থীর সঙ্গে পাঁচ জনের প্রবেশাধিকার। বাকিরা বাইরে। নির্বাচন কমিশনের কড়া নির্দেশে প্রশাসনও তৎপর। এর মধ্যেই এক তৃণমূল কর্মী ভিড়ের মধ্যে থেকে বলতে শুরু করেছিলেন, ‘‘সবুজ আবিরটা গাড়িতেই রয়ে গেল।’’ প্রবীণ এক কর্মী ধমক দিলেন, ‘‘একদম নয়। কোনও উন্মাদনার প্রয়োজন নেই।’’

চুম্বকে, মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন এমনই সংযত চিত্রের সাক্ষী থাকল ব্যারাকপুর। পাঁচ বছর আগের ছবিটার সঙ্গে যা একেবারেই মেলে না বলে জানালেন স্থানীয় মানুষজন। গত বিধানসভা ভোটের আগে এই তৃণমূল প্রার্থীদের অনেকেই মনোনয়ন জমা দিতে এসে সবুজ আবিরে হোলি খেলেছেন। গ্যাস বেলুন ছাড়া হয়েছে। বিটি রোড, ঘোষপাড়া রোড স্তব্ধ করে মিছিল এসেছে। বেলা গড়াতেই লক্ষ লোকের ভিড় উপচে পড়েছে প্রশাসনিক ভবনের সামনে। এ বার সব শান্ত। প্রার্থী-পিছু অনুগামীর সংখ্যা নেহাতই কম। উন্মাদনার লেশমাত্র নেই।

এ সবই নির্বাচন কমিশনের কড়াকড়ির ফল, নাকি বুঝেশুনেই মনোনয়নে উন্মাদনা এড়িয়ে গেলেন প্রার্থীরা?

দমদম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে নতুন সরকার গড়ার স্বপ্ন ছিল। তখন আবেগ আর উন্মাদনা ছিল অন্য রকম। এখন একটা তৈরি সরকারকে আরও উন্নয়নের কাজ করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য এখন সে দিকে।’’

কামারহাটির প্রার্থী মদন মিত্রের মনোনয়ন অবশ্য এ দিন জমা পড়েনি। নোয়াপাড়ার তৃণমূল প্রার্থী মঞ্জু বসুও মনোনয়ন দেননি। বুধবার বাম ও কংগ্রেসের জোট প্রার্থী এবং বিজেপির প্রার্থীদের সঙ্গেই এই দুই বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচনী আধিকারিকেরা।

তবে এ দিন সকালে মনোনয়ন জমা নেওয়ার শুরুতেই প্রশাসনিক ভবনে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন ভাটপাড়ার জোট সমর্থিত নির্দল প্রার্থী জিতেন্দ্র সাউ। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় সিপিএম নেতারা। প্রথমে সিপিএম প্রার্থী হিসাবে তাঁর দেওয়াল লেখা হলেও শেষ পর্যন্ত আরজেডি’র সঙ্গে আসন রফা না হওয়ায় নির্দল প্রার্থী হিসাবে তিনি দাঁড়ান ভাটপাড়ার তিনবারের বিধায়ক অর্জুন সিংহের বিরুদ্ধে। নির্দল হিসাবে তাঁর প্রতীক কাপ-প্লেটই পছন্দ। সেই অনুযায়ী, ফ্লেক্স ও ব্যানার বানাতে দিয়েছেন। পাছে প্রতীক হাতছাড়া হয়ে যায়, তাই আগেভাগেই মনোনয়ন জমা দেওয়ার ঘরে ঢুকে পড়েছিলেন। নির্বাচনী আধিকারিক তাঁকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন, তখনও জমা নেওয়ার সময় হয়নি বলে।

ইতিমধ্যে ঠিক ১১টার সময়েই মনোনয়ন দিতে ঢোকেন অর্জুনবাবু। তাঁকে আগে ঢুকতে দেখে জিতেন্দ্রবাবু মৃদু প্রতিবাদও করেন। তাতে অবশ্য আমল দেননি অর্জুনবাবু। কার্যত নিঃশব্দেই নিজের মনোনয়ন জমা দিয়ে বেরিয়ে যান। জিতেন্দ্রবাবু অবশ্য নিজের পছন্দের প্রতীক পেয়ে হাঁফ ছেড়েছেন। মনোনয়ন জমা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে অর্জুনবাবু সম্পর্কে তাঁর উক্তি, ‘‘আমি আগে এসেও পরে মনোনয়ন জমা দিতে হল। সব সময় ওই লোকটা কিছু না কিছু চালাকি করবে। সতর্কতার জন্যই নিজের প্রতীকে আগে মনোনয়ন জমা দেওয়ার তাড়া ছিল।’’ বীজপুর থেকে শুভ্রাংশু রায়ের সঙ্গেও এ দিন তাঁর বিধানসভার দুই পুরসভা বীজপুর ও হালিশহরের পুরকর্তারা হাজির ছিলেন। ব্যারাকপুরের শীলভদ্র দত্তও এ দিন মনোনয়ন জমা দেন তাঁর এলাকার পুরপ্রধানদের সঙ্গে নিয়ে।

বনগাঁ, বসিরহাট, বারাসতেও এ দিন তৃণমূল প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

সোমবার সকালে বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের দীপেন্দু বিশ্বাস তিনটি কালী মন্দির এবং মাওলানাবাগ শরিফ ঘুরে টাউনহল চত্বরে আসেন। ততক্ষণে কালী, শিব মন্দির ঘুরে এসে পড়েছেন হিঙ্গলগঞ্জের প্রার্থী দেবেশ মণ্ডল। মিছিল জমকালো করতে জাতীয় পতাকা হাতে শিশুদের কেউ সেজেছিল আদিবাসী, কেউ ভারতমাতা। আবার কয়েকজনকে ভুত-প্রেত সাজতেও দেখা গেল।

বনগাঁতেও এ দিন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। দলের কর্মী-সমর্থকদের চাপে গোটা বনগাঁ শহর সকাল থেকে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বিভিন্ন বিধানসভা এলাকা থেকে প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আসেন। বারাসতে জেলাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দেন বারাসতের তৃণমূ‌ল প্রার্থী চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী, বিদায়ী মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকরা। দেগঙ্গার প্রার্থী তথা জেলা সভাধিপতি রহিমা মণ্ডলও মনোনয়ন দিয়েছেন।

অন্য দিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির তৃণমূল প্রার্থী যোগরঞ্জন হালদারও এ দিন মনোনয়ন দিয়েছেন। কুলপুরোহিতের নির্দেশ মেনে ১২টার পরে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বলে জানালেন। ক্যানিঙেও এ দিন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা।

কাকদ্বীপের মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন‌পত্র জমা দিয়েছেন কাকদ্বীপের বিজেপি প্রার্থী কৌশিক দাস।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy