ঢোলাহাটের নিহত তৃণমূল নেতা আবুজার মোল্লাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।
দলের কর্মী-সম্মেলন সেরে নির্জন গ্রামের রাস্তা ধরে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন তৃণমূল নেতা। পিছনের আসনে দলীয় কর্মী। আচমকা মোটরবাইক লক্ষ করে ছোড়া হতে থাকে বোমা। বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারান নেতা। দু’জনে গিয়ে পড়েন ধানখেতে। এ বার শুরু হয় গুলি। সঙ্গী গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পালাতে পারলেও প্রাণে বাঁচতে পারেননি ওই নেতা। গুলির পরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে দুষ্কৃতীরা তাঁকে চপার দিয়েও কোপায়।
বুধবার, দোলের রাতে কাকদ্বীপের কেঁদোরামচন্দ্রপুর এলাকায় এই ঘটনায় নিহতের নাম আবুজার মোল্লা (৬৫)। তাঁর বাড়ি শিবনগর গ্রামে। তিনি তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা ছিলেন। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁর সঙ্গী তৃণমূল কর্মী জাহাঙ্গির হোসেন ভাগ্গিকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, বছর দশেক আগে একটি পুরনো বিবাদের জেরে খুনের বদলা হিসেবেই আবুজারকে খুন করা হয়। সেই পুরনো খুনের ঘটনায় আবুজারের নাম জড়িয়েছিল। একই ধারণা স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বেরও। কিন্তু বিধানসভা ভোটের আগে দলীয় নেতা খুনে দক্ষিণ ২৪ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব সিপিএম ও কংগ্রেসের দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলায় ঘটনায় লেগেছে রাজনীতির রং। দুই বিরোধী দলই অভিযোগ মানেনি। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বৃহস্পতিবার পুলিশ অবশ্য হাজিমুদ্দিন পিয়াদা, মঞ্চেপ হালদার এবং সঞ্জীবন সর্দার নামে তিন সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, এই খুনের সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মোট ১৬ জনের নামে অভিযোগ হয়েছে। ধৃত তিন জনকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ওই এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীও টহলদারি শুরু করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে কাকদ্বীপের দলীয় প্রার্থী মন্টুরাম পাখিরার উদ্যোগে তৃণমূলের কর্মী-সম্মেলন ছিল কেঁদোরামচন্দ্রপুরেই। সেখান থেকে রাত ১০টা নাগাদ দু’টি মোটরবাইক শিবনগরের দিকে আসছিল। একটিতে ছিলেন আবুজার এবং দলীয় কর্মী জাহাঙ্গির। পিছনেরটায় আরও দুই তৃণমূল কর্মী। যে রাস্তায় আবুজার খুন হন, তার এক দিকে খাল, অন্য দিকে ধানখেত। রাতের অন্ধকারে দু’টি মোটরবাইককে নিশানা করে অন্তত ১৪টি বোমা ছোড়া হয়। আবুজার বাইক নিয়ে ধানখেতে গিয়ে পড়েন। পিছনের মোটরবাইকটি গিয়ে পড়ে খালে। সেই বাইকের দুই আরোহী গ্রামের ভিতরে গিয়ে প্রাণ বাঁচান। আবুজার পারেননি। ধানখেতে গিয়ে আবুজার এবং জাহাঙ্গিরকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। জাহাঙ্গিরের পাঁজরায় গুলি লাগে। ওই অবস্থাতেই তিনি পালান। বুকে গুলি লাগায় আবুজার আর উঠতে পারেনি। একা পেয়ে দুষ্কৃতীরা তাঁকে চপার দিয়েও কোপায়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। জাহাঙ্গিরের কাছ থেকেই ফোনে ঘটনার কথা জানতে পারেন দলের নেতারা। তাঁরা এসে জাহাঙ্গিরকে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যান। বৃহস্পতিবার দুপুরে আবুজারের দেহের ময়না-তদন্ত হয় ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে। সেখানে যান জেলা তৃণমূল সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং মন্টুরামবাবু। আবুজারের ছেলে ১৬ জনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
শোভনবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘বিরোধীরা পরিকল্পনা করেই খুন করেছে আমাদের নেতাকে।’’ একই সুরে আবুজারের পুত্রবধু তথা তৃণমূল পরিচালিত কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি মমতাজ মোল্লাও বলেন, ‘‘সিপিএম ও কংগ্রেস পরিকল্পিত ভাবে খুন করেছে স্বামীকে।’’ কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাকদ্বীপের ওই এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জানান, কেঁদোরামচন্দ্রপুরের দু’টি বুথই তৃণমূলের দখল রয়েছে। সিপিএমের সংগঠনের কোনও জোর নেই। কংগ্রেসকে দূরবিন দিয়ে খুঁজতে হবে। সেই কারণে রাতে শিবনগরে ফেরার সময়ে নিরাপদ হিসেবে ওই রাস্তাই বেছে নিতেন আবুজার।
জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের তোলা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে সিপিএম।
জেলা সিপিএম সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই খুন হন ওই নেতা। বুধবার রাতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতেই ওরা কর্মী-সম্মেলন করছিলেন। সিপিএম জড়িত নয়। মিথ্যা অভিযোগে আমাদের কর্মীদের ফাঁসানো হল।’’ একই সঙ্গে তিনি ওই এলাকায় দলের দুই কর্মীকে মারধরের অভিযোগ তোলেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। প্রহৃতদের কাকদ্বীপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। হামলা বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন কাকদ্বীপের তৃণমূল প্রার্থী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy