বনগাঁয় ভোট প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
নির্বাচন কমিশনকে হুঁশিয়ারি দিলেও নসীম জৈদীকে ব্যক্তি-আক্রমণ করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দিদির ভাইদের সে দায় কোথায়! তাই সব্যসাচী দত্তের মতো তৃণমূল নেতা এ বার সরাসরি মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীর নাম করেই কটূক্তি শুরু করলেন।
কমিশনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ‘‘বেশ করেছি। লক্ষ বার করব। যা ক্ষমতা থাকে করো।’’ দিদি-র মন্তব্যেই পরিষ্কার ছিল মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে তাঁরা কী চোখে দেখছেন। এটুকু বার্তাই যথেষ্ট ছিল তৃণমূলের বড়-মেজো-সেজো নেতাদের কাছে! জৈদীকে আক্রমণে আপাতত সবচেয়ে এগিয়ে রইলেন বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত। শুক্রবার রীতিমতো ব্যঙ্গের সুরে যাঁর মন্তব্য, ‘‘বিরোধীদের বলুন, এ বার নসীম জৈদীকে আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে! নসীম জৈদী, বাকি সব কয়েদি!’’
মমতা তথা তৃণমূলের এই রাজনীতির পিছনে শাসকের দুর্বলতাই দেখছেন অনেকে। তাঁদের মতে, গত পাঁচ বছরে দিদির বড় মাপের কোনও প্রশাসনিক সাফল্য থাকলে এ সব বলতে হত না। একে তো বড় মুখ করে প্রচারের মতো কোনও বিষয় নেই। উল্টে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে ল্যাজেগোবরে দশা তৃণমূলের! সে সব থেকে মুখ ঘোরাতেই এ ভাবে কথা বলতে হচ্ছে তৃণমূল নেতাদের।
নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগে বৃহস্পতিবারই মমতাকে শো-কজ নোটিস ধরিয়েছিল কমিশন। সেই সঙ্গে ভোটে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে বীরভূমের এসপি মুকেশ কুমার এবং তিন ওসি-কে সরিয়েছিল তারা। সেই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ মমতা এ দিন কৃষ্ণনগরের সভায় বলেন, ‘‘ক’দিন আগে দুটো অফিসারকে বদলি করেছে। লাভপুর আর ময়ূরেশ্বরের ওসি বদল করেছে। এক অফিসারের বিরুদ্ধে আর এক অফিসারকে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কই কেরলে, তামিলনাড়ুতে, অসমে তো করনি!’’
মমতা যেমন কমিশনকে কড়া আক্রমণ করছেন, তেমন তাঁর সরকারও সক্রিয়। মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো কমিশনের নোটিস নিয়ে এ দিন যে জবাব রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন, তাতে যুক্তির সঙ্গে রয়েছে তির্যক ভঙ্গিও।
আসানসোলের জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী কেন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন, তা নিয়ে কৈফিয়ত চেয়েছিল কমিশন। মুখ্যমন্ত্রীর তরফে সেই নোটিসের লিখিত জবাব দিয়ে মুখ্যসচিব শুক্রবার বলেন, ‘‘আসানসোলের খনি এলাকায় যারা বেআইনি খাদান থেকে কয়লা তোলে, তাদের রুজিরুটির ব্যবস্থা করার বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনা হচ্ছে। আর আসানসোলকে নতুন জেলা ঘোষণার সিদ্ধান্ত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মন্ত্রিসভার বৈঠকেই নেওয়া হয়েছিল। তাই কোনও নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ হয়নি।’’ এর পরেই মুখ্যসচিবের খোঁচা, ‘‘কমিশন যখন কাউকে নোটিস পাঠায়, তার আগে প্রাথমিক খোঁজখবর করে নিলে কোনও জটিলতা হয় না। মুখ্যমন্ত্রীকে নোটিস পাঠানোর আগেও কমিশনের বিষয়গুলি সম্পর্কে একটু খোঁজখবর করা প্রয়োজন ছিল। তা হলে নোটিস পাঠানোর প্রয়োজন হত না। আশা করব, পরবর্তী ক্ষেত্রে কমিশন নোটিস দেওয়ার আগে একটু সতর্ক হবে।’’
বিরোধীরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া কমিশনের নোটিসটাই দুর্বল ছিল। তারই সুযোগ নিয়েছেন মমতা। আসানসোলকে নতুন জেলা করার প্রতিশ্রুতির মতো তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে নোটিস না পাঠালেও কিছু এসে যেত না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কমিশনের সাংবিধানিক এক্তিয়ারকে টানা নস্যাৎ করার পরেও কমিশন কেন কিছু করছে না, সেটাই বিস্ময়ের। পাশাপাশি মুখ্যসচিব কেন ওই চিঠির উত্তর দিয়েছেন, তা নিয়ে আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র আবার বলেন, ‘‘যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, এ বার তাঁকে চিঠি দেওয়া হোক!’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এখানে থাকতে থাকতেই যে ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তার পরে ভোট নিরাপদ হতে পারে কি? কমিশন চাইলে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ভোট পিছোতেও পারে। ত্রিপুরায় তো আমরা প্রচার সেরে বিমানবন্দরে ফিরে খবর পেয়েছি, কমিশন ভোট পিছিয়ে দিয়েছে কয়েক সপ্তাহ।’’ একই সঙ্গে কমিশনের ‘ভরসা’য় না থেকে মানুষকেই নিজের অধিকার প্রয়োগে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেছেন সূর্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy