Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

সবংয়ে তৃণমূল কর্মী খুন, তপ্ত ভোট রাজনীতি

দ্বিতীয় দফার ভোটের বাকি দু’দিন। তার আগে এক তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল কংগ্রেসের গড় সবংয়ে। আর সেই ঘটনা ঘিরে তেতে উঠল রাজ্যের ভোট-রাজনীতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সবং শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৯
Share: Save:

দ্বিতীয় দফার ভোটের বাকি দু’দিন। তার আগে এক তৃণমূল কর্মীকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল কংগ্রেসের গড় সবংয়ে। আর সেই ঘটনা ঘিরে তেতে উঠল রাজ্যের ভোট-রাজনীতি।

শুক্রবার রাতে স্থানীয় মোহাড় পঞ্চায়েতের দুবরাজপুর গ্রামে জয়দেব জানা (৩৮) নামে ওই তৃণমূল কর্মীকে খুনের ঘটনায় এলাকার প্রার্থী, বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া, জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া, ব্লক সভাপতি অমল পণ্ডা, আবু কালাম বক্স-সহ ২২ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ ৮ জন বাম ও কংগ্রেস সমর্থককে গ্রেফতারও করেছে। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্তের বক্তব্য, ‘‘ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮ জনকে ধরেছি আমরা।’’ জয়দেব খুনে যাঁরা অভিযুক্ত, তাঁদের এক জনের স্ত্রীকে তৃণমূলের কয়েক জন গণধর্ষণ করেছে বলে পাল্টা অভিযোগও করেছে কংগ্রেস ও সিপিএম। যদিও শনিবার রাত পর্যন্ত এ নিয়ে তদন্ত তেমন এগিয়েছে বলে খবর নেই।

ঘটনার অভিঘাত অবশ্য শুধুই সবংয়ে সীমাবদ্ধ নেই। ভোট-পর্বের মাঝে এমন ঘটনায় মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব শিবিরের শীর্ষ নেতারাই। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীরা সবংয়ে এসে সরাসরি মানসবাবুকে গ্রেফতার করার দাবি তুলেছেন। কয়েক দিন আগে তৃণমূল নেতা মুকুল রায় হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তাঁদের দলের কেউ খুন হলে এর পরে দেহ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সামনে ধর্না দেবেন। শেষ পর্যন্ত নিহত জয়দেবের দেহ কলকাতায় কমিশনের দফতর পর্যন্ত পৌঁছয়নি ঠিকই, কিন্তু এলাকায় বিক্ষোভ, শোক-মিছিল, শাসক দলের শীর্ষ নেতাদের দ্রুত এসে পড়া— দেহ-রাজনীতির বাকি সব পর্বই পর পর ঘটেছে এ দিন।

রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই, এই অভিযোগকে অন্যতম হাতিয়ার করে এ বার জোট বেঁধেছে বাম ও কংগ্রেস। এমন সময়ে নিজেদের কর্মী খুন হওয়ার ঘটনায় বিরোধীদের দিকেই তোপ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে শাসক দল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন আঙুল তুলেছেন সিপিএমের দিকে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘নির্বাচন কমিশনকে অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। মহম্মদ সেলিমের বদলা নেওয়ার বিবৃতির ফলেই এই খুন। এক জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারালেন।’’ দিন কয়েক আগেই বীরভূমের লাভপুরে সিপিএম সাংসদ সেলিম বলেছিলেন, ‘‘আমি সূর্য মিশ্র নই! বদলা নেব না, বলছি না। আমাদের যাঁরা শহিদ হয়েছেন, তাঁদের রক্তের হিসাব নেব।’’ সরকার বদল হলে ‘অপরাধীর বিচারে’র কথা বলেছিলেন সেলিম। তাঁর সেই মন্তব্যেই উস্কানি ছিল বলে অভিযোগ তৃণমূলের। সেই সঙ্গে তারা কাঠগড়ায় তুলেছে কংগ্রেস প্রার্থী মানসবাবুকে।

বিরোধীরা অবশ্য পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘তৃণমূল কর্মীরা বার বার খুন হন তৃণমূলের হাতে। মানতে লজ্জা পান মুখ্যমন্ত্রী। সাহস থাকলে মানস ভুঁইয়াকে গ্রেফতার করে দেখান! কমিশনকে শুনিয়েই আমি কথাটা বলছি!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, নারায়ণগড় ও সবং দখলে মরিয়া তৃণমূল সন্ত্রাস ছড়াতে চাইছে। অধীরের বক্তব্য, ‘‘তফসিলি মহিলাকে গণধর্ষণের গণ-প্রতিরোধে কেউ মারা গেল। আর মানস ভুঁইয়া-সহ কংগ্রেস খুনি হয়ে গেল! বাংলার মানুষকে এই তত্ত্ব গেলানো যাবে না।’’ এরই সঙ্গে অধীরের হুমকি, ‘‘মানস ভুঁইয়াকে গ্রেফতার হলে সারা বাংলায় আগুন জ্বলবে।’’ রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল গুপ্ত গোটা বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী নিহতকে নিরীহ বলে দাবি করলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের বিবরণ কিন্তু খুব নিরীহ ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করছে না। পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার লাগোয়া গ্রাম দুবরাজপুর। পাশেই মিঠাপুকুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন জয়দেব। দু’টি গ্রামেই সিপিএম-কংগ্রেস সমর্থক বেশি। জোটের হাওয়ায় তাঁরা কিছুটা জোরও ফিরে পেয়েছেন। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, জয়দেবের দলবল ক’দিন ধরেই রাতে দুবরাজপুরে এসে তৃণমূলকে ভোট দিতে হবে বলে শাসাচ্ছিল। শুক্রবারও রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনটি মোটরবাইকে ৯ জন গ্রামে ঢোকে। নেতৃত্বে ছিলেন জয়দেব। স্থানীয় মন্দিরের সামনে এসে তাঁরা হুঙ্কার দেন, সিপিএম-কংগ্রেসের যারা আছিস, সাহস থাকে তো বেরিয়ে আয়। গ্রামের কিছু মহিলা এ দিন জানান, ওই কথা শুনে বেশ কয়েকটি বাড়ির ছেলেরা বাইরে বেরোয়। শুরু হয় অশান্তি। লোহার রড, লাঠি নিয়ে দু’পক্ষের মারামারিতে লুটিয়ে পড়েন জয়দেব। পুলিশ পৌঁছতে পৌঁছতে মৃত্যু হয় তাঁর। সংঘর্ষে জখম হন সিপিএম সমর্থক বাপন করণও। গ্রামের বাসিন্দা নিয়তি করণের কথায়, ‘‘তৃণমূলের লোকজন লোহার রড, লাঠি নিয়ে এসেছিল। বাড়ির ছেলেদের ডাকছিল। ওরা বেরোতেই অশান্তি বাধে।’’

সবংয়ের তৃণমূল প্রার্থী নির্মল ঘোষ অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘জয়দেব দলীয় বৈঠক সেরে বাড়ি ফিরছিল। তখনই মানস ভুঁইয়ার নেতৃত্বে ওদের লোকজন জয়দেবকে খুন করেছে।’’ মানসবাবুর পাল্টা চ্যালেঞ্জ, ওই রাতে তাঁর গতিবিধি ও কল রেকর্ড পরীক্ষা করা হোক। হিম্মত থাকলে তাঁকে গ্রেফতার করে দেখাক! আর মানসবাবুর স্ত্রী গীতা ভুঁইয়া মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘ক’দিন আগে শ্লীলতাহানির মামলা, এ বার খুনের আসামি! এ ভাবে আমার স্বামীর মাথা কি আপনি নত করাতে পারবেন?’’

আরও পড়ুন:
দায় সেরে ভোটে ব্যস্ত সবাই, হাসে হাতকাটা ছেলে

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Joydeb Jana Sabang
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy