চাপের মুখে আক্রমণকেই আত্মরক্ষার উপায় বানিয়ে নিলেন সুনীল গুপ্ত। এ রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার তিনি। ভোটের মরসুমে তাঁর নামে প্রচুর অভিযোগ জড়ো হচ্ছিল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে। অপসারণের দাবিও উঠছিল জোরদার। এমতাবস্থায় সুনীলবাবু নিজেই কমিশনকে বলেছেন, ‘‘আমার প্রতি যদি এতই অনাস্থা, আমাকে সরিয়ে দিন।’’
এ বারের ভোটে রাজ্য প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল ঘটিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রথমে এক লপ্তে ৩৭ জন অফিসারকে সরায় তারা। তার পরে খাঁড়া নামে ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার ভারতী ঘোষ, কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের উপরে। বৃহস্পতিবার রাতে বীরভূমের এসপি মুকেশ কুমার এবং তিন ওসি-কে সরানো হয়। রাজ্য প্রশাসনের অন্দরে গুঞ্জন ছিল যে, তালিকায় এ বার নাম উঠতে চলেছে মুখ্য নির্বাচনী অফিসারেরও (সিইও)।
বৃহস্পতিবার কমিশনের ফুল বেঞ্চ শহরে আসে। প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলই তখন সুনীলবাবুর নামে জৈদীর কাছে অভিযোগ করে। সুনীলবাবুকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জোরালো হতে থাকে। যার প্রেক্ষিতে কমিশনের তরফে মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাঁর বিরুদ্ধে কেন এত অভিযোগ? সূত্রের খবর, তিন কমিশনার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যখন সুনীলের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাজাতে থাকেন, তখন হঠাৎ খেপে যান সুনীলবাবু। বলেন, ‘‘যদি আমার প্রতি এতই অনাস্থা, আমাকে সরিয়ে দিন। আমার কিচ্ছু যাবে আসবে না।’’ এমন চ্যালে়ঞ্জের সামনে হতচকিত হয়ে যায় ফুল বেঞ্চ। জৈদী পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে বলেন, ‘‘সুনীল আবেগপ্রবণ হয়ে যেও না। আমরা সকলেই নির্বাচনটা সুষ্ঠু ভাবে করাতে চাই।’’ তাতেও দমেননি সুনীল। তিনি জৈদীকে বলেন, ‘‘আমি মোটেই আবেগপ্রবণ হচ্ছি না স্যার। কিন্তু কমিশনের প্রতিটি নির্দেশ পালনের পরও যে ভাবে আমাকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে, তা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমায় বদলে দিন। সেটাই সবচেয়ে বড় খবর হবে।’’
এর পরে তিন কমিশনারই কিছুটা রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েন। তার প্রতিফলন দেখা যায় ফুল বেঞ্চের সাংবাদিক বৈঠকেও। সেখানে সিইও’কে সরানো হচ্ছে কি না জানতে চাইলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়ে দেন, এমন কিছুই হচ্ছে না। সিইও তাঁর দায়িত্ব যথাযথ পালন করছেন। এ নিয়ে শুক্রবার সুনীলবাবুর বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘কমিশনের অভ্যন্তরীণ কথাবার্তা নিয়ে বাইরে বলব না। তবে আমি দিনরাত পরিশ্রম করে অবাধ ভোটের চেষ্টা করছি।’’ জৈদীও আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট কোনও অফিসার নিয়ে কিছু বলা ঠিক নয়। সমস্ত অফিসারদের উপরই কমিশনের নজরদারি রয়েছে।’’
রাজ্য প্রশাসন সূত্রে অভিযোগ, ভোট নিয়ে যাবতীয় অভিযোগের দায় নির্বাচন সদন প্রথম থেকেই সিইও দফতরের উপর চাপাতে চেয়েছে। অথচ কমিশনকে যে সব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে তারা কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। এ নিয়ে সিইও অফিসের সঙ্গে দিল্লির ঠান্ডা লড়াই চলছিল। নির্বাচন সদন যদিও এ ব্যাপারে একমত নয়। তাদের এক কর্তার কথায়, ‘‘কমিশনের প্রতিটি সিদ্ধান্তের শরিক সিইও এবং তাঁর দফতর। ফলে মতবিরোধের পরিস্থিতি নেই।’’ কিন্তু রাজ্য কমিশনের এক কর্তার দাবি, ‘‘ভোট প্রস্তুতির খুঁটিনাটি জানাতে ১৪ বার দিল্লি গিয়েছি। কিন্তু কমিশন বুঝতেই চায়নি এ রাজ্যের অসুখ কোথায়? এখন নিজেদের খামতি ঢাকতে অফিসারদের উপর কোপ পড়ছে।’’ এই পটভূমিতেই সুনীলবাবু পাল্টা তোপ দেগেছেন। বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, মহম্মদ সেলিম, অনুব্রত মণ্ডল, রেজ্জাক মোল্লার মতো নেতাদের বক্তব্যের সিডি কমিশনে পড়ে রয়েছে। কমিশন রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না?’’ তখন জৈদী তাঁকে জানান, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শোকজ করেই কলকাতা এসেছেন। অনুব্রতর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy