Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

দলে তাঁর অনেক শত্রু, জানেন ‘মিঃ ক্লিন’

তিনি অকপট। পাঁচ লক্ষ টাকা যে তাঁর কাছে ‘অনে-এ-এ-ক’, তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে তাঁর কোনও ভনিতা নেই। সঙ্গে বক্সারের পাঞ্চ, ‘‘ওরা জানত, চেনা মিডলম্যান-ট্যান ধরেও আমাকে দিয়ে টাকা নেওয়ানো যাবে না। তাই আর কষ্ট করে আমার কাছে আসেনি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৬ ০১:২১
Share: Save:

তিনি অকপট। পাঁচ লক্ষ টাকা যে তাঁর কাছে ‘অনে-এ-এ-ক’, তা নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে তাঁর কোনও ভনিতা নেই। সঙ্গে বক্সারের পাঞ্চ, ‘‘ওরা জানত, চেনা মিডলম্যান-ট্যান ধরেও আমাকে দিয়ে টাকা নেওয়ানো যাবে না। তাই আর কষ্ট করে আমার কাছে আসেনি।’’ নারদ-কাণ্ড পরবর্তী তৃণমূলে রথী-মহারথীরা যখন গড়াগড়ি, তখন তিনি দলের কতিপয় ‘মিস্টার ক্লিন’দের তালিকায়।

তার পরেও কিন্তু আফশোস কিছুতেই যাচ্ছে না শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের। ‘‘অসম্ভব বড় একটা চক্রান্তে সবাই আটকে গেল। এটা বাঞ্ছনীয় ছিল না। ওরা দুঃখ করছিল…,’’ বলেই থমকালেন। মুখের রেখা বদলাল। ‘‘মুখের উপরে সোজাসাপ্টা কথা বলি বলে দলের মধ্যেই আমার শত্রুর অভাব নেই, তার উপরে ভোটের আগে আমাকে দিয়ে কোনও বিতর্কিত মন্তব্য করাবেন না। গাছ নিয়ে কথা বলুন, বক্সিং নিয়ে-লেখালেখি নিয়ে বলুন, ছবি আঁকা নিয়ে বলুন। এগুলো আমার প্রিয় জিনিস।’’

বলেই বাহাত্তরে পা দেওয়া প্রবীণ নেতা নিজের ফ্ল্যাটের ড্রয়িং রুমের সোফায় এক মনে আদরের ল্যাব্রাডর পপিন্সের মাথায় হাত বোলাতে লাগলেন। কোলের মধ্যে ততক্ষণে নাতনি সৃজা ঝাঁপাঝাঁপি শুরু করেছে। একের পর এক দলীয় কর্মীদের ফোন আসছে। বিধানসভা ভোটের মোক্ষম-ক্ষণ বলে কথা। রাসবিহারী কেন্দ্রের পোড় খাওয়া প্রার্থী যতই কথা ঘুরিয়ে মিছিলে গিয়ে প্রেমে পড়া, নতুন বই প্রকাশ, নিজের হাতে করা চল্লিশ বছরের পুরনো বনসাই করবী গাছের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন, ফাঁক গলে কথার মধ্যে রাজনীতি ঢুকতে বাধ্য।

পাঁচ বছরের রাজ্যপাটেই দলের বিরুদ্ধে মুঠো-মুঠো অভিযোগ। এই সময়ে স্বাভাবিক নিয়ম বলে, দলে যাঁরা অভিজ্ঞ-প্রবীণ তাঁরা দলের প্রধানকে পরামর্শ দেবেন, পন্থা বাতলাবেন। শোভনদেবের ক্ষেত্রে তা আরও প্রত্যাশিত কারণ, তিনি তৃণমূলের সেই হাতেগোনা নেতাদের এক জন, যাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘তুই’ সম্বোধন করেন এবং একেবারে প্রথম থেকে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। ‘‘যখন যা মনে হয়, মমতাকে বলি তো। কখনও শোনে, কখনও বলে, ‘আমি জানি।’ তখন থেমে যাই।’’ একটু যেন অস্বস্তিতে নেতা।

কিন্তু লোকে যে বলে, কেউ যেচে পরামর্শ দিতে এলে বা ভুল ধরিয়ে দিতে চাইলে নেত্রী বরং বিরক্ত হন? এ বার নেতা পৌরাণিক উপাখ্যানে চলে যান। ‘‘বলুন দেখি, দেবতারা ভজনায় তুষ্ট হতেন বলেই তো নানা বর দিয়ে বসতেন। দেবতাই যদি স্তাবকতার কাছে মাথা নোয়ান, মানুষ তো কোন ছাড়!’’

তা হলে কি সত্যিই তৃণমূলে মমতার মুখের উপরে সত্যি কথা বলার জোর নেই কারও? উত্তর, ‘‘দলে একটা কোর কমিটি আছে। তবে তারা সুয়ো মোটো কিছু বলে না। ‘দে টক ওনলি হোয়েনএভার দে আর আস্ক়ড টু ডু সো।’ এর বেশি ইলেকশনের আগে কিচ্ছু বলব না।’’

তা বলে অনুব্রত মণ্ডলেরা যদি ভোটের আগে বিস্ফোরক মন্তব্যে দলের বিপত্তি বাড়ান, তা হলেও কেউ কিছু বলবে না? এ বার একগাল হাসেন শোভনদেব। ‘‘কেষ্টর কথা তো আমাদের দলের ছেলেরা খুব এনজয় করে। সব কেষ্ট-মুগ্ধ! কাগজে এই সব বলাটলার পরে আমার ছেলেরা খুব ধরল কেষ্টকে এনে সভা করাতে হবে। ও নাকি সব গরম করে দেবে। আমার অবশ্য কাউকে আনার দরকার নেই। কিন্তু ছেলেরা ওর কথায় উৎসাহ পাচ্ছে। মমতাও বলেছে, ওর মাথায় অক্সিজেন কম যায়। আর কী?’’ তাঁর মতে, শহুরে ভোটারেরাই নারদ-কাণ্ড বা অনুব্রত কী বলল, এ সব নিয়ে আলোচনা করেন। গ্রামে এ সবে কিছু যায়-আসে না। তিনি বলেন, ‘‘তাঁরা শুধু দেখেন, সরকার তাঁদের জন্য কী করেছে। কিন্তু এ বার জেতার পরে মমতার চাপ আছে।’’

কী রকম চাপ? ‘আইডল’ মহম্মদ আলির ছবির সামনে বসা নেতার চোয়াল শক্ত হয়। ‘‘চরম অত্যাচার চালিয়েছিল সিপিএম। পরে তৃণমূল ক্ষমতায় এলে, ছেলেরা চাইল এক মাসে ওদের ঠান্ডা করতে। আদর্শ জননেত্রীর মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে মমতা সেটা আটকেছিল। সকলকে বলেছিল শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজাতে। নইলে লাশ পড়ে যেত। এ বার কিন্তু মমতার উপরে ব্যাপক চাপ। ছেলেরা বলে দিয়েছে, ‘আর রবীন্দ্রসঙ্গীতের কথা বলবেন না।’’ এক সময়ের তুখোড় বক্সার উল্টো দিক থেকে আসতে চলা ধাক্কাটা আগাম আঁচ করে ফেলেছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy