বাগডোগরা বিমানবন্দরে নেমে বাইরে বেরিয়েছিলেন গাড়িতে ওঠার জন্য। বাইরের ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের দিকে নজর পড়তেই চক্ষু যাকে বলে চড়কগাছ! একই গাড়িতে লাল ঝান্ডার পাশাপাশি অবস্থান করছে তেরঙাও। এগিয়ে গিয়ে জানতেও চেয়েছিলেন এক জনের কাছে— কী ব্যাপার?
উত্তর পেয়ে অবশ্য তিনি সন্তুষ্ট। ট্যাক্সিচালকদের জবাব ছিল, ‘‘আমরা তৃণমূলের হাত থেকে বাঁচতে চাই। তার জন্য পরিবর্তন দরকার। আর সেটার জন্য যা যা করার দরকার, আমরা করছি।’’ ঠিক এই যুক্তিই দিল্লির এ কে জি ভবনে গিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সেই রুদ্ধশ্বাস বৈঠকে তুলেছিলেন বঙ্গ ব্রিগেডের নেতারা। সমর্থন ছিল তাঁর নিজেরও। কিন্তু দলীয় বৈঠকের আলোচনায় বলা আর রাস্তায়
নেমে নিজের চোখে দেখার মধ্যে ফারাক তো আছে! চক্ষু-কর্ণের সেই বিবাদ ভঞ্জন করে এ বার স্বস্তিতে সীতারাম ইয়েচুরি। ভোট-পর্বের মাঝখানে তিনি বুঝে নিয়েছেন, বাংলায় জোট এ বার একেবারে মাঠে-ময়দানের ফসল।
ইয়েচুরির কথায়, ‘‘আমি সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক। আমার ধারণা ছিল না, এখানে এ ভাবে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের ঝান্ডা একসঙ্গে নিয়ে দু’পক্ষের কর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়বেন! মাটি থেকে যে জল বেরিয়ে আসছে, তাকে ঠিক খাতে বইয়ে দেওয়াই এখন শুধু আমাদের কাজ।’’ এবং এই কাজ করার জন্যই এখন নেপথ্যে সক্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছেন বাংলা থেকে রাজ্যসভার সিপিএম সাংসদ। ভোটের প্রচারে সনিয়া ও রাহুল গাঁধী রাজ্যে আসছেন। বাংলার জনতার সামনে কী কী বললে বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ জোটের সুবিধা হবে, তার জন্য সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের মতামত নিচ্ছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। ইয়েচুরিও সুকৌশলে রসদ সরবরাহ করে চলেছেন!
সিপিএম সূত্রের খবর, সনিয়া মালদহ ও বীরভূমে প্রথম দফার প্রচারে আসার আগে এআইসিসি-র এক শীর্ষ নেতা যোগাযোগ করেছিলেন ইয়েচুরির সঙ্গে। কংগ্রেস নেতৃত্বকে ইয়েচুরি জানিয়ে দেন, বাংলায় গিয়ে তৃণমূল জমানার দুর্নীতির কথা তো অবশ্যই বলতে হবে। সেই সঙ্গেই টেনে আনতে হবে দিদিভাই ও মোদীভাইয়ের ম্যাচ গড়াপেটার প্রসঙ্গ। কথা রেখেছেন সনিয়া। সাম্প্রতিক কালের মধ্যে কংগ্রেস সভানেত্রীর মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এমন সরাসরি আক্রমণ শোনেনি রাজনৈতিক শিবির। কলকাতায় এসে আলিমুদ্দিনে দলের রাজ্য নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় সনিয়া-রাহুলের এ যাবৎ পারফরম্যান্সে স্বস্তিই প্রকাশ করেছেন ইয়েচুরি। বলেছেন, নিখুঁত যোগাযোগ রেখে কংগ্রেস এবং সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বকে জোটের সুর সে ভাবেই ধরে রাখতে হবে, যাতে নিচু তলাতেও তার পাল্টা প্রভাব পড়ে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, পর্দার আড়ালে যেখানে সিপিএমের শীর্ষ নেতা এতখানি ভূমিকা নিচ্ছেন, তা হলে প্রকাশ্যে সনিয়া বা রাহুলের মঞ্চে তাঁকে দেখা যাচ্ছে না কেন? এমনকী, সনিয়া নিজের বক্তৃতায় জোটের প্রসঙ্গও আনেননি। প্রকাশ্যে ইয়েচুরি বলছেন, ‘‘সনিয়া গাঁধী সম্মাননীয় রাজনীতিক। তিনি কংগ্রেসের হয়ে রাজনীতি করছেন। আমি সিপিএমের হয়ে রাজনীতি করছি।’’ তিনি বিশেষ না ভাঙলেও আসলে এটাই এখন কৌশল! তৃণমূলকে রুখতে বাংলায় বৃহত্তর জোটের প্রয়াসে তিনি সায় দিয়েছেন। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে সিপিএমের অন্দরে এখনও এমন একটি বড় অংশ আছে, যারা কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিজেদের দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের গা ঘষাঘষি নিয়ে যখন তখন গোল বাধাতে পারেন! তাই সতর্ক থাকছেন ইয়েচুরি। সনিয়া-রাহুলদের সভায় জেলা স্তরের নেতারা হাজির থেকে জোটের বার্তা দিচ্ছেন। আর তিনি নিজে নেপথ্যে তৎপরতা চালাচ্ছেন জোটের সুর বেঁধে রাখার জন্য। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতাও বলছেন, ‘‘সনিয়াজি বা রাহুলজির বৈঠকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ থাকছেন কি না, সেটা বড় কথা নয়। আসল কথা হল, জোট এখন মানুষের মনে গেঁথে গিয়েছে!’’
ঘটনাচক্রে ইয়েচুরি যখন উত্তরবঙ্গ সেরে দক্ষিণে এসে কলকাতার আশেপাশে প্রচার চালাচ্ছেন, নদিয়া বা বর্ধমানের মতো জেলায় তখন দেখা যাচ্ছে সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য বৃন্দা কারাটকে। খোদ ইয়েচুরি ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অন্য কেউ জোট নিয়ে কখন কী বলে ফেলেন, তা নিয়ে ঈষৎ উদ্বেগেই আছে আলিমুদ্দিন। তারা বরং অনেক বেশি ভরসা রাখছে সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়দের উপরে। রাজ্য সম্পাদক হিসাবে এ বার গোটা রাজ্যে সিপিএমের মধ্যে সব চেয়ে বেশি সভা করছেন সূর্যবাবুই। পরবর্তী নাম সেলিম এবং তার পরে ঋতব্রত। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘মাসখানেকের মধ্যে রাজ্যের পরিস্থিতি অনেকটা বদলে গিয়েছে। এখন আক্রমণাত্মক বক্তৃতাই বিরোধীদের কাছ থেকে শুনতে চাইছেন মানুষ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy