Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
বেহালা

বিধি উড়িয়ে শাসকের ‘শাসন’

সকাল সাড়ে ৮টা। টালিগঞ্জ ছাড়িয়ে মহাত্মা গাঁধী রোডে ঢুকে দেখা গেল ১০০ মিটার তফাতে তৃণমূলের ক্যাম্প। প্রতিটিতেই গিজগিজে ভিড়।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০০:৫৯
Share: Save:

সকাল সাড়ে ৮টা। টালিগঞ্জ ছাড়িয়ে মহাত্মা গাঁধী রোডে ঢুকে দেখা গেল ১০০ মিটার তফাতে তৃণমূলের ক্যাম্প। প্রতিটিতেই গিজগিজে ভিড়।

ওই রাস্তায় ৬১ পল্লি, কেওড়াপুকুর সিএনআই বালিকা বিদ্যালয়ে বুথের কাছেও এক চিত্র। এক দল যুবক ঘোরাঘুরি করছে। যেন উৎসব।

বেলা ১২টায় বুড়োশিবতলায় এস এন রায় রোডের পাশে বসেছিলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। বিকেলে জেমস লং সরণিতে শাসক দলের ক্যাম্পে কর্মীদের সঙ্গে আড্ডায় মশগুল দুই পুলিশও।

অথচ ভোটের জন্য পুরো জেলায় জারি ছিল ১৪৪ ধারা। শনিবার বেহালার পূর্ব ও পশ্চিম কেন্দ্রের অধিকাংশ এলাকায় কার্যত সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভোট-উৎসবে মাতলেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। অথচ সেখানে অনবরত ঘুরেছে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর গাড়ি। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘জমায়েত হয়েছে তো কী! গোলমাল তো হয়নি।’’

সকাল থেকেই খবর রটে, কলকাতা পুরসভার মধ্যে ঢুকে পড়া জোকার তিনটি ওয়ার্ডে ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে। সেই অভিযোগ করেন জোটপ্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্রও। বেহালা পূর্বের রামচন্দ্রপুর, কালীতলা, সজনেবেড়িয়ায় লম্বা লাইন। সেখানে ছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর রঘুনাথ পাত্র। বিরোধী প্রার্থীর অভিযোগ নিয়ে বললেন, ‘‘হুমকি দেব কেন? সবাই তো আমাদের লোক।’’

কাউন্সিলরের কথার সত্যতা যাচাই করা গেল এলাকারই রামজীবনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই স্কুলের বুথে ঢোকার ১০০ মিটারের মধ্যেই তৃণমূলের পোস্টার, ব্যানারে ছয়লাপ। রয়েছে বহু ক্যাম্পও। মোট ভোটার ১১৯০। বেলা ১টা নাগাদ ভোট পড়েছে সাতশোরও বেশি। বুথে ঢুকতেই কয়েক জন সরে গেলেন এ দিক-ও দিক। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলেও যেন ভ্রুক্ষেপ নেই। জনা কয়েক মহিলাকে এক জন বললেন, ‘‘বৌদি, তিন নম্বরে ভোট দেবেন।’’ বাইরেই লেখা তিন নম্বরে তৃণমূল প্রার্থী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নাম।’’

জানা গেল, কিছু আগে আইপিএস অফিসার এন ভুটিয়ার নেতৃত্বে পুলিশ এসেছিল। তাতেই সব ফাঁকা। প্রশ্ন করতেই ওই অফিসার বললেন, ‘‘সব ঠিক হ্যায়।’’ বুথে তৃণমূল ছাড়া অন্য দলের এজেন্ট নেই। কাউন্সিলর রঘুনাথের কথায়, ‘‘১৯টি বুথের ৫টিতে এজেন্ট দিতে পেরেছে বিরোধীরা।’’ যা নিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের টিপ্পনি, ‘‘বিরোধীরা এজেন্ট না পেলে বলতে পারতেন, আমি ছেলে দিতাম।’’

ভোটযন্ত্র বিকল হয়ে সমস্যা হয় দুই কেন্দ্রের কিছু বুথে। নাকাল ভোটার থেকে প্রিসাইডিং অফিসার, সকলেই। এমনই একটি বুথ ছিল সোদপুর গার্লস হাইস্কুলে। স্কুলশিক্ষিকা পত্রলেখার এই প্রথম নির্বাচনে ডিউটি, প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে। সকালে বুথে ঢোকার সময়ে স্বাভাবিক ছিল গলার স্বর। দুপুরে গলা ভেঙে গিয়েছে। ভোট শুরুর আগে ‘মক পোলিং’-এই বিগড়ে যায় ইভিএম। পত্রলেখার কথায়, ‘‘ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সেক্টর অফিসারকে ফোনে জানাই।’’ পরে যন্ত্র ঠিক করে দেওয়া হয়।

উৎসবের মেজাজ ছিল বেহালা পশ্চিমেও। কিছু এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারি সমস্যায় ফেলেছে তৃণমূল সমর্থকদের। শুধু সরশুনা থেকেই গ্রেফতার হয় ১০ জন। সকাল থেকেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোট সমর্থকদের শাসানি ও হুমকির অভিযোগ করেন জোট প্রার্থী সিপিএমের কৌস্তুভ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূলের গুণ্ডামি ব্যর্থ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।’’ তৃণমূল প্রার্থী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘জোটপ্রার্থী সকাল থেকে কমিশনে ১২০টি অভিযোগ করে বাজার গরম করতে চেয়েছিলেন। আসলে ওরা কমিশন, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশের উপর ভর করে ভোট করতে চেয়েছিল। আমরা মানুষের ভরসায় ভোট করি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy