Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

প্রতিরোধের প্রতিশোধে জোড়া খুনের অভিযোগ

ভোটের আগে থেকেই জমিটা তেতে ছিল। ইভিএম বাক্সবন্দি হয়ে যেতেই দুই সিপিএম কর্মীর রক্তে ভিজল সেই জমি। জমি সেই বর্ধমানের, যেখানে গত তিনটি ভোটে ক্রমান্বয়ে জমি হারানো সিপিএম এ বার জোটের বলে বলীয়ান হয়ে ভোটের আগে থেকেই তৃণমূলকে টক্কর দিচ্ছে।

নিহত সিপিএম বুথ এজেন্ট ফজল হকের স্ত্রী। ছবি: উদিত সিংহ।

নিহত সিপিএম বুথ এজেন্ট ফজল হকের স্ত্রী। ছবি: উদিত সিংহ।

সৌমেন দত্ত
খণ্ডঘোষ শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২৮
Share: Save:

ভোটের আগে থেকেই জমিটা তেতে ছিল। ইভিএম বাক্সবন্দি হয়ে যেতেই দুই সিপিএম কর্মীর রক্তে ভিজল সেই জমি।

জমি সেই বর্ধমানের, যেখানে গত তিনটি ভোটে ক্রমান্বয়ে জমি হারানো সিপিএম এ বার জোটের বলে বলীয়ান হয়ে ভোটের আগে থেকেই তৃণমূলকে টক্কর দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার ভোটের দিনও তৃণমূলের ‘ভোট-লুঠের চক্রান্ত’ ব্যর্থ করতে নানা জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে সিপিএম। খণ্ডঘোষের লোধনা গ্রামের সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরাও রুখে দিয়েছিলেন ভোট লুঠ। সিপিএমের অভিযোগ, তারই বদলায় দলের এক বুথ এজেন্ট শেখ ফজল হক (৫৯) ও এক কর্মী দুখীরাম ডালকে (৬২) খুন করেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। ভোট শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে বাড়ি ফেরার সময় ওই দু’জনকে লাঠি-রড দিয়ে পেটানোর পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাত-পায়ের শিরা কেটে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।

এ বার ভোটে শাসকদলের চেনা স্লোগান: ‘ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল, আবার ফিরছে তৃণমূল’। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, ভোট যত গড়াচ্ছে, যতই সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে উঠছে, ততই অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে তৃণমূল। হারের সামান্য আশঙ্কাতেও তাই রক্ত ঝরছে। তৃতীয় দফায়, বর্ধমান গ্রামীণ, নদিয়া-মুর্শিদাবাদ এবং কলকাতার একাংশে প্রতিরোধের তীব্রতা বেড়েছে। হিংসাও তাই বেড়েছে। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অমল হালদারের অভিযোগ, ‘‘আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়েও বুথ এজেন্ট হয়েছিলেন ফজল হক। বুথ লুঠ করতে না পারার হতাশা থেকেই তাঁকে ও দুখীরামকে খুন করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা!’’

ভোটের দিন সকালেই মুর্শিদাবাদের ডোমকলে খুন হন সিপিএমের পোলিং এজেন্ট তহিদুল ইসলাম। তার আগে মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনার শাসনে সক্রিয় সিপিএম সমর্থক নুর ইসলাম মিস্ত্রিকে খুন করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিধানসভা ভোটের পরে এলাকা ছেড়ে চলে গেলেও সম্প্রতি নিজের কীর্তিপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরে জোটের সমর্থনে মিছিল-মিটিংয়ে সামিল হচ্ছিলেন নুর। সেই ‘আক্রোশেই’ তাঁকে খুন করা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র শুক্রবার বলেন, ‘‘তিন দিনে আমাদের চার জন কর্মী খুন হলেন। এতেই বোঝা যাচ্ছে, তৃণমূল হারের ভয়ে কতটা উদ্বিগ্ন!’’ তাঁর সংযোজন, ভয় দেখিয়ে, খুন করে তৃণমূল মানুষকে আটকাতে পারবে না। মানুষের মৃত্যুর খবর পেয়ে, আক্রান্ত হয়ে হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধেও যে মানুষ বুথে গিয়ে ভোট দিচ্ছেন, তাঁরাই গণতন্ত্রের শক্তি। দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেওয়ার কথা বলছেন। তার পরিণতিতেই এমন ঘটনা।’’ বিজেপি-র অভিযোগ, তৃতীয় দফায় এসে নির্বাচন খুনের নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। ১০ বছর পরে ভোটের দিন এ রাজ্যে এক জনের প্রাণহানি হয়েছে। দলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি ছাড়া তৃণমূলের আর কাউকে দেখারই দরকার নেই। তা হলে এই হিংসার দায়ও তাঁকে নিতে হবে।’’

কিন্তু, কেন লোধনার জোড়া খুন?

এই গ্রামে সিপিএমের অনেক পাকা ভোটার রয়েছেন। অভিযোগ, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ফজল শেখ, দুখীরাম-সহ প্রায় ২০ জনের চাষ ও গভীর নলকূপের জল নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। খানিকটা বাধ্য হয়েই তৃণমূলে যোগ দেন ফজল-সহ গ্রামের কয়েক জন। কয়েক মাস আগেই পুরনো দলে ফেরেন তাঁরা। নিহত ফজলের স্ত্রী হেনা বিবি বলেন, “আমার স্বামী সিপিএমের বুথ এজেন্ট হবেন জানার পর থেকেই বাড়ির সামনে বোমাবাজি করছিল তৃণমূল। হুমকি দিচ্ছিল, ‘এজেন্ট হলে আর বাড়ি ফিরতে পারবি না’। সেটাই সত্যি হল!’’ আর এক নিহত দুখীরামের ছেলে বিজয়ের কথায়, ‘‘দাদু সিপিএম করার জন্য খুন হয়েছিলেন। এ বার বাবাও গেলেন।’’ স্থানীয় তৃণমূল নেতা সামশের আলম ওরফে শান্তি-সহ ৩০ জনের নামে খুনের অভিযোগ হয়েছে।

ওই এলাকার ভোটের দায়িত্বে থাকা জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য অপার্থিব ইসলামের অবশ্য দাবি, “ওই এলাকায় তৃণমূলের সংগঠন দুর্বল। সিপিএমের লোকেরা মদ্যপ অবস্থায় আমাদের উপর আক্রমণ করতে এসেছিল। সেই সময় নিজেদের লাঠির ঘায়ে ওই দু’জনের প্রাণ গিয়েছে।” পুলিশ এখনও অবধি কাউকে ধরতে পারেনি। অভিযুক্তদের খোঁজা হচ্ছে বলে জানান বর্ধমানের পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা।

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly Election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy