Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী, ফেসবুকে আমাকে ব্লক করলেন কেন ?

কথা ছিল গত ১৪ এপ্রিল ফেসবুকে জন সাধারণের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। কিন্তু সত্যই কি প্রশ্ন করে মিলল জবাব? নিজের অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন অর্থনীতির গবেষক পুরন্দর ভাটমাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ১৪ এপ্রিল ওঁর ফেসবুক পেজে মানুষের প্রশ্নের উত্তর দেবেন বলেছিলেন। ফেসবুকে চতুর্দিকে তার প্রচারও হয়েছিল। একজন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হিসেবে আমারও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কিছু প্রশ্ন ছিল, তাই আমি ঠিক ঘড়ি ধরে সন্ধে ৮.৩০-এ ওঁর পেজে পৌঁছই।

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৬ ১১:৫২
Share: Save:

মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ১৪ এপ্রিল ওঁর ফেসবুক পেজে মানুষের প্রশ্নের উত্তর দেবেন বলেছিলেন। ফেসবুকে চতুর্দিকে তার প্রচারও হয়েছিল। একজন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ হিসেবে আমারও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কিছু প্রশ্ন ছিল, তাই আমি ঠিক ঘড়ি ধরে সন্ধে ৮.৩০-এ ওঁর পেজে পৌঁছই। সেখানে দেখি উনি একটি পোস্ট করেছেন যে তিনি হাজির, যার যা প্রশ্ন আছে করতে পারে। অভয়বাণী দেখে আশ্বস্ত হয়ে আমার গুটিকয়েক প্রশ্ন নিয়ে একটা পোস্ট করি ওঁর পোস্টের তলায় কমেন্টে। প্রশ্নগুলো করার আগে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়েছিলাম অন্যেরা আমার প্রশ্নগুলো ইতিমধ্যে করেছে কিনা। দেখলাম সকলেই মুখ্যমন্ত্রীর শরীর-স্বাস্থ্য, কলকাতার আবহাওয়া, ভূমিকম্প, ভোটে কত বেশি আসন পাবেন বিরোধীদের থেকে এইসব নিয়ে প্রশ্ন ও কমেন্ট করছেন-- এবং মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সে সবের কিছু কিছু প্রশ্নের যত্ন সহকারে জবাব দিচ্ছেন। এতে আমার প্রশ্নের অন্তত কিছু উত্তর পাওয়ার আশা আরও বেড়ে যায়। মনে হয়, নাহ্ উনি যখন জনে জনে উত্তর দিচ্ছেন আমার প্রশ্নেরও কিছু উত্তর নিশ্চই দেবেন। প্রশ্নগুলি ছিল—

* নন্দীগ্রাম কাণ্ডে CBI অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের শাস্তি দিলেন না কেন?

* সিঙ্গুর চুক্তি প্রকাশ করলেন না কেন?

* আপনি গত চার বছরে কটা ছবি বিক্রি করেছেন?

* আপনি ও আপনার মন্ত্রীরা কোন scheme-এ টাকা রাখেন যে ৫ বছরে টাকা ৩ -৪ গুণ বেড়ে যায়? আমিও রাখতে চাই।

* পুরীর সোনার তরী হোটেলের মালিক কে?

* নারদ থেকে যদি অনুদান পান তার রসিদ কোথায়?

* ৫ বছরে কটা বড় কারখানা হয়েছে?

* ৬৮ লক্ষ চাকরি দিয়েছেন বলছেন, তাহলে Employment Bank এ এত নথিভুক্ত বেকার কেন?

* টেটের ফলাফল কবে বেরোবে?

* আপনার বিধায়ক ইকবাল আহমেদ ববি হাকিমকে বলেছেন যে হুগলির বিধায়করা সবাই টাকা লুঠছে! সেটা কাদের কথা বলেছেন? তাদের ফের এ বার কেন প্রার্থী করেছেন?

প্রশ্নগুলো দেখে কি আপনার মনে হচ্ছে এই প্রশ্নগুলো আপনারও আছে? যাঁদের মনে হচ্ছে না, তাঁদের জন্যে ছোট করে ব্যাখা করে দিচ্ছি কেন আমার মনে এই সব প্রশ্ন এসেছিল।

নন্দীগ্রামের পুলিশি অভিযান নিঃসন্দেহে গত সরকারের একটি কালো অধ্যায়। সেই সরকার গত হওয়া আর তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পেছনে ওই ঘটনার ভূমিকা যে বিশাল সেটা শাসক বা বিরোধী কেউই অস্বীকার করবেন না। মাননীয়া মমতা বন্দোপাধ্যায় নির্বাচনে জেতার আগে বার বার বলেছিলেন যে ওই ঘটনার সিবিআই তদন্তে যে যে দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের সকলের শাস্তি তিনি নিশ্চিত করবেন। তদন্ত শুরু হয়েছিল গত সরকারের আমলেই। তখন তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রীয় সরকারের শরিক ছিল। তার পর রাজ্যপাটও তাদের হাতে এসেছে। সে ক্ষেত্রে তদন্তে বামফ্রন্ট প্রভাব খাটাতে পারবে এ রকম মনে হওয়ার কোনও কারণ নেই। তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, সিবিআই তদন্ত করে যে সিদ্ধান্তে পৌঁছয় তা নিরপেক্ষ। সিবিআই সেই তদন্তে কয়েকজন পুলিশ অফিসারের কাজকর্মে ত্রুটি খুঁজে পায়। এরপর আশা করা যেতেই পারে যে মমতা বন্দোপাধ্যায় সেই দোষী পুলিশ অফিসারদের কিছু শাস্তি প্রদান করবেন তাঁরই দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী। কিন্তু এক জনেরও কোনও রকম শাস্তি হয়েছে বলে তো শুনিনি। সেই কারণেই জিজ্ঞেস করা।

আরও পড়ুন-পাঁচ বছরে এত বাড়ল সম্পত্তি! তাও মমতা চুপ কোন রহস্যে?

এরপর আসা যাক সিঙ্গুর চুক্তি প্রকাশের প্রসঙ্গে। এটিও মমতা বন্দোপাধ্যায়ের প্রাক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। বলেছিলেন, তিনি জিতলেই চুক্তি প্রকাশ করবেন এবং বামেদের সাথে টাটাদের গোপন বোঝাপড়া সম্পূর্ণ উন্মোচন করে দেবেন। বাম সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় বার বার বলেছিল যে এই চুক্তি তারা চাইলেও প্রকাশ করতে পারবে না কারণ আইনি বাধা আছে। কিন্তু মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে প্রয়োজনে তিনি আইন বদলে দেবেন। সেই চুক্তি আজও অপ্রকাশিত। তাই কৌতুহল হয় যে এমন কেন হল!

এরপর ছবি। মমতা বন্দোপাধ্যায় দেশের একজন অগ্রগণ্য চিত্রশিল্পী সেটা তাঁর ছবির দাম দেখলেই বোঝা যায়। এক কোটি, দু’কোটি টাকায় তাঁর ছবি কিনেছেন সারদার মালিক সুদীপ্ত সেন থেকে রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু এবং আরও অনেক ধনী ব্যক্তি। উনি নিজেই গর্ব করে বলেছিলেন যে ছবি বিক্রি করেই তিনি তাঁর দলের সমস্ত খরচ ওঠান। এ রকম দুর্ধর্ষ প্রতিভা অন্তত ভারতীয় রাজনীতিতে আর কেউ নেই। আমিও ওঁর ছবি এবং কবিতার বিশেষ অনুরাগী। মেসি বা বিরাট অনুরাগীরা যে রকম খোঁজ রাখেন যে কটা গোল করলেন মেসি অথবা কটা সেঞ্চুরি করলেন বিরাট কোহলি, সেরকমই আমিও চেয়েছিলাম খোঁজ নিতে গত চার বছরে মোট কটা ছবি উনি বিক্রি করেছেন। কাকতালীয়ভাবে চিট ফান্ড কেলেংকারি প্রকাশ হওয়ার পর ওঁর ছবি বিক্রির খবর আর কোথাও দেখিনি, তাই এই অনুসন্ধিত্সা।

(বাকিটা পড়তে ২ ক্লিক করুন)

এর পর তৃণমূলের নেতা নেত্রীদের অর্থস্ফীতি নিয়ে প্রশ্ন। রোজই কাগজে পড়ি যে তৃণমূলের নেতাদের ধন সম্পত্তি ৪-৫ গুণ, কারও কারও ক্ষেত্রে ৩০-৪০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বাঙালি নাকি ব্যবসায় কাঁচা- এই অপবাদ শুনে শুনে বিরক্তি ধরে গেছে। আমি মাননীয়া মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে এ কোন দুর্দান্ত investment scheme তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন যাতে এমন হওয়া সম্ভব। Wall Street-এর দুঁদে স্টক ব্রোকাররাও ভাবতে পারেন না এ রকম গতিতে সম্পত্তি কী ভাবে বাড়ানো যেতে পারে। সারা বিশ্বের মানুষ উপকৃত হবেন জানা গেলে।

এরপর পুরীর সোনার তরী হোটেল। এই বিলাসবহুল হোটেলের ওয়েবসাইটে কলকাতার অফিসের ঠিকানা দেওয়া রয়েছে - 30 B Harish Chatterjee Street Kalighat, Kolkata – 700026। এই ঠিকানা নাকি স্বয়ং মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বাড়ির? আমার বিশ্বাস হয় না যে এই হোটেল ব্যবসার সাথে তাঁর কোনও সম্পর্ক আছে। আমি মালিকের নামটা জানতে চেয়েছিলাম এই কারণে যাতে উনি সরাসরি নস্যাৎ করে দেন এই হোটেলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা। সেটা করলেই আমি পুলিশে একটা অভিযোগ ঠুকে দিতাম মুখ্যমন্ত্রীর বদনাম করার জন্য।

এ বার নারদের রশিদের প্রসঙ্গ। তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীরা অনুদান নিয়েছেন বলে তাঁদের উকিল হাই কোর্টে জানিয়েছেন। অনুদান নেওয়ায় কোনও দোষ নেই, সত্যিই তো ভোটের এত খরচ। কিন্তু তৃণমূলের মত এত সৎ একটি রাজনৈতিক দল যে অনুদান নিলে তার রশিদ দেবে, এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত। তাই এটা জিজ্ঞেস করেছিলাম।

শিল্পায়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে যারপরনাই চিন্তিত এই কথা রাজ্যবাসী জানেন। প্রতি বছর লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ এই রাজ্যে আসে Bengal Leads মারফত তা অর্থমন্ত্রী না বললেও আমরা জানতাম। এত টাকা বিনিয়োগ যখন আসছে নিশ্চিত কোথাও না কোথাও শিল্প তৈরি হচ্ছে তার ফলে। মিডিয়ার চক্রান্তে তা আমরা জানতে পারি না। সেই জন্যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই সোজা জানতে চাই। মমতা বন্দোপাধ্যায় দাবি করেছেন তিনি ৬৮ লক্ষ চাকরি সৃষ্টি করেছেন তাঁর আমলে। আমার প্রশ্ন ছিল যে সাড়ে ১৭ লক্ষ বেকার Employment Bank এ নথিভুক্ত তাদের কত জন এই ৬৮ লক্ষের মধ্যে পড়েন?

আরও দেখুন-পাঁচ বছরে ১০০ গুণ বাড়ল সম্পত্তি! আশ্চর্য প্রদীপ না সিন্ডিকেট?

এর পর টেট। গত পাঁচ বছরে টেট পরীক্ষা হয়েছে দু’বার। কিন্তু ফল বেরিয়েছে এক বার। দ্বিতীয় টেট পরীক্ষার ফল কবে প্রকাশিত হবে এই প্রশ্ন ২০-২২ লক্ষ পরীক্ষার্থীর প্রত্যেকের মনের মধ্যে রয়েছে। আমি চেয়েচিলাম মুখ্যমন্ত্রী ভোটের আগে এটা পরিষ্কার করে দিন যাতে ওই ২২ লক্ষ যুবক যুবতী এবং তাঁদের পরিবারের প্রত্যেকের ভোট তাঁর দল পায়।

এবার আসি শেষ প্রশ্নে। নারদের ভিডিওতে ববি হাকিমকে আমরা সকলেই দেখেছি তৃণমূলের বিধায়ক ইকবাল আহমেদের সঙ্গে বাক্যালাপ করছেন। আর সেটা গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। তাতে ইকবালকে বলতে শোনা গেছে যে হুগলির সব বিধায়ক এবার হারবে কারণ তাঁরা নাকি প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করছেন বিভিন্ন উপায়ে। হাকিম সাহেবকেও সেই কথায় সম্মতি জানাতে দেখা যায়। আমার প্রশ্ন ছিল সততার প্রতীকের কাছে যে এই বিধায়ক কারা এবং তাদের ক’জন এবারও প্রার্থী হয়েছেন।

এই সব প্রশ্ন করার পর দেখলাম বহু মানুষ আমার কমেন্টে লাইক দিয়ে এবং তাতে রিপ্লাই দিয়ে আমায় উত্সাহ দিচ্ছেন। বুঝতে পারলাম তাঁদের অনেকের মনেই এই একই সব প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছিল। কেউ কেউ বললেন যে এ সব অস্বস্তিকর প্রশ্নের উত্তর মাননীয়া দেবেন না। কেউ কেউ বললেন এ সব "মাওবাদী প্রশ্ন" বলে দাগিয়ে দিতে পারেন। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করলেন যে আমি সিপিএম-এর দালাল। তবুও আমি হল ছাড়িনি। ক্রমশ ১০০-এর ওপর লাইক এবং ৭০-৮০টি রিপ্লাই পড়ে আমার কমেন্টে। গোটা সুতোয় আমার কমেন্টই টপ কমেন্ট দেখাতে থাকে। আশায় বুক বাঁধি যে এইবার নিশ্চয়ই মাননীয়ার চোখে পড়বে। কিন্তু ...... বুক ভরা আশা ধুপ করে নিভে গেল যখন হঠাত পেজটি রিফ্রেশ করতে গিয়ে দেখলাম আমার কমেন্টটি মুছে দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতে কমেন্ট করা থেকে আমায় ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। ব্যর্থ মনোরথ হয়ে একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনব ভাবছি এমন সময় এক বন্ধু আমার প্রশ্নের স্ক্রিন শট পাঠাল মেসেজে, পেজ থেকে মুছে দেওয়ার আগেই সে ছবি তুলে নিয়েছিল। সেই স্ক্রিন শট অনেক ক্ষণ আগের। এর পর অনেক লাইক এবং কমেন্ট পড়েছিল আমার কমেন্টে, কিন্তু আমি যে বানিয়ে বলছি না তার জন্যে ছবিটি দিলাম। ওঁর পেজে গিয়ে দেখুন, এখন আর খুঁজে পাবেন না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy