Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

রাজীবের বিদায় কি সময়ের অপেক্ষা, জল্পনা জোরদার

কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে কি অবশেষে সরিয়েই দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন? বুধবার সন্ধ্যা থেকে এই প্রশ্নে আলোড়িত সবাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৫
Share: Save:

কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে কি অবশেষে সরিয়েই দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন? বুধবার সন্ধ্যা থেকে এই প্রশ্নে আলোড়িত সবাই।

পুলিশ ও আমলামহল থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল, এমনকী সাধারণ মানুষের আলোচনার কেন্দ্রে ছিল এই বিষয়টি। রাত পর্যন্ত এ সম্পর্কে অবশ্য কোনও সরকারি ঘোষণা হয়নি। যদিও অনেকের ধারণা, ঘোষণা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। তাঁর জায়গায় কে আসবেন সেই নাম চূড়ান্ত হয়নি বলেই এ দিন রাজীবকে অপসারণের নির্দেশে সিলমোহর পড়েনি। পরবর্তী পুলিশ কমিশনার হিসেবে সম্ভাব্য যে নামগুলি বিবেচনায় রয়েছে তার মধ্যে প্রধান দু’জন হলেন সৌমেন মিত্র এবং সিভি মুরলীধর। প্রথম জন বর্তমানে সিআইডি-র এডিজি, দ্বিতীয় জন রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ডিজি।

রাজীব কুমার লালবাজারের দায়িত্বে বসেছেন ২৯ জানুয়ারি। কিন্তু শাসক দলের ‘অতি ঘনিষ্ঠ’ এই আইপিএস অফিসারকে নির্বাচন কমিশন যে ভোটের আগে সরিয়ে দিতে পারে, এমন কথা বেশ কিছু দিন ধরেই হাওয়ায় ভাসছিল। কারণ, তাঁর নামে কমিশনের কাছে ভূরি ভূরি অভিযোগ জানিয়েছেন বিরোধীরা। যেমন, সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) সদস্য হিসেবে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি লোপাট করে দিয়েছিলেন তিনি। বিরোধীদের তাই আশঙ্কা ছিল, কলকাতার পুলিশ কমিশনার হিসেবে শাসক দলের পক্ষে কাজ করতে পারেন রাজীব। এই সব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন যে রাজীবকে নজরে রেখেছে, ইঙ্গিত মিলেছিল তারও।

ইতিমধ্যে আগুনে ঘি পড়ে বিজেপি নেতা রাহুল সিংহকে ঘুষ দিতে গিয়ে স্পেশাল ব্রাঞ্চের দুই কর্মী ধরা পড়ায়। অভিযোগ ওঠে,
বিজেপি-কে দুর্নীতিতে জড়ানোর এই ছকের পিছনে লালবাজারের শীর্ষকর্তার কলকাঠিও রয়েছে। যার মূল কারণ ‘নারদ কেলেঙ্কারি’র বদলা। মঙ্গলবার বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ কলকাতায় এসে সরাসরি অভিযোগ করেন, ঘুষ-কাণ্ডের পিছনে রাজীব কুমারের হাত আছে। তার পরেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার দাবিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে সরব হয় বিজেপি। বুধবার কংগ্রেসেরও প্রতিনিধি দল দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীর সঙ্গে দেখা করে রাজীবকে অপসারণের দাবি জানান। পরে কংগ্রেস নেতা রাজীব শুক্ল বলেন, ‘‘রাজীব কুমার কলকাতার পুলিশ কমিশনার নন, যেন তৃণমূলের কমিশনার।’’

এই পরিস্থিতিতে সন্ধ্যায় খবর ছড়িয়ে পড়ে রাজীবকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ দিন সন্ধের পরেও নবান্নে ছিলেন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে। ছিলেন স্বরাষ্ট্র দফতরের একাধিক অফিসারও। এ থেকেই জোরদার হয় গুঞ্জন। তবে রাত পর্যন্ত সরকারি নির্দেশ আসেনি বলেই প্রশাসনের খবর। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা দিনভর মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলাম। কিন্তু ওঁদের কাছেও এ নিয়ে কোনও খবর নেই বলে রাতে তাঁরা জানিয়েছেন।’’ রাজীব ফোন ধরেননি, এসএমএসেরও জবাব দেননি। মুখ খোলেননি লালবাজারের কোনও কর্তাই। কথা বলতে চাননি তৃণমূলের কেউ।

তবে রাজীব-অপসারণের সম্ভাবনা ছড়িয়ে পড়ামাত্র তাকে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধী দলগুলি। তাদের দাবি, রাজীব যে শাসক দলের হয়ে কাজ করছেন, কমিশন নিজস্ব পর্যবেক্ষণে তা বুঝতে পেরেছেন। বিরোধী নেতাদের কারও কারও অবশ্য না-আঁচালে বিশ্বাস নেই। যদিও তাঁদের বক্তব্য, এর পরেও যদি রাজীবকে সরানো না-হয়, তা হলে পুলিশ কমিশনার পদের মর্যাদা বলে আর কিছু থাকবে না। শাসকের হয়ে কাজ করে এমনিতেই ওই পদকে ধুলোয় লুটিয়েছেন তিনি। সম্মান হারিয়েছেন বাহিনীর কাছে।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার ছাড়াও এ রাজ্যের আরও বেশ কিছু জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাজকর্ম নিয়ে এ দিন এআইসিসি-র প্রতিনিধি দল অভিযোগ জানিয়েছে নির্বাচন সদনে। বি কে হরিপ্রসাদ, মণীশ তিওয়ারি, রাজীব শুক্লরা কমিশনকে জানান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপার শাসক দলের হয়ে কাজ করছেন। পরে হরিপ্রসাদ বলেন, ‘‘রাজ্যে মুখ্য নির্বাচন অফিসারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’ এ দিনই রবীন দেবের নেতৃত্বে বামফ্রন্টের প্রতিনিধি দল কলকাতায় মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের সঙ্গে দেখা করে দাবি করেন, তাঁদের অভিযোগগুলি বিবেচনা করা হচ্ছে না।

যে বিষয়টি নিয়ে বর্তমান রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়, রাজীবকে সরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা জোরদার, সেই ‘ঘুষ-কাণ্ড’ নিয়ে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার অবশ্য এ দিনও বলেছেন, ‘‘প্রথম থেকেই আমরা বলে আসছি অভিযুক্ত দু’জন পুলিশকর্মী ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য গিয়েছিলেন। তদন্তের এখনও পর্যন্ত যা অগগ্রতি, তাতে সেই তত্ত্বই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।’’ তিনি জানান, ঘটনাটি নিয়ে ডিসি (সেন্ট্রাল) এখনও রিপোর্ট দেননি। বুধবারও অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যে হেতু তাঁদের কাছে ক্যামেরা বা টাকা ছিল না, তাই শুধু অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতগ্রাহ্য ধারা দেওয়া যায়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy