ভোটের বাংলায় ‘গণতন্ত্র’ বাঁচাতে কংগ্রেসের হাত ধরেছে তারা। কিন্তু, গুসকরা পুর-এলাকার ‘গণতন্ত্র’ বাঁচাতে তৃণমূলের হাত ধরতে কসুর করছে না সেই সিপিএমই!
‘গণতন্ত্র রক্ষা’ এবং ‘উন্নয়নের স্বার্থে’ তৃণমূলের পুরপ্রধানকে পদচ্যুত করতে তৃণমূলেরই পাঁচ কাউন্সিলরের সঙ্গে এককাট্টা হয়েছেন বর্ধমানের গুসকরা পুরসভার পাঁচ সিপিএম কাউন্সিলর। বাম-কংগ্রেস জোটের বাজারে এমন উলটপুরাণে অস্বস্তিতে পড়েছেন সিপিএম-তৃণমূল, দুই দলের নেতৃত্বই। বিশেষ করে যেখানে বারবার তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটানোর কথা বলছেন সেখানে গুসকরায় দলের কোন্দল এমন কাছাখোলা হয়ে পড়ায় শাসক-শিবিরে বিড়ম্বনা আরও বেড়েছে। দলের আউশগ্রাম (গুসকরা এই কেন্দ্রের অন্তর্গত), মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামের পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল ফোন ধরেননি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ আবার বলেছেন, ‘‘এ বিষয়ে যা বলার অনুব্রত মণ্ডলই বলবেন।’’
মঙ্গলবার তলবি সভা ডেকে পুরপ্রধান সরানোর চিঠিতে সই করেন ওই দশ কাউন্সিলর। অথচ এই তলবি সভা না করার জন্য যেমন তৃণমূলের উপরতলার নির্দেশ ছিল, তেমনই বর্ধমান সদর মহকুমাশাসকও বৈঠকে ১৪৪ ধারা জারি করেছিলেন। ফলে, এ দিনের বৈঠক কতখানি কার্যকর হবে, সে প্রশ্ন তুলেছেন গুসকরার পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায়ের অনুগামীরা। বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কাউন্সিলরদের নেতৃত্বে যিনি, সেই নিত্যানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আবার জোর করে পুরসভায় ঢুকে চাবি কেড়ে ওই তলবি সভা করার পাল্টা অভিযোগ করেছেন পুরপ্রধান। মহকুমাশাসক মুফতি শামিম
সওকত জানান, এ ব্যাপারে পুলিশ ও নির্বাহী আধিকারিকের কাছ থেকে রিপোর্ট নেবেন।
এই গুসকরা পুরসভায় হার দিয়েই বর্ধমানে গড় ভাঙতে শুরু করেছিল সিপিএমের। পরের দশ বছরে উন্নয়নের বদলে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই দেখে এসেছেন এলাকার মানুষ। মাস তিনেক আগে বুর্ধেন্দুবাবু উপপুরপ্রধান পদ থেকে নিত্যানন্দ-ঘনিষ্ঠ রাখি মাঝিকে সরিয়ে দেওয়ায় ঝামেলা বাড়ে। বুর্ধেন্দুবাবুর অনুগামী কাউন্সিলর মল্লিকা চোঙদারের সঙ্গে পুরসভার বৈঠকে নিত্যানন্দবাবুর মধ্যে চুলোচুলি, চড় মারামারি পর্যন্ত
হয়! অবস্থা সামলাতে অনুব্রত গুসকরায় বৈঠক করে জানান, খোদ দলনেত্রী গুসকরার কাণ্ডকারখানা নিয়ে বীতশ্রদ্ধ। ভোটের আগে পুরপ্রধানকে অপসারণ বিষয়ে কোনও আলোচনা করা যাবে না।
সেই নির্দেশ উড়িয়েই ১০ মার্চ পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন তৃণমূলের পাঁচ কাউন্সিলর। নির্ধারিত সময়ে পুরপ্রধান সভা না ডাকায় বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরেরাই এ দিন বৈঠক ডাকেন। সেখানে পুরপ্রধানকে সরানোর সিদ্ধান্ত হয়। এমনকী, জেলাশাসকের হস্তক্ষেপে নতুন পুরপ্রধান নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত উপপুরপ্রধান চাঁদনিহারা মুন্সি দায়িত্বে থাকবেন বলেও ঠিক হয়। নিত্যানন্দবাবু বলেন, “আমাদের নয়, এলাকার মানুষের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত।” তা বলে সিপিএমের সঙ্গে জোট? তাঁর দাবি, “তিন কাউন্সিলর সভা ডেকেছিলেন। সিপিএম উপস্থিত হয়ে আমাদের সমর্থন করেছে।” বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের
মনোজ সাউ বলেন, “গুসকরায় গণতন্ত্র আর নেই। পুরপ্রধানকে সরাতেই সমর্থন করেছি।’’
পুরপ্রধানের প্রতিক্রিয়া, “আমি প্রার্থীকে নিয়ে প্রচারে বেরিয়েছি। দলকে জেতানোই লক্ষ্য। ও-সব
ভাবছি না। যা বলার নেতারা বলবেন।” কাউন্সিলর মল্লিকা চোঙদারের
কটাক্ষ, “আমরা সিপিএম-কংগ্রেস জোটের বিরুদ্ধে লড়ছি। আর গুসকরায় তৃণমূল-সিপিএমের জোট দেখল মানুষ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy