Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

উন্নয়ন সত্ত্বেও প্রশ্নে জেরবার নেতারা

সাধারণ মানুষ অবশ্য খালি দুর্নীতি, স্বজনপোষণ বা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়েই বিরক্ত নন, উন্নয়ন নিয়েও অনেক প্রশ্ন তুলেছেন।

দৌলতপুরে প্রস্তাবিত বাসস্ট্যান্ড এখনও তৈরি হয়নি। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।

দৌলতপুরে প্রস্তাবিত বাসস্ট্যান্ড এখনও তৈরি হয়নি। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।

পীযূষ নন্দী
শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২১ ০৮:২২
Share: Save:

বন্যা নিয়ন্ত্রণে ‘আরামবাগ মাস্টারপ্ল্যান’-এর প্রথম দফার কাজ প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। মুণ্ডেশ্বরী নদীর পলি তোলার কাজ চলছে।

মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণের কাজও লোকে দেখতে পাচ্ছেন।

আরামবাগ-তারকেশ্বর রোডের চাঁপাডাঙা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার চার লেনের কাজও চলছে।

শহর জুড়ে প্রচুর হাইমাস্ট আলো বসেছে। শ্মশান-চুল্লি হয়েছে। পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে।

কিন্তু এ সব নিয়ে প্রচার করেও আরামবাগ বিধানসভা এলাকায় সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে হিমসিম খাচ্ছেন শাসক দলের নেতারা। দুর্নীতি আর স্বজনপোষণের প্রশ্নে যে তাঁরা জেরবার হচ্ছেন, সে কথা মেনেও নিচ্ছেন তৃণমূল নেতারা। ফলে, ভোট কোথায় পড়বে, তা নিয়ে তাঁদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ বাড়ছে।

তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে আরামবাগের সংগঠন যাঁদের হাতে তৈরি, তাঁদের মধ্যে তিরোল পঞ্চায়েতের প্রধান আব্দুস সুকুরের আক্ষেপ, “সর্বত্র গলা ফাটিয়ে বলছি, তৃণমূল ভাল কাজ করেছে। আকৃষ্ট করার মতো কাজগুলো বেছে বেছে বলছি। কিন্তু সে সব কানে না তুলে মানুষ নিজেদের চোখে দেখা নানা অনিয়মের প্রশ্ন তুলে কৈফিয়ত চাইছেন।” আর এক নেতা সমীর ভান্ডারী মানছেন, “দলের অনেকের চালচলন মানুষ ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। ভোটের মুখে সেই চালচলনের ব্যাখ্যা দিতেও পারব না।”

সালেপুর-২ অঞ্চলের তৃণমূল নেতা অবনী মৌরীর খেদ, “উন্নয়ন হয়েছে প্রচুর। এখন দৈনিক প্রচারে বেরিয়ে বিধায়ক থেকে শুরু করে ব্লক স্তরের নেতাদের দুর্নীতি, স্বজনপোষণ আর গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ছি।’’

সাধারণ মানুষ অবশ্য খালি দুর্নীতি, স্বজনপোষণ বা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়েই বিরক্ত নন, উন্নয়ন নিয়েও অনেক প্রশ্ন তুলেছেন। বাতানলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শঙ্কর সরকার বলেন, ‘‘আরামবাগেও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, কিসান মান্ডি, কর্মতীর্থ, টেকনিক্যাল কলেজ ইত্যাদি হয়েছে। কিন্তু সুপার স্পেশালিটিতে পরিষেবা নেই। কিসান মান্ডিতে ধান কেনা ছাড়া কিছু হয় না। কর্মতীর্থ প্রায় অচল। স্থানীয় জরুরি প্রয়োজনের উন্নয়ন কই? মলয়পুরে বাঁধ সংস্কার হয়নি। বন্যা এলাকা জলমগ্ন হয়। মুণ্ডেশ্বরী নদীর উপর মলয়পুরের বেঁশের ঘাটে একটি সেতুর দাবি দীর্ঘদিনের। তা-ও হয়নি।’’

আরামবাগের বেনেপুকুরে পানীয় জলের যন্ত্রণা মিটল না। —নিজস্ব চিত্র।

আরামবাগের বেনেপুকুরে পানীয় জলের যন্ত্রণা মিটল না। —নিজস্ব চিত্র।

মোট ১৩টি পঞ্চায়েত নিয়ে আরামবাগ বিধানসভা এলাকা। এখানে ধান, আলু ছাড়াও প্রচুর আনাজ চাষ হয়। সালেপুর-১ পঞ্চায়েতের রামনগর গ্রামের চাষি বিমল দাস, তিরোলের পুইন গ্রামের শেখ মুন্সি আক্তার প্রমুখের অভিযোগ, “এখানে বহুমুখী হিমঘরের ব্যবস্থা করার জন্য নিয়ে শাসক দলের নেতা-বিধায়ককে বহুবার বলা হয়েছে। কিছু হয়নি।”

বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ বিধবা-বার্ধক্য ভাতা, আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়েও প্রচুর অভিযোগ তুলেছেন। মাধবপুর পঞ্চায়েতের এলোমা গ্রামের বৃদ্ধ শেখ সফিকুল রহমানের অভিযোগ, “বামেদেরও দুর্নীতি ছিল। কিন্তু তৃণমূল নেতারা দেখছি সরকারি প্রকল্পগুলোকেও চড়া দামে বিক্রি করছে। ন্যায্য বার্ধক্য ভাতা পেতেও ১০-২০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। আবাস যোজনা প্রকল্পে ৫০-৬০ হাজার টাকা।”

শুধু গ্রাম নয়, শহর থেকেও অভিযোগের বন্যা। শহরে যানজট রুখতে বাইপাস বা উড়ালপুলের দাবি অনেক দিনের। তা পূরণ হয়নি। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিনয় মল্লিক, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শেখ রহিমের কথায়, ‘‘‘বাসস্ট্যান্ডটাও সরানো হয়নি। শহর আলোকিত থাকা সত্বেও সৌন্দর্যায়নের নামে অপ্রয়োজনীয় অনেক হাইমাস্ট আলো বসানো হয়েছে। অধিকাংশ জ্বলে না। জলসত্র হয়েছে। তাও খারাপ হয়ে আছে। এই উন্নয়নে লাভ কী?”

অন্য বিষয়গুলি:

Arambag West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy