Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

বাছাই ‘প্লেয়ার’ দিয়ে কাজ হাসিলের ছক

অনুব্রত মণ্ডলের মতো ক্যাপ্টেন না থাক। ‘চড়াম-চড়াম’ ঢাকের বাদ্যি নাই বা বাজল। ভোট করানোর ‘প্লেয়ার’ এই জেলাতেও কম নেই!

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০২
Share: Save:

অনুব্রত মণ্ডলের মতো ক্যাপ্টেন না থাক। ‘চড়াম-চড়াম’ ঢাকের বাদ্যি নাই বা বাজল। ভোট করানোর ‘প্লেয়ার’ এই জেলাতেও কম নেই!

অঙ্কের হিসেবে বর্ধমানে এমনিতেই এ বারের লড়াইটা জমাটি। তার উপর প্রতিরোধে মরিয়া জোট। বিরোধীদের লাগাতার গুঁতোনিতে তৎপর নির্বাচন কমিশনও। তাই ভোট করানোর ছক তৈরি শাসকদলের। সোমবার রাতে শহরের একটি
হোটেলে দলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন বর্ধমান জেলার তৃণমূলের পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস। কোন এলাকায় কে কী ভাবে ভোট নিয়ন্ত্রণ করবেন, ছক কষা হয় সেখানে। সেই মতো ‘অপারেশন’ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ।

আপাতদৃষ্টিতে অবশ্য শাসক-শিবিরে চিন্তার কারণ নেই। পাঁচ বছর আগে পরিবর্তনের ধাক্কায় সেই যে ধস নামা শুরু হয়েছে লাল দুর্গে, পঞ্চায়েত, লোকসভা বা পুরভোট—সেই রক্তক্ষরণ চলছেই।

তা হলে ছকের প্রয়োজন কেন?

এর পিছনে রয়েছে পাটিগণিত। গত বিধানসভায় ১৬টি কেন্দ্রের ন’টিতে জিতেছিল কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। সাতটিতে বামেরা। ২০১৪-র লোকসভায় বামেদের ভোট-ব্যাঙ্কে থাবা বসায় বিজেপি। বিধানসভার তুলনায় এই জেলায় গড়ে ৯ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছিল তারা। সেই ভোটের বড় অংশ এ বার তাদের ঘরে ফিরবে বলে আশাবাদী জোট।

আরও পড়ুন:
কেতুগ্রামে সিপিএম কর্মীর কান কাটল তৃণমূল, ভোটারদের লাইনে বোমা
নির্বাচন কমিশনের মুখে জুতো মারতে বললেন তৃণমূল নেতা

সেই অঙ্ক মাথায় রেখে দীর্ঘদিন পরে রায়না, খণ্ডঘোষ, ভাতার, আউশগ্রাম, মঙ্গলকোটের মতো গ্রামীণ এলাকাগুলিতে লাল পতাকার বিশাল মিছিল দেখা গিয়েছে।
জোটের মিছিলে ভিড়ের বহর দেখে, হুমকির পাল্টা হুমকি, মারের পাল্টা মার দেখে চিন্তা ছড়িয়েছে শাসক-শিবিরে। সে কারণেই আজ, বৃহস্পতিবার বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকার ১৬টি কেন্দ্রের ভোটে নানা আঁটঘাট বেঁধেছে তারা। কোনও কৌশলই অচেনা নয়। গত পঞ্চায়েত কিংবা লোকসভায় তার সার্থক প্রয়োগও করেছে তারা।

জেলা তৃণমূলেরও নানা সূত্রের খবর, ভোটারের ধরন বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাঁরা নিশ্চিত ভাবে জোটকে ভোট দেবেন, সপ্তাহখানেক ধরে তাঁদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে সমঝে দেওয়া হচ্ছে। যে সব ভোটারের ব্যাপারে দ্বিধা রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে থাকছে ‘ভোটের পরে আমরাই থাকব’ গোছের হুঁশিয়ারি। সমাজে প্রতিপত্তি থাকা শ্রেণিকে বার্তা দেওয়া হচ্ছে বাড়ির কাজের লোকের মাধ্যমে। ভোট না দিলে জীবন অতিষ্ঠ হবে, সেই বার্তা। তবে বিজেপি সমর্থক ভোটারদের সমস্যায় ফেলা হবে না বলেই প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে। কারণ, বিজেপির বাক্সে যত ভোট পড়বে, জোটের তত ক্ষতি বলেই তৃণমূল নেতৃত্বের ধারণা।


বিস্তারিত দেখতে ক্লিক করুণ

ভোটের দিন বুথে ‘কাজ’ সারার স্ট্র্যাটেজিও তৈরি। নিচুতলার অনেক তৃণমূল কর্মীই জানাচ্ছেন, বুথের ২০০ মিটার পর থেকে কয়েক হাত অন্তর দলের চার-পাঁচ জন মিলে জটলা করার পরিকল্পনা রয়েছে। কাজটা মূলত বিরোধী দলের ভোটারদের বুথমুখো হতে দেখলে চোখ রাঙিয়ে বাড়ি ফেরত পাঠানো। বুথে সকালের ভিড় কেটে গেলেই বিরোধী এজেন্টদের ভয় দেখিয়ে বুথছাড়া করার পর্ব শুরু হওয়ার কথা। তার পরে হওয়ার কথা ‘ভূতের ভোট’। সে জন্য ভোটকর্মীদের কব্জায় আনতে সোজাসুজি না হলে বাঁকানো হতে পারে আঙুল। বর্ধমান শহরের এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘২০১৩-র পুরভোটে এ ভাবেই কাজ হয়েছিল।’’ তাঁর দাবি, পুলিশের একাংশকেও সঙ্গে রাখা হয়েছে, যাতে কোথাও কিছু ঘটলে কমিশনের লোকজনকে নিয়ে পৌঁছতে দেরি করে।

তৃণমূল সূত্রে খবর, এই সব কাজ হাসিলের ভার বর্তেছে দলের আস্থাভাজন কিছু খেলোয়াড়ের উপরে। যেমন, বর্ধমান শহর ও লাগোয়া এলাকায় দায়িত্বে দলের দুই কাউন্সিলর বসির আহমেদ ওরফে বাদশা ও প্রদীপ রহমান। রায়নায় বামদাস মণ্ডল, খণ্ডঘোষে অপার্থিব ইসলাম, কালনা ও মেমারিতে ইনসান মল্লিকরা মাঠে নেমেছেন। তাঁদের কেউ দলের জেলা নেতা খোকন দাস বা উত্তম সেনগুপ্ত, কেউ আবার রাজকুমার পাণ্ডের অনুগামী। বাদশা, ইনসানরা অবশ্য বলেন, ‘‘উন্নয়ন দেখে ভোট দেবেন মানুষ। আমাদের কিছু করতে হবে না।’’

আর আছেন অনুব্রত মণ্ডল। তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট ও আউশগ্রামের দায়িত্বে। দলের নিচুতলা জানাচ্ছে, কেষ্টদা (অনুব্রতর ডাকনাম) পঞ্চায়েত সদস্য ও পুরসভার কাউন্সিলরদের বলে দিয়েছেন, নিজেদের এলাকায় ‘লিড’ দিতে না পারলে কপালে দুঃখ আছে। অভিযোগ, তার পরেই বুধবার কেতুগ্রামে সিপিএমের দুই এজেন্টকে মারধর, আউশগ্রামে হুমকি দেওয়া হয়। বর্ধমান দক্ষিণ, রায়না, খণ্ডঘোষে কয়েকজনের ভোটার কার্ড কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মোটরবাইকে চড়ে ভোটারদের হুমকির অভিযোগে কেতুগ্রামে গ্রেফতার হন তৃণমূলের তিন কর্মী। মেমারি, মন্তেশ্বর, রায়নাতেও অশান্তি বেধেছে।

সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক বলেন, ‘‘আমরা মানুষকে বলেছি, দল বেঁধে ভোট দিতে যান। ওরা যদি মারে, মাথা ফাটুক। নির্বাচন কমিশন নিষ্ক্রিয় থাকলে ব্যবস্থা নেব।’’ অরূপ বিশ্বাস অবশ্য কৌশলের কথা মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের জন্য
ভোট দেবেন আমাদের। কৌশলের দরকার নেই।’’

(সহ-প্রতিবেদন: গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 Pick Players
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy