পাপুড়ি গ্রামে তৃণমূলের সেই পার্টি অফিস।
ঠিক জাদু নয়। আবার জাদুও বটে।
আস্ত ট্রেন গায়েব করেছিলেন জাদুকর পি সি সরকার। আস্ত পার্টি অফিস ‘গায়েব’ হতে দেখল নানুর! ঠিক গায়েব নয়। অফিস রইল একই জায়গায়। তবে, তা যে শাসকদলের পার্টি অফিস, এখন দেখে বোঝা কার সাধ্য! দু’দিন আগেও তার গেরুয়া-সবুজে রাঙা দেওয়ালে শোভা পেত দলনেত্রীর ছবি। নানুরের একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রিত হতো ওই চার দেওয়ালের ভিতর থেকেই। আর তৃণমূলের সেই অফিসই কিনা আপাদমস্তক রং পাল্টে রাতারাতি হয়ে গেল ‘ধান্য ক্রয় কেন্দ্র’!
শুক্রবার নানুরের পাপুড়ি গ্রামে প্রচারে গিয়ে এ ভাবেই বেকুব বনলেন তৃণমূলের প্রার্থী, নানুরের বিদায়ী বিধায়ক গদাধর হাজরা। বিস্ময়ের বাকি ছিল না এখানেই। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে গোটা গ্রাম ঘুরলেও তৃণমূল প্রার্থীর মিছিলের দিকে ফিরেও তাকালেন না সেই গ্রামের কেউ। গত বিধানসভা ভোটে যে গ্রাম তাঁকে তিন হাজারেরও বেশি ভোটের ‘লিড’ দিয়েছে— সেই পাপুড়িই কার্যত ‘বয়কট’ করল গদাধরকে।
এ-ও তো ম্যাজিক! যার নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূলের চিরচেনা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। গদাধর গোষ্ঠীর প্রবল বিরোধী বলে পরিচিত দাপুটে তৃণমূল নেতা কাজল শেখ যে এই পাপুড়িরই ছেলে! চলমান অশরীরীর মতোই যিনি পিছন থেকে যাবতীয় কলকাঠি নেড়ে গদাধরের ভোটের লড়াই আরও কঠিন করে দিচ্ছেন বলে দল সূত্রে জানা যাচ্ছে।
কাজল চাননি গদাধর এ বার প্রার্থী হোন। শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তিনি গদাধরের টিকিট আটকাতে দরবারও করেন। কিন্তু, বীরভূম জেলার তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ গদাধরের ভাগ্যে এ বারও শিকে ছেঁড়ে। তার পর থেকেই বেসুরো গাইতে থাকেন কাজল। গদাধর শিবিরের অভিযোগ, দলীয় প্রার্থীকে হারাতে কাজল পরোক্ষে সহযোগিতা করায় বিভিন্ন জায়গায় দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে থাকা সিপিএমের পার্টি অফিস খোলা থেকে জোটের মিটিং-মিছিলে লোক বাড়ছে। কয়েক আগেই এসএফআইয়ের দখলে এসেছে টিএমসিপির হাতে থাকা নানুরের চণ্ডীদাস কলেজের ছাত্র সংসদ।
পাপুড়ির ওই পার্টি অফিসের ভোলবদলও হঠাৎ হয়নি বলেই দাবি গদাধরের অনুগামীদের। ২০১৩ সালে গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় গড়ে ওঠে তৃণমূলের অঞ্চল কমিটির অফিস। গদাধর যে এ দিন পাপুড়ি আসবেন, তা জানাছিল কাজল-গোষ্ঠীর। তার পরেই হল ম্যাজিক। এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, অফিসের দেওয়াল থেকে উধাও ‘বীরভূম যুব তৃণমূল কংগ্রেস কার্যালয়’ লেখা বোর্ড। গোটা অফিসে নতুন সাদা রঙের পোঁচ। বড় বড় করে লেখা হয়েছে ‘ধান্য ক্রয় কেন্দ্র’। অফিসের সামনেই ঝুলছে ধান ওজনের বড় দাঁড়িপাল্লা। শুধু তাই নয়, গোটা গ্রাম তৃণমূলের পতাকায় মোড়া থাকলেও কার্যত কোনও দেওয়ালেই গদাধরের নাম নেই।
গদাধর বা কাজল মন্তব্য করতে চাননি। অনুব্রত বলেছেন, ‘‘আনন্দবাজারকে আমি কোনও কথা বলব না। যা ইচ্ছে লিখুন।’’ তবে, তৃণমূলের নানুর ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে ওই অফিস কাজলের নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছিল। কাজল হয়তো তৃণমূল করতে চান না বলেই অফিসটিকে তাঁর অনুগামীরা ধান বিক্রির কেন্দ্রে রূপান্তরিত করেছে।’’ কাজলের এক ঘনিষ্ঠ অনুগামী আবার বক্তব্য, ‘‘ওই অফিস আগে ধানের আড়ত ছিল। দাদাকে ভালবেসে সেটি পার্টি অফিস করতে দেন এক বাসিন্দা। কিন্তু দাদাই যেখানে দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন, তাই বাড়িটি আর পার্টি অফিসকে দিতে রাজি হননি উনি।’’
ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy