Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Abbas Siddique

পরিবর্তনের ডাক দিয়ে ময়দানে সংযুক্ত মোর্চা

নবগঠিত সংযুক্ত মোর্চার শরিক হিসেবে আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ বড় সংখ্যায় লোক এনেছিল ব্রিগেডে।

মঞ্চে আব্বাস সিদ্দিকি (বাঁ দিকে) এবং বিমান বসু। নিজস্ব চিত্র

মঞ্চে আব্বাস সিদ্দিকি (বাঁ দিকে) এবং বিমান বসু। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২১ ০৬:৪৭
Share: Save:

বিধানসভা ভোটের আগে ‘সংযুক্ত মোর্চা’র ঘোষণা করে রাজ্যে পরিবর্তনের ডাক দিল বিরোধী বাম, কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)। ব্রিগেড সমাবেশের মঞ্চ থেকে তৃণমূলকে উৎখাত এবং বিজেপিকে ক্ষমতায় আসতে না দিয়ে বিকল্প শক্তির সরকার গড়ার জন্য জনতার কাছে আবেদন জানালেন জোটের নেতারা। বিজেপি ও তৃণমূলকে একই সঙ্গে বিঁধে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির আহ্বান, ‘‘না লুঠপাটের সরকার, না জাতপাতের সরকার, এ বার চাই জনহিতের সরকার!’’

ব্রিগেড সমাবেশে রবিবার ভিড়ের বহর দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ইয়েচুরি, সিপিআইয়ের ডি রাজা, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, ছত্তীশগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল-সহ সকলেই। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু শনিবারই দাবি করেছিলেন, ক্রুশ্চেভ-বুলগানিন-নেহরুর ব্রিগেড সভাকে ছাপিয়ে যাবে এ বারের সমাবেশ। ভিড়ের দিকে ইঙ্গিত করে এ দিন বিমানবাবুর মন্তব্য, ‘‘অতীতে এমন ব্রিগেড কখনও দেখা যায়নি। এখন নিশ্চয়ই বামেদের দেখতে দূরবীন লাগবে না!’’

নবগঠিত সংযুক্ত মোর্চার শরিক হিসেবে আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফ বড় সংখ্যায় লোক এনেছিল ব্রিগেডে। তার প্রেক্ষিতে মৌলবাদী শক্তির মদত নেওয়ার কথা বলে বামেদের কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। আবার বিজেপির পাল্টা দাবি, তৃণমূলই বামেদের ব্রিগেড ভরাতে সাহায্য করেছে। চাপান-উতোর যেমনই হোক, বিধানসভা ভোটের মুখে ব্রিগেডের ভিড় রাজনৈতিক শিবিরের চর্চায় উঠে এসেছে।

তবে সংযুক্ত মোর্চার ঘোষণা হয়ে গেলেও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে এ দিনের মঞ্চেই। আসন-রফার ফয়সালা করতে না পারায়। ব্রিগেডের মঞ্চেই কংগ্রেসকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আইএসএফের আব্বাস সিদ্দিকি। যা ভাল ভাবে নেয়নি কংগ্রেস। ফলে, বামেদের সঙ্গে আইএসএফের রফা হয়ে গেলেও কংগ্রেসকে নিয়ে জোট বা সংযুক্ত মোর্চায় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

রাজ্যে ‘প্রকৃত পরিবর্তন’-এর কথা বলে ব্রিগেডের আহ্বানের সূচনা এ দিন করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, কর্মসংস্থান, শূন্য পদে নিয়োগ, পঞ্চায়েত ও পুরসভার স্বচ্ছ পরিচালনা— বিকল্প সরকার কোন বিষয়ে নজর দেবে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন সূর্যবাবু। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘এই সংযুক্ত মোর্চা তৈরি হয়েছে সাম্প্রদায়িক বিজেপির আগ্রাসন রুখে দেওয়ার লক্ষ্যে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূলের শাসনের অবসান ঘটানোর জন্য। মোদী এবং দিদির রাজনৈতিক ডিএনএ একই! সংযুক্ত মোর্চার হাত ধরে বাংলায় এ বার পরিবর্তনের রামধনু দেখা যাবে।’’ লকডাউনের সময়ে ভিন্ রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ফেরা ট্রেনকে মুখ্যমন্ত্রী ‘করোনা এক্সপ্রেস’ বলে চিহ্নিত করতে চেয়েছিলেন, সেই প্রসঙ্গও ফের তোলেন অধীরবাবু।

ইয়েচুরি ব্যাখ্যা দিয়েছেন, দিল্লিতে সংযুক্ত মোর্চার ডাকেই কৃষকেরা তিন মাস ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন কেন্দ্রীয় কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে। সেই সংযুক্ত মোর্চারই আর একটা অধ্যায় শুরু হল এ রাজ্যে। তাঁর বক্তব্য, পেট্রল-ডিজ়েলের দাম যাদের আমলে বেড়েই চলেছে, যারা কৃষকের দাবি শোনে না, যারা বিরোধিতা করলেই রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে নাগরিকদের গ্রেফতার করে, সেই বিজেপির হাতে বাংলার ভার ছেড়ে দেওয়া যায় না। ত্রিশঙ্কু বিধানসভার সম্ভাবনার কথাও তুলেছেন ইয়েচুরি। তবে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘অনেকে প্রশ্ন করছেন, বাংলায় ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হলে আমরা কী করব? আমি বলছি, আগে তৃণমূলকে জিজ্ঞাসা করুন! সুয়োগ বুঝলে তৃণমূল আবার বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করে নেবে না, তার কোনও নিশ্চয়তা আছে? গত কয়েক দশকে নানা রকম ভাবে বিজেপির দোসর ছিলেন তৃণমূল নেত্রী।’’

ছত্তীশগঢ়ের কংগ্রেস সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বাঘেল নতুন স্লোগান বেঁধে দিয়েছেন, ‘‘কাল লড়ে থে গোরোঁ সে, আজ লড়েঙ্গে চোরোঁ সে!’’ বিজেপিকে আক্রমণ করে বাঘেলের মন্তব্য, ‘‘নেতাজি যখন ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন, তখন শ্যামাপ্রসাদ, সাভারকরেরা ইংরেজদের সাহায্য করছিলেন। ওঁদের মুখে দেশপ্রেমের কথা মানায় না।’’

নারী নির্যাতন, দুর্নীতি বা গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের অভিযোগে বিজেপি এবং তৃণমূলকে নিশানা করেছেন আব্বাসও। আর সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘বিজেপি বলছে সোনার বাংলা গড়বে! একটা লোহার রেল যারা চালাতে পারে না, তারা গড়বে সোনার বাংলা? দল বদলের সঙ্গে দিন বদলের লড়াই হবে এখানে।’’ সূর্যবাবুর মতোই সরকারে এলে নিয়মিত চাকরির পরীক্ষা, স্বচ্ছ প্রশাসনের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তার পাশাপাশিই দাবি করেছেন, ‘‘ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার হাতে প্রতারিত মানুষ আজও বিচার পাননি। আমাদের সরকার এলে প্রতারকদের বাড়ি-ইট-পাথর নিলামে তুলে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা হবে। সে বাড়ির নাম ‘শান্তিনিকেতন’ বা যা-ই হোক না কেন!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy