সকাল সাতটা। ভোট সবে শুরু হয়েছে। আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের কারনানি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুটি বুথে (৭১, ৭২) তৃণমূল ছাড়া অন্য দলের পোলিং এজেন্ট না থাকার অভিযোগ ওঠে। রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী মলয় ঘটকও ভোট দেন ওই বুথেই।
বিএনআর মোড়ের সিপিএম পার্টি অফিস থেকে দুশো মিটারের মধ্যেই ওই স্কুল। সেখানে এজেন্ট নেই কেন?
আসানসোলের সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘এজেন্ট ঠিক হয়েই ছিল। রবিবার রাত ১২টার পরে কাউন্সিলর অভিজিৎ ঘটক এবং তাঁর দলবল ওই সব এজেন্টের বাড়ি গিয়ে ভয় দেখায়। পরিবারের চাপে আর কেউ বুথে ঢুকতে পারেনি।’’ কারনানি ছাড়াও মণিমালা স্কুল, চেলিডাঙা হাইস্কুলেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁদের দাবি। একই অভিযোগ বিজেপি প্রার্থী নির্মল কর্মকারের।
বিরোধীদের অভিযোগ, এলাকায় দিন কয়েক ধরেই যথেষ্ট সক্রিয়তা দেখাচ্ছে না কেন্দ্রীয় বাহিনী। বুথের সামনে কর্মরত জওয়ান মহেন্দ্র পাল যদিও বলেন, ‘‘মার্চে আসার পরে দিন কয়েক রুটমার্চ করেছিলাম। তারপর রাজ্য পুলিশ যা বলেছে তাই করেছি। আমরা তো নিজে থেকে কিছু করতে পারি না!’’
এ দিকে, রবিবার রাত থেকেই কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ‘রসে বসে’ রাখার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী ইন্দ্রাণী মিশ্রের অভিযোগ, ‘‘৪৩, ৪৪, ৫১ ও ৫২ নম্বর বুথের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের লাল জল ও মাংস খাওয়ানো হয়েছে। এঁরা অনেকেই শ্যামাদেবী প্রাথমিক স্কুলে কর্তব্যরত।’’
বার্নপুর বয়েজ হাইস্কুলে আবার রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় বাহিনী। ওই স্কুল চত্বরে চারটি বুথ। দিনভর বুথ সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা যায় চার জন জওয়ানকে। এসএসবির হেড কনস্টেবল অশোক সরকার বলেন, ‘‘এক কোম্পানি এসএসবি জওয়ান। এর মধ্যে গাড়ি চালক, রাঁধুনি, এবং দৈনন্দিন অন্য কাজের জন্য কয়েক জনকে রিজার্ভ রাখতে হয়। ভোটের কাজে লাগানো যায় না।’’ এর মধ্যেই ৪৭টি ভোট কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁদের। ওই সেক্টরের এক অফিসার জানান, বুথের দায়িত্বে রাজ্য পুলিশ নেই। ওই কেন্দ্রে এক জন রাজ্য পুলিশের কর্মী রয়েছেন। যিনি বাইরেটা দেখছেন।
রানিগঞ্জের একাধিক পঞ্চায়েত এলাকা আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের অধীনে। পুরনো এগারা কেন্দ্রের প্রাথমিক স্কুলেও রয়েছে এসএসবি-র জওয়ান। প্রচণ্ড দাবদাহ। প্রায় ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আগুনে রোদে দাঁড়িয়ে বুথ সামলাচ্ছেন চার জওয়ান। হেড জওয়ান নাগাল্যান্ডবাসী টি জামির তার মধ্যেই কাউকে ঘেঁষতে দিচ্ছেন না বুথের কাছে। এমনকী বাইরে রাস্তায় জটলা হলেই লাঠি উঁচিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। একেবারে গ্রামীণ এলাকা বলে ভোটারেরাও সে সব দেখে তটস্থ। সারাক্ষণ রোদে। ছাউনি নেই বাইরে। তবুও কর্তব্যে অবিচল। উল্টো চিত্র বল্লভপুর বাইপাশের ধারে। গাড়ি থামিয়ে গাছের নীচে বিশ্রাম নিচ্ছেন রাজ্য পুলিশের একটি দল।
দুপুরে প্রশাসনের এক অফিসারের বিরুদ্ধে তাঁকে হেনস্তার অভিযোগ তোলেন সিপিএম নেতা পার্থবাবু। বিষয়টি রিটার্নিং অফিসারকে জানানো হয় বলে তাঁর দাবি। অভিযোগের কথা মেনেছেন রিটার্নিং অফিসার প্রলয় রায়চৌধুরী।
দিনের শেষে পার্থবাবু এবং বিজেপির জেলা সভাপতি তাপস রায় আসানসোলের ভোট নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘পুরভোটের অশান্তি এখনও দগদগে ঘায়ের মতো জ্বালা দেয়। সে তুলনায় আসানসোলে বিধানসভা ভোট স্বস্তি দিয়েছে।’’ আর মলয় ঘটক বলেন, ‘‘যাক স্বীকার করেছে, এটাই ভাল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy