ভাঙড়ে রক্তাক্ত সিপিএম কর্মী সফিক মোল্লা। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল।
দুই পর্ব পেরিয়ে এ বার ভোট ঢুকতে চলেছে তৃণমূলের ‘কোর’ এলাকা বীরভূম এবং তার পরে গ্রামীণ বর্ধমানে। যেখান থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন দখলে আনাই শাসক দলের লক্ষ্য। তার আগে কড়া ভূমিকা নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এই পরিস্থিতিতে এ বার শাসক দলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধে নামতে চাইছে বিরোধীরা। কোথাও সিপিএম, কোথাও কংগ্রেস বা কোথাও বা বিজেপি— যার পক্ষে যেখানে সম্ভব, কমিশনের ভূমিকা মাথায় রেখে তৃণমূলের বিরুদ্ধে পাল্টা ময়দানে নামা শুরু হয়ে গিয়েছে।
দ্বিতীয় পর্বের ভোটের দিন থেকেই নানা জায়গায় সিপিএম কর্মীরা তৃণমূলের বাহিনীকে প্রতিহত করতে শুরু করেছেন। এর পরে কমিশন সক্রিয়তা বাড়িয়ে দেওয়ায় আরও আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়ে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। আলিমুদ্দিনে শুক্রবার সূর্যবাবু বলেছেন, ‘‘এত দিন মুখ্যমন্ত্রী মানুষকে ভয় দেখিয়ে ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে মাপার কথা বলেছিলেন। এখন মানুষ ওঁকে ফুট, গজ আর মিটারে মাপছে! বাংলার মানুষকে বলছি, সর্বশক্তি প্রয়োগ করুন। আপনাদের অধিকার এমন ভাবে প্রয়োগ করুন যাতে, এই উদ্ধত মুখ্যমন্ত্রী আগামী ১৯ মে রাজভবনে গিয়ে পদত্যাগপত্র দিয়ে আসতে বাধ্য হন!’’ বাম কর্মীদের প্ররোচনায় পা না-দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও বলেছেন, ‘‘পরাজয়ের আতঙ্কে শাসক দলের নেতা-নেত্রীদের বেসামাল আচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে!’’
সামনের দফায় উত্তরবঙ্গের ৪৫ এবং বীরভূমের ১১টি ধরে মোট ৫৬টি আসনে ভোট। সূর্যবাবু এ দিন বলেছেন, এই পর্বে বিরোধীদের পোলিং এজেন্ট নেই, এমন একটিও বুথ যাতে না থাকে, তার চেষ্টা চলছে। প্রলোভন বা ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে এজেন্টরা যাতে ভোটযন্ত্র সিল হয়ে বেরোনোর আগে পর্যন্ত বুথে থাকেন, সেই নির্দেশও দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভোটের আগের দিন থেকে নজরদারির ব্যবস্থা আমরা করেছি। কমিশনকেও বিধিবদ্ধ ভাবে অভিযোগ জানানো হচ্ছে।’’ অনুব্রত মণ্ডলের বীরভূমেও এ বার আগের পরিস্থিতি থাকবে না বলে সূর্যবাবুর দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁদের আস্ফালন বেড়েছে। মানুষও প্রতিহত করার জন্য তৈরি হচ্ছেন।’’ বীরভূমে বিজেপি নেতা দুধকুমার মণ্ডলও বলেছেন, ‘‘তৃণমূল ভয় দেখালেও এ বার আর মানুষ ভয় পাচ্ছেন না। মারতে এলে পাল্টা মার খেয়ে যাবে ওদের ঠ্যাঙাড়েরা।’’
জোটের প্রচারে এখন প্রতিদিনই জনসমাগম বাড়ছে। আবার চাপের মুখে কমিশনও সক্রিয় হচ্ছে। এ সবের জেরে হলদিয়া থেকে মালবাজার— বিভিন্ন জায়গায় এখন তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর নিচ্ছেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। প্রতিরোধের ইঙ্গিত দিয়েই লক্ষ্মণ শেঠের জমানা ফুরনোর পরে এখন যেখানে তৃণমূলের গড়, সেই হলদিয়ায় এ দিন শাসক দলের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধেছে সিপিএমের। নন্দীগ্রামের প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী হলদিয়ার মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দিতে ঢোকার আগেই তৃণমূলের সঙ্গে গোলমাল বাধে সিপিএমের। প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে এসে মহকুমাশাসকের দফতরের বাইরে পথসভা করছিল বামেরা। সেই সময়েই মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিতে আসেন মহিষাদলের তৃণমূল প্রার্থী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার। তার থেকেই বচসার সূত্রপাত। এক সিপিএম সমর্থক সুতাহাটা থানার ওসি-র গায়ে হাত তোলেন বলে অভিযোগ। পুলিশ লাঠি চালায়। প্রথমে পিছু হঠলেও পরে সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূলের বাহিনীর সংঘর্ষে এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
ভাঙড়ের কাঁঠালিয়া বাজারে সিপিএম কর্মী সফিক মোল্লাকে ঘিরে ধরে ‘সিপিএম করা যাবে না’
বলে হুমকি দেয় তৃণমূলের লোকজন। ওই কর্মী প্রতিবাদ করায় শুরু হয় মারধর। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কলকাতার চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে। পুলিশ আব্দুল আলিম নামে এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। ফেস্টুন লাগানোকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর হাওড়ার নস্করপাড়াতেও সংঘর্ষ বাধে কংগ্রেস ও তৃণমূলের। কংগ্রেস প্রার্থী সন্তোষ পাঠককে গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মীরা। অবস্থা সামাল দিতে রাতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী ও র্যাফ নামানো হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy