Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

কী আর হবে! খুব বেশি হলে গ্যারাজ পোস্টিং

ভোটের আগে নির্দেশ এসেছিল, কাজ করতে হবে পুলিশের মতো। নানা অভিযোগ ওঠায় ভোটের আগে-আগে সরিয়ে দেওয়া হয় কয়েক জন কর্তাকেও। কয়েকটি গোলমাল-গণ্ডগোলের ঘটনা ছাড়া নির্বিঘ্নে ভোট মেটার পরে পুরুলিয়া থেকে বীরভূম, বর্ধমানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশের ভূমিকাও।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০১:৫২
Share: Save:

ভোটের আগে নির্দেশ এসেছিল, কাজ করতে হবে পুলিশের মতো। নানা অভিযোগ ওঠায় ভোটের আগে-আগে সরিয়ে দেওয়া হয় কয়েক জন কর্তাকেও। কয়েকটি গোলমাল-গণ্ডগোলের ঘটনা ছাড়া নির্বিঘ্নে ভোট মেটার পরে পুরুলিয়া থেকে বীরভূম, বর্ধমানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি প্রশংসা কুড়িয়েছে পুলিশের ভূমিকাও। কিন্তু রাজ্যে শেষ দফা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোপে অসন্তুষ্ট ভোট মিটে যাওয়া এই সব জেলার পুলিশকর্মীরাও।

কোনও অনুরোধ-উপরোধ বা কারও শাসানির সামনে মাথা নত করার দরকার নেই, ভোট ঘোষণার পরে নানা বৈঠকে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের বার্তা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ভোটের ঠিক আগে-আগে বর্ধমান ও বীরভূমের পুলিশ সুপারদের সরিয়ে দেওয়া হয়। সরানো হয় ওই দুই জেলার বেশ কয়েকটি থানার ওসি এবং আইসি-কেও। বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায় অবশ্য কোনও পুলিশ অফিসারকে বদলি করেনি কমিশন। ভোট হয়েছে নির্বিঘ্নেই। রবিবার পাঁশকুড়ায় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, পুলিশকে তার কৃতকর্মের ফল ভুগতে হবে। তিনি সাফ বলেছেন, ‘‘যা হয়েছে সব কিছুর উত্তর আমি বুঝে নেব।’’ বিরোধীদের অভিযোগ, ভোটে তৃণমূলের লোকজনের দাপাদাপি আটকেই মমতার রোষের মুখে পড়েছে পুলিশ। এমন সরাসরি হুমকি নিয়ে সাড়া পড়েছে পুলিশ মহলেও।

বাঁকুড়া জেলা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক দলের তাঁবেদারি না করলে এত দিন পর্দার আড়ালে শুনতে হত। এ বার প্রকাশ্যেই হুমকি এল। এটাই যা তফাত।’’ বীরভূমের এক অফিসার আবার বলেন, ‘‘সামান্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হচ্ছে পুলিশকে। যারা হামলা করছে, তারা নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে, ঘুম উড়ছে পুলিশের। এর চেয়ে খারাপ অবস্থা আর কী হতে পারে? অন্তত কিছুটা মাথা তুলে কাজ করার সুযোগ মিলেছে। তাতে যা হয় হোক।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘কী আর হবে! বড় জোর একটা বিভাগীয় তদন্ত বা গ্যারাজ পোস্টিং। অথবা ১৩তম মাসের বেতন কেটে দেওয়া!’’

বীরভূম পুলিশের একটি অংশের দাবি, ভোটের আগে জেলার এক দাপুটে নেতা কোনও সমস্যা তৈরি করলে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দেন ফোনে। তা ভাল ভাবে নেননি পুলিশকর্মীদের একটি বড় অংশ। তাঁদেরই কয়েক জনের কথায়, ‘‘যাঁদের চামড়া মোটা নয়, তাঁরা ভোটে কী ভূমিকা পালন করেছেন, তা তো দেখাই গিয়েছে।’’ বাঁকুড়ার এক পুলিশ আধিকারিকের অভিযোগ, ‘‘শাসকদল পুলিশকে নিয়ন্ত্রণ না করলে রাজ্যে অপরাধের সংখ্যাটা অনেক কমত। পুলিশকে ধরনের পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয়, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যেই তা প্রকাশ্যে এসেছে।’’

অনেকে আবার বেশ বিরক্ত। পুরুলিয়ার এক ওসি যেমন বলছেন, ‘‘সরকারি কর্মচারীদের খেপিয়ে তুললে তার ফল ভাল হয় না। অতীতেও এর নজির আছে।’’ বীরভূমের এক থানার অফিসারের ক্ষোভ, ‘‘প্রতি পদে সরকারি কর্মীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। বর্তমান শাসকদল আবার ক্ষমতায় ফিরে এলে আরও কী শাস্তি অপেক্ষা করছে, সেটাই এখন দেখার।’’

অনেক পুলিশকর্মীর মতে, এ বার ভোটে কমিশনের কতটা কড়া নজরের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে, তা হয়তো মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পারছেন না। বর্ধমানের এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘ঘনঘন ফোন, এসএমএস আসছে অফিসারদের কাছে। কথা না শুনলেই বদলি হতে হবে, সেই আশঙ্কাও তো রয়েছে।’’ আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এক কর্তার মতে, পুলিশ পুলিশের কাজই করেছে। কিন্তু ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা এমন চেপে বসেছে যে পুলিশের কাজও সন্দেহের চোখে দেখছেন তৃণমূল নেত্রী। কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পুলিশ এখন কমিশনের আওতায়। তাই যে যাই বলুন, কিছু যায়-আসে না। এটা মাথায় রেখেই কাজ করছে পুলিশ’’

মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পরে আশঙ্কা তো দূর, পুলিশ মহল থেকে বেরিয়ে আসছে অসন্তোষের ছবিই।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy