‘ভিভিএস’ বললে লোকে লক্ষ্মণ বোঝে।
‘ভিএস’ বললে বোঝে অচ্যুতানন্দন।
কিন্তু ‘ডিভিএস’?
সুপরিচিত ব্যক্তি। এটা তাঁর ‘কোড নেম’। আসলে তাঁর কথা আলোচনার সময় চিকিৎসকেরা তো প্রকাশ্যে তাঁর নাম বলতে পারেন না। তাতে বিপদ আছে। তাই গোটা স্বাস্থ্য দফতরে ওই ‘কোড নেম’ চলছে। ‘দিদির ভয়াবহ সন্তান’, ছোট্ট করে ‘ডিভিএস!’
সর্বত্র পোস্টারে-ব্যানারে তিনি ‘দিদির আশীর্বাদধন্য!’ তাঁর প্রতি কথাতেই ‘দিদি।’ নিজে বলে বেড়ান, কালীঘাটের বাড়িতে রাতে দিদি একটা রুটি খেলে অর্ধেকটা নাকি এই প্রিয় ভাইকে ছিঁড়ে দেন!
দিদির রুটির ভাগ পান বলেই তো কুকুরের ডায়ালিসিস পিজি হাসপাতালে করানোর নির্দেশ দেওয়ার বিরল ক্ষমতা রাখেন তিনি। বিভিন্ন হাসপাতালে ছোট-বড়-মাঝারি কর্তারা সিঁটিয়ে থাকেন, এই বুঝি তাঁর ফোন এল! ঘনিষ্ঠরা বলেন, আসলে তিনি একটু রগচটা! তাই রেগে গেলে ভাষাটাষার আগল, ছোটবড় জ্ঞান অত থাকে না। তবে তাঁর ভিতরে নাকি একটা ‘সহমর্মী মন’ আছে। সেই জন্যই যাঁরা পড়াশোনার সময় পাননি, তাঁরা যাতে এমবিবিএস-এ দেদার টুকে ডাক্তার হয়ে যেতে পারেন, সেই আয়োজনে তিনি ত্রুটি রাখেন না। তাঁর নিজের ছেলের মেডিক্যাল পরীক্ষা চলার সময়েও সেই ‘দরদী’ মন নিয়েই সিসিটিভি বন্ধ রাখারনির্দেশ দেন।
কী মনে হচ্ছে? ‘ডিভিএস’ জিতে যাবে? কিছু দিন ধরে স্বাস্থ্যভবনে গেলেই গেটের নিরাপত্তারক্ষী থেকে উঁচু পদের অফিসার, ফিসফিস করে সকলের একই প্রশ্ন। তিনি তো নিজে সর্বত্র বলে বেড়াচ্ছেন, ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জিতে নাকি রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হবেন! কেউ নাকি ঠেকাতে পারবে না। তখন স্বাস্থ্য দফতরের শুধু তিনিই-তিনি। সর্বনাশ! স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়! এখনই তো হাতে মাথা কাটেন, ‘ডিভিএস’ মন্ত্রী হলে তখন কী হবে? চাকরি ছাড়তে হবে না কি?
জোরকদমে ভোটের প্রচার শুরু হওয়ার আগে এই সে দিন পর্যন্ত ‘ডিভিএস’ রোজ নিয়ম করে বিকেলের দিকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের ঘরের লাগোয়া তাঁর এসি অ্যান্টিচেম্বারে বসতেন। ‘দুষ্টু’ লোকেরা বলে, সেখান থেকেই যাবতীয় মেডিক্যাল কলেজ, ডাক্তারি সংগঠন, নার্সদের সংগঠন এবং স্বাস্থ্যভবনে তাঁর ছড়ি ঘোরাতেন। কাকে ‘টাইট’ দিতে কোথায় বদলি করতে হবে, সুনজরে পড়া কাকে কোথায় ‘ভাল’ জায়গায় আনতে হবে, সেই অঙ্গুলিহেলনও ওই ঘরে বসেই হতো। মেডিক্যালের ডাক্তারদের একটা বড় অংশেরও তাই এখন মূল জিজ্ঞাস্য, ‘‘ডিভিএস কি জিতবেন? মেডিক্যালের জন্মটাকেই উনি নিজের লেখায় ‘সাসপিশাস’ বানিয়ে দিয়েছিলেন। উনি এ বারেও জিতলে আমাদের হালটা কী হবে সেটা এখন একটা হাইলি সাসপিশাস ব্যাপার!’’
উলুবেড়িয়া উত্তর কেন্দ্রে নির্মল মাজিকে ফের প্রার্থী করা নিয়ে দলের ভিতরেও অভিযোগের অন্ত নেই। এলাকার তৃণমূল কর্মীদের একটা বড় অংশই বিদ্রোহ করে বলেছিল, ‘‘উনি ভিনডিকটিভ। ওর সঙ্গে সুস্থ লোক থাকতে পারে না। সাংঘাতিক খারাপ ব্যবহার। তেমন জঘন্য জনসংযোগ।’’ আপত্তিতে অবশ্য ‘দিদিধন্য’ ভাইয়ের কোনও অসুবিধা হয়নি। ‘বিদ্রোহী’রা ঢোক গিলে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু আগ্নেয়গিরি যে ফুটছে, তা টের পাচ্ছেন তিনি নিজে। বিদ্রোহী মহলের কথায়, ‘‘ভয় পেয়ে অন্তত ২৫টা বুথে ছাপ্পা চালাতে নির্মল এখন মরিয়া।’’
নিজের কেন্দ্রে কতটা কাজ করেছেন নির্মল? দলীয় কর্মীদের একাংশ ক্ষিপ্ত গলায় অভিযোগ করেন, কাজ তো নয়, শুধু নিজের আখের গোছানো আর কর্মীদের সঙ্গে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে গিয়েছেন। সাধারণ মানুষ মূলত হাসপাতালে ভর্তির জন্য তাঁর সাহায্য চাইতে যান। তাঁদের সঙ্গে একই রকম দুর্ব্যবহার করেন। সব সময় দাবি করেন, ডিএম থেকে এসপি, সকলের নিয়োগ আর বদলি নাকি তাঁর হাতে।
উলুবেড়িয়ায় তৃণমূলের এক নেতা উত্তেজিত হয়ে বলছিলেন, ‘‘সব জায়গায় দিদির নাম করে চমকানি। ওঁর জন্যই উলুবেড়িয়ায় তৃণমূল ভেতরে ভেতরে টুকরো হয়ে গেছে। উনি যে আদতে কী জিনিস, সেটা দিদি এখনও বুঝলেন না। এটাই আক্ষেপ। বিভিন্ন জায়গায় সভা করে বলছেন, জিতে এলে বিদ্রোহীদের নাকি ‘ঝাড়েবংশে নির্বংশ’ করবেন। দেখা যাক, আমরাও বসে নেই।’’
দলেরই একটা বড় অংশ যখন তাঁর বিরুদ্ধে, সেখানে নিজের জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী তিনি? প্রশ্নটা করতেই ‘‘আনন্দবাজারের সঙ্গে কোনও কথা নয়’’ বলে খটাশ করে ফোনটা নামিয়ে রাখেন নির্মল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy