Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

এ বার চন্দন-সিন্ডিকেটের দিকে আঙুল মোদীর

দক্ষিণে যদি হয় ইমারতি সিন্ডিকেট, উত্তরে তবে সিন্ডিকেট রক্তচন্দনের। আলিপুরদুয়ারের রাজনীতি বরাবরই এই সিন্ডিকেট ঘিরে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে উত্তাল। কালচিনি বিধানসভায় তৃণমূল যাঁকে প্রার্থী করেছে, সেই উইলসন চম্প্রমারির বিরুদ্ধেও অনেকে আঙুল তোলেন।

উইলসন চম্প্রমারি

উইলসন চম্প্রমারি

নমিতেশ ঘোষ ও নারায়ণ দে
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১৪
Share: Save:

দক্ষিণে যদি হয় ইমারতি সিন্ডিকেট, উত্তরে তবে সিন্ডিকেট রক্তচন্দনের। আলিপুরদুয়ারের রাজনীতি বরাবরই এই সিন্ডিকেট ঘিরে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে উত্তাল। কালচিনি বিধানসভায় তৃণমূল যাঁকে প্রার্থী করেছে, সেই উইলসন চম্প্রমারির বিরুদ্ধেও অনেকে আঙুল তোলেন। বৃহস্পতিবার বীরপাড়ায় সভায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রক্তচন্দন সিন্ডিকেটের কথা তুলে ফের সেই বিতর্ক উস্কে দিলেন।

মোদী বলেন, “রাজ্য জুড়ে সিন্ডিকেট জাল ছড়াচ্ছে। এমন ভাবে যে মনে হচ্ছে, সিন্ডিকেটের নামে সব অফিসারকে দাবিয়ে রাখা হয়। নির্বাচন কমিশনকে শুভেচ্ছা জানাই, চন্দন কাঠের গাড়ি এখান থেকে ধরেছে। যা থেকে জানা গিয়েছে, হাজারো কোটি টাকার চন্দন কাঠ পাচার হচ্ছে। লুটেরা সব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। কোটি কোটি টাকার বেআইনি কারবার চলছে। এটা চলতে পারে না।”

কী এই রক্তচন্দন সিন্ডিকেট?

রক্তচন্দন মূলত উৎপাদন হয় দক্ষিণ ভারতে। তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্রপ্রদেশ— এই তিনি রাজ্য থেকে রক্তচন্দন চোরাপথে চলে আসে আলিপুরদুয়ারে। এখানে কালচিনি, মাদারিহাটের বিভিন্ন সুপুরি বাগানে ওই চন্দনকাঠ মজুত করে রাখা হয়। পরে তা সুযোগ বুঝে জয়গাঁ হয়ে ভুটানে পাচার করা হয়। সেখান থেকে তা তিব্বতেও যায়। তার পরে ছড়িয়ে পড়ে চিনের অন্যত্রও। ওখানকার বাজারে এর দাম কোটি টাকা। ওই কাঠ মজুত করে রাখা ও পাচারের কাজে একটি চক্র জড়িত রয়েছে। যারা পুলিশ, প্রশাসন, বনকর্মীদের একাংশ থেকে শাসক দলের নেতাদের অনেকের সঙ্গেও যোগসাজশ তৈরি করেছে বলে অভিযোগ। এর ফলে ওই কাঠ পাচারে কোনও বাধার মুখে পড়তে হয় না তাদের। এক বছর আগে বহু কোটি টাকার চন্দন কাঠ উদ্ধারের পরে তা নিয়ে চাপানউতোর আরও বেড়েছে।

তৃণমূল আমলের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন অবশ্য রক্তচন্দন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকেই দুষছেন। তাঁর প্রশ্ন, রক্তচন্দন গাছ বাংলায় হয় না। মধ্যপ্রদেশ-সহ বাইরের রাজ্যে তা হয়। সেখান থেকে এতটা রাস্তা ওই কাঠ আসছে কী করে? তিনি বলেন, “বাংলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে এ কথা ভাবুন প্রধানমন্ত্রী। ওই সব রাজ্যে কেন ওই কাঠ ধরা হচ্ছে না?”

বনাধিকারিকরা কয়েক জন জানান, বছর দেড়েক আগে অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা সৌরেন্দ্র রাজনকে গ্রেফতার করে সে রাজ্যের পুলিশ। তার পরেই জানা যায়, কালচিনির সাতালি এলাকায় রয়েছে রক্তচন্দনের পাচারের মূল আখড়া। কখনও সিমেন্টের ট্রাকে, কখনও অন্য পণ্য সামগ্রীর মধ্যে করে রাতের অন্ধকারে বীরপাড়া বা কালচিনির সাতালি এলাকায় চলে আসতো তা। তার পরে সেই কাঠ পুকুরের জলে চুবিয়ে রাখা হতো বা গর্ত খুঁড়ে প্লাস্টিক মুড়ে তা মাটি চাপা দেওয়া হতো।

বছর খানেক আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি নোট পাঠায় নবান্নয়। তাতে বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারির পরিবারের নামের উল্লেখ ছিল বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। তার পর পশ্চিম সাতালি এলাকায় আধা সামরিক বাহিনী অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে কোটি টাকার রক্তচন্দন। যাঁদের বাড়ি থেকে ওই কাঠ উদ্ধার হয়, তাঁদের দাবি ছিল— চম্প্রমারির পরিবারের লোকেরা ওই চন্দন রাখতে বলে তাঁদের। সে জন্য টাকাও দেয়। সম্প্রতি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ জানান, রক্তচন্দন নিয়ে তিনি কেন্দ্রের কাছে সিবিআই তদন্তের দাবি করবেন।

কালচিনির বিদায়ী বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারি অবশ্য গুরুঙ্গের দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকী, পরোক্ষে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকেও। তিনি বলেন, ‘‘গুরুঙ্গকে আমি গুরুত্ব দিই না। প্রধানমন্ত্রীও আমার বিরুদ্ধে যে কোনও তদন্ত করতে পারেন। সে জন্য আমি প্রস্তুত।’’ একই সঙ্গে তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। এই রক্তচন্দন পাচারের সঙ্গে আমার কোন যোগাযোগ নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy