Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

পুরসভা নিয়ে আশ্বাস নেই মুখ্যমন্ত্রীর, হতাশ বাসিন্দারা

মালদহের চাঁচলে এসে ঘোষিত পুরসভা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মুখ না খোলায় হতাশ শহরের বাসিন্দারা। চাঁচলকে পুরসভা করা হল বলে দু’বার ঘোষণা হয়েছে। একবার বামেরা, দ্বিতীয়বার তৃণমূল সরকার। কিন্তু ঘোষনা পেয়েই খুশি থাকতে হয়েছে চাঁচলকে। পুরসভা আর হয়নি।

চাঁচলে সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।

চাঁচলে সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০১
Share: Save:

মালদহের চাঁচলে এসে ঘোষিত পুরসভা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মুখ না খোলায় হতাশ শহরের বাসিন্দারা। চাঁচলকে পুরসভা করা হল বলে দু’বার ঘোষণা হয়েছে। একবার বামেরা, দ্বিতীয়বার তৃণমূল সরকার। কিন্তু ঘোষনা পেয়েই খুশি থাকতে হয়েছে চাঁচলকে। পুরসভা আর হয়নি।

সোমবার নির্বাচনী জনসভায় চাঁচলে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বাসিন্দারা আশা করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত পুরসভা নিয়ে কিছু বলবেন। কিন্তু চাঁচল পুরসভা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী একটি শব্দও খরচ না করায় হতাশ বাসিন্দারা। মুখ্যমন্ত্রী ফিরতেই দু’বারের ঘোষিত পুরসভার প্রসঙ্গ ঘিরে জমজমাট চাঁচলের রাজনৈতিক আবহও। যদিও নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হবে বলে বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মুখ খোলেননি বলে দাবি তৃণমূলের।

জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা চাঁচলের তৃণমূল প্রার্থীর নির্বাচনী প্রতিনিধি মজিবর রহমানের দাবি, ‘‘বামেদের ঘোষণা গিমিক ছাড়া কিছু ছিল না। কিন্তু তৃণমূল চাঁচলকে পুরসভা যখন ঘোষণা করেছে তখন তা বাস্তবায়িতও হবে। নির্বাচনী নিধিভঙ্গ হতে পারে ভেবেই মুখ্যমন্ত্রী হয়ত পুরসভা নিয়ে কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে চাননি।’’

যদিও সেই দাবি মানতে রাজি নয় বিরোধীরা। কেননা ওই সভাতেই মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী চাঁচলে তৃণমূল সরকারের দৌলতে সুপার স্পেশালিটি হাপসাতাল করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীও রাজ্যে তৃণমূলের উন্নয়নের নানা খতিয়ান তুলে ধরেছিলেন। ফলে পুরসভাকে ঘিরে দীর্ঘদিনের যে প্রত্যাশা, তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী না হোক শুভেন্দুবাবু কেন প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেন কেন সেই প্রশ্নেও তরজা শুরু হয়েছে। জেলা সিপিএম সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘‘আমরা ক্ষমতায় ফিরলে পুরসভার বিষয়টি ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ থাকত না। কিন্তু তৃণমূল কেন ঘোষণার পরেও উদ্যোগী হয়নি সেটা জানতে ইচ্ছে করছে! কিছু না করেও উন্নয়নের কথা বলে তৃণমূল যে গলা ফাটাচ্ছে এটাও তার একটা জলজ্যান্ত উদাহরণ।’’

বিদায়ী কংগ্রেস বিধায়ক এবার জোটপ্রার্থী। তাই তাঁর বক্তব্যও সাবধানী। তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভায় অনেক গলা ফাটিয়েছি। বামেরা উদ্যোগী হলেও ক্ষমতায় ফিরতে পারেনি। কিন্তু ঘোষণার পরবর্তী দুবছরে তৃণমূল করলটা কী?’’ চাঁচলের বিজেপি প্রার্থী দীপঙ্কর রাম বলেন, ‘‘চাঁচলের উন্নয়ন নিয়ে কেউই ভাবেনি। নানা সমস্যায় একটা শহর ধুঁকছে, অথচ ক্ষমতায় থেকেও সবাই হাত গুটিয়ে থেকেছে। আমরা সুযোগ পেলে করে দেখাতাম।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ১৬ জুলাই বামেদের ঘোষিত ১৩টি পুরসভার মধ্যে ছিল চাঁচলও। ২০১৪ সালের ১১ জুন তৃণমূল সরকারও চাঁচলকে ফের পুরসভা করা হল বলে ঘোষনা করায় আশার আলো দেখতে শুরু করেন বাসিন্দারা। কিন্তু পুরসভা গঠন সেই তিমিরেই। পুরসভা না হওয়ায় মহকুমা সদর হয়েও চাঁচল শহর এখনও গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে। ফলে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা।

অথচ দেড় দশক আগে ২০০১ সালের ১ এপ্রিল চাঁচল মহকুমা গঠনের পর থেকেই চাঁচল পুরসভার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন বাসিন্দারা। তারপরেই ২০০৫ সালে প্রশাসনের তরফে ১০টি মৌজা নিয়ে চাঁচলকে পুরসভা করার উদ্যোগ শুরু হয়। পুরসভা করতে যেখানে কমপক্ষে ২০ হাজার জনসংখ্যা থাকা দরকার সেখানে প্রস্তাবিত চাঁচল পুরসভায় ২০০১ সালের গণনা অনুসারে জনসংখ্যা ৪২৮৭৯। সেই সংখ্যা এখন আরও কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু রাস্তা থেকে শুরু করে পানীয় জল, যানজট থেকে জঞ্জাল, পথবাতি, সবেতেই মহকুমা সদরের বাসিন্দা হয়েও সমস্যায় নাজেহাল হতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। কেননা পঞ্চায়েতের পক্ষে মহকুমা সদরের পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয় তা প্রশাসনের কর্তারাই জানাচ্ছেন। তারপরেও চাঁচলে এসে পুরসভা প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মুখ না খোলায় প্রচারে তৃণমূলকে বিঁধছে বিরোধীরা। দেড় দশকে বামেরাই বা কী করেছে তা নিয়ে পাল্টা বিঁধছে তৃণমূলও।

নির্বাচনের মধ্যে প্রশাসনের কোনও কর্তাই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, পুরসভার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সব কিছুই রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো রয়েছে। ফলে পুরোটাই এখন রাজ্য সরকারের উপরে নির্ভর করছে।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy