খড়্গপুর গ্রামীণের প্রার্থী দীনেন রায়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
কলকাতায় উড়ালপুল ভেঙে পড়ায় ক’দিন আগে বাতিল হয়ে গিয়েছিল সভা। খড়্গপুর (গ্রামীণ) বিধানসভা সেই নির্বাচনী প্রচার সভাই বৃহস্পতিবার করে গেলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিন আসতে না পারায় ক্ষমাও চেয়ে নিলেন। সেই সঙ্গে তৃণমূলকে জেতাতে কাতর আর্তি জানালেন। মমতার কথায়, “আমার প্রতি ভরসা থাকলে এই আসনটি এ বার আপনারা দয়া করে তৃণমূলকে দেবেন। জঙ্গলমহলের মানুষ শান্তির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। আমরা গর্বিত। আপনারাও শান্তির পক্ষে ভোটে দেবেন। আর সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপির ঠিকানাটা হারিয়ে দেবেন। পারমানেন্টলি। যাতে কোনও দিন (ভোট) আর চাইতে না আসে!”
খড়্গপুর (গ্রামীণ) কেন্দ্রে ২০১১-র পরিবর্তনের ঝড়েও জিতেছিলেন বাম প্রার্থী। সংখ্যালঘু এই এলাকায় এ বার সিপিএমের প্রার্থী শাহজাহান আলি। সে দিক থেকে তৃণমূল প্রার্থী তথা দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের লড়াইটা কঠিন। এটা নেত্রীরও অজানা নয়। মমতাকে তাই এ দিন বলতে শোনা গিয়েছে, “যদি কেউ ভাবেন এখানে মুসলমান প্রার্থী আছে, আমাদের প্রার্থী হিন্দু। আমি এই ‘থিওরি’ মানি না। আগের বার আমরা বিলকিসকে (বিলকিস খানম) দিয়েছিলাম। কিন্তু সে জিততে পারেনি। পাশেই আমার ডেবরাতে সেলিমাকে (সেলিমা খাতুন) দেওয়া আছে। তার পাশে পাঁশকুড়াকে ফিরোজাকে (ফিরোজা বিবি) দেওয়া আছে। আমাদের আগে সংখ্যালঘুদের সিট ছিল মাত্র ৩৭টি। এ বার বেড়ে প্রায় ৫৭টি হয়েছে। এবং ভাল ভাল সিটগুলোতে দেওয়া হয়েছে, হারা সিটে নয়।”
এ দিন দুপুর তিনটে নাগাদ হেলিকপ্টার থেকে মমতা যখন নামলেন, দরদর করে ঘামছেন। মঞ্চে উঠে নিজেই টেবিল থেকে মাইকটা তুলে নিলেন। মাইকের শব্দ বিশেষ জোর না হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে দীনেনবাবুকে নির্দেশ, “মাইকটা একটু জোরে দিতে বল তো।” ভলিউম বাড়তে মমতা বললেন, “প্রচণ্ড তাপ। গতকাল চারটে মিটিং করেছি। আজকেও আমি পাণ্ডবেশ্বর, রানিগঞ্জ হয়ে এখানে এসেছি। এই মিটিংটা আমার বাদ হয়েছিল। যে দিন আসার কথা ছিল সেদিন একটা সেতু ভেঙে গিয়েছিল বলে আমায় চলে যেতে হয়েছিল। জানেন তো একটা মিটিং নষ্ট হয়ে গেলে অ্যাডজাস্ট করে দেওয়া খুব মুশকিল হয়ে যায়।” আগে খড়্গপুর গ্রামীণের সভাটি হওয়ার কথা ছিল কলাইকুণ্ডায়। এ দিন সভা হল চুয়াডাঙায়।
সারদা-নারদ নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ চলছেই। এ দিন সে সব প্রসঙ্গ মুখে না আনলেও মমতা বলেন, “কেউ কেউ নানা রকম কথাবার্তা এর-ওর নামে বলে বেরায়। রটিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আমি এখানকার মা-ভাই-বোনেদের একটা কথাই বলতে এসেছি, যদি আপনাদের আমার প্রতি কোনও ভরসা থাকে, তাহলে আর সিপিএমকে জেতাবেন না। এটা আমার আপনাদের কাছে আবেদন থাকবে।”
এ দিন বারবার জোটকেও বিঁধেছেন তৃণমূল নেত্রী। বলেছেন, “সিপিএমের কী হয়েছে জানেন তো? ঠিকানাটাই হারিয়ে গেছে। তাই কংগ্রেসের কাঁধে উঠেছে। কিন্তি কংগ্রেস কাঁধ ছেড়ে পালাবে। সিপিএমকে জিজ্ঞেস করুন, তোমার ঠিকানা কী? বলবে কংগ্রেস জিন্দাবাদ। কংগ্রেসকে জিজ্ঞেস করুন, তোমার ঠিকানা কী? বলবে সিপিএম জিন্দাবাদ। সিপিএম এখন কংগ্রেসকে বলছে, পায়ে ধরি রে মেলা থেকে ভোট এনে দে। লজ্জা করে কংগ্রেস দলটা এক সময় আমরা করতাম।”
মিনিট পঁচিশের বক্তৃতা শেষে হেলিকপ্টারে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন মমতা। দীনেনবাবুদের চোখ চলে যায় আকাশে। প্রার্থী হিসেবে নাপসন্দ হওয়ায় দলেই বিস্তর ক্ষোভের মুখে পড়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি। লড়াইটা কি বেশ কঠিন? খড়্গপুর গ্রামীণের তৃণমূল প্রার্থীর জবাব, “উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে মানুষ তৃণমূলকেই সমর্থন করবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যই হল বাংলাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। গ্রামবাংলার উন্নতি করা। সভার ভিড়ও প্রমাণ করে দিয়েছে, মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আছেন!”
নেত্রীই ভরসা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy