মুখ্যমন্ত্রীর সভায় তৃণমূলে যোগ দিলেন বেশ কয়েকজন তারকা। বুধবার সাহাগঞ্জে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
গত লোকসভা নির্বাচনে হুগলি কেন্দ্র হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। আরামবাগে কোনও মতে মুখরক্ষা হয়েছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে হুগলির মোট ১৮টি কেন্দ্রই জেতার জন্য তিনি যে কতটা মরিয়া, বুধবার ডানলপের জনসভায় এসে সেটাই বুঝিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিন মানুষের মন জিততে কখনও তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে দোষত্রুটি সংশোধনের অঙ্গীকার, কখনও তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে হুগলি-যোগের কথা স্মরণ করেছেন, কখনও শুনিয়েছেন জেলার জন্য উন্নয়নের ফিরিস্তি। এমনকি, ভোট চাইতে তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে ‘প্লিজ’ও! যা সচরাচর মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা যায় না।
লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৮টিতে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। তার মধ্যে পাঁচটিই (সিঙ্গুর, বলাগড়, চুঁচুড়া, পান্ডুয়া ও সপ্তগ্রাম) হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে। মোট ১২টি কেন্দ্রের নাম করে এ দিন মমতা মহিলাদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে কিছু কেন্দ্রে পিছিয়ে থাকায় আমার দুঃখ হয়েছে। হয়তো আমাদের কোনও দোষত্রুটি ছিল। সেগুলো আমরা সংশোধন করে নিয়েছি। নেবও। যা হয়েছে ভুলে যান। যা যা আছে আমাদের দিন। বাংলাকে দিন। বাংলাকে বাঁচতে দিন।’’ এ সময়েই তাঁর মুখে শোনা যায়, ‘প্লিজ’ শব্দটি।
হুগলি জেলার সঙ্গে তাঁর নিবিড় যোগ প্রসঙ্গে তিনটি ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এক, মমতার দাবি, প্রয়াত আকবর আলি খন্দকার তৃণমূলের জেলা সভাপতি থাকাকালীন গুপ্তিপাড়ায় একটি দৃষ্টিহীন ছেলে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন। মমতা আইনজীবীর গাউন পরে চুঁচুড়া আদালতে লড়াই করে মৃতদেহ ছেলেটির বাবার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। দুই, দাদপুরে এক কৃষক পরিবারের ছ’মাসের বাচ্চাকে সিপিএম ছুড়ে ফেলে মেরেছিল, এই অভিযোগ করে তিনি জানান, তিনি ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। এ ছাড়াও রাজবলহাটের একটি ঘটনার কথা বলেন।
প্রায় এক ঘণ্টা সভায় ছিলেন মমতা। শেষ পর্বে এই জেলায় তাঁর উন্নয়নমূলক কাজের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তার মধ্যে দ্বারকেশ্বর-মুণ্ডেশ্বরীতে সেতু, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, আরামবাগ মাস্টারপ্ল্যান, ব্যান্ডেল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পঞ্চম ইউনিট তৈরি, হ্যান্ডলুম, প্লাস্টিক, এমব্রয়ডারি এবং ঝুটো গয়নার ‘ক্লাস্টার’-এর কথা বলেন।
মমতা জানান, শিল্প সম্মেলন থেকে এখানে ১৩ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে। ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘সি-ফুড’ এবং ‘ফিশ-প্রসেসিং ইউনিট’ তৈরি হচ্ছে। ৬০০ মানুষ কাজ পাবেন। সিঙ্গুরের জেলায় এসে নিজের ‘জমি আন্দোলনের ধাত্রীভূমি’র জন্য তিনি কী করেছেন, তা-ও জানাতে ভোলেননি মমতা। ছিল আরও নানা প্রসঙ্গ।
এমনকি, রেলমন্ত্রী থাকার সময়েও তাঁর হাত ধরে এই জেলায় কী এসেছে, মমতা ছুঁয়ে গিয়েছেন সে কথাও। যেমন, ডানকুনিতে রেলের কারখানা থেকে তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর লাইন, ডানকুনি থার্ডলাইন, ডানকুনি থেকে অমৃতসর ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের কাজ। তাঁর দাবি, ডানকুনি থেকে বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া হয়ে রঘুনাথপুর পর্যন্ত বড় শিল্পনগরী তৈরি হচ্ছে।
জেলার জন্য মমতার এই ‘উন্নয়ন’-এর দাবিকে বিরোধীরা বিঁধতে ছাড়ছে না। চাঁপদানির বিধায়ক তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের তোপ, ‘‘দশ বছরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করার সময় পেলেন না? এখন করবেন! সিঙ্গুরে কারখানা, ডানলপ খোলার ব্যবস্থা হল? দিল্লি রোডের ধারে বন্ধ কারখানা কোনটা খুলতে পেরেছেন? আসলে পরাজয়ের আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে উনি উল্টোপাল্টা বকছেন।’’
বিজেপি নেতা স্বপন পালের কটাক্ষ, ‘‘বেহাল হুগলি শিল্পাঞ্চলের দিকে মানুষ একবার তাকিয়ে দেখুন। তা হলেও মুখ্যমন্ত্রীর গালগল্প তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy