অবসরযাপনে বিদায়ী উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
‘ডন’ এখন মহাখুশি। খোদ মালিককে অনেকটা সময় কাছে পাওয়ার আনন্দে দিনভর লেজ নেড়ে চলেছে সে। মহানন্দে রয়েছে আরেক পোষ্য ‘গার্নার’ও। দিনের বেশিরভাগ সময় গৃহকর্তা বাড়িতে থাকায় স্বস্তিতে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েও। আর এই আপনজন ও পোষ্যদের নিয়ে মেতে থেকেই চোরা টেনশন এড়াচ্ছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব।
টেনশন এড়াতে ভরসা বাড়ির কাজকর্মও। কখনও ছাদে উঠে নিজের হাতে ফুলগাছ ছাঁটছেন। গত কয়েক মাসে অনাদরে নেতিয়ে থাকা জবাগাছ উপড়ে নতুন ডাল বসাচ্ছেন। আবার চড়া রোদের হাত থেকে হলুদ করবীকে বাঁচাতে গলদঘর্ম হচ্ছেন।
কিন্তু এত করেও কী মনের অন্দরের তোলপাড় পুরোপুরি বন্ধ হতে পারে?
পারে না। মানছেন গৌতমবাবুও। তাঁর কথায়, ‘‘আসলে এবার ভোটগ্রহণ ও গণনার দিনের মধ্যে এতটা ফারাক বলেই ধৈর্য্য রাখতে মুশকিল হচ্ছে। তার উপরে যে যেমন ইচ্ছে হিসেব বানিয়ে মোবাইলে ছেড়ে দিচ্ছে। কেউ আবার গোয়েন্দা সূত্র বলেও ভোটের হিসেবে, জোটের হিসেব, তৃণমূলের হিসেব বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে। উফস, এ সব দেখেশুনে কখনও বিরক্ত লাগছে। কখনও হাসি পাচ্ছে।’’ এর পরেই উত্তরবঙ্গের তৃণমূলের অন্যতম দাপুটে মুখ গৌতমবাবুর স্বগতোক্তি, ‘‘পাহাড়ের ব্যাপারটা আলাদা। উত্তরের সমতলে কিন্তু আগের চেয়ে আমাদের ফল ভাল হওয়ার কথা।’’
আশা তো করতেই হবে গৌতমবাবুকে। গত ৫ বছর ধরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর হাতে থাকার সুবাদে তিনিই তো ছিলেন প্রায় সব দফতরের কাজকর্মের অলিখিত ‘শেষ কথা’। কাজেই বালুরঘাটে ফল খারাপ হলে যেমন ‘নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র’ গড়া নিয়ে গড়িমসির অভিযোগ উঠতে পারে, তেমনই কোচবিহারে বিশ্ববিদ্যালয় হলেও কেন মেডিক্যাল কলেজ হল না কিংবা গজলডোবায় কেন পর্যটন কেন্দ্র গড়ার কাজ ঢিমেতালে তা নিয়েও খোঁচা দিতে পারেন দলের অনেকে।
কিন্তু, বিস্তর রাস্তাঘাট, একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ভবন, সেতু, কালভার্ট, স্পোর্টস কমপ্লেক্স তৈরির পরেও কেন ফল খারাপ হবে সেই হিসেবটা গৌতমবাবুর অনুগামীরা বুঝতে পারছেন না। বাড়িতে বসে তা নিয়ে খোঁজখবরও নেন গৌতমবাবু। মাস চারেক আগে বাইপাস সার্জারি হওয়ায় কিছুটা সাবধানে থাকার কথা মন্ত্রীর। সকাল থেকে রাতের মধ্যে গোটা ছয়েক ওষুধ খেতে হয়। খাওয়া-দাওয়ায় নানা সতর্কতা। ফলে জীবনযাপন অনেকটাই বদলে গিয়েছে তাঁর।
গৌতমবাবুর শিলিগুড়ির কলেজপাড়ার বাড়ির পৌষ্য হল ‘ডন’। কলকাতায় বালিগঞ্জে মন্ত্রীর আবাসনে গেলে দেখা মেলে দশাসই ‘গার্নারের’। শিলিগুড়ির বাড়ির ছাদ ভর্তি ফুলের টব থাকলেও গত তিন মাস সে দিকে তাকানোর সময় পাননি। এখন ভোটের ফলের আগে কিছুটা সময় মেলায় ফুলচাষির ভূমিকাতেও দেখা যাচ্ছে তাঁকে। আবার কলকাতার বাড়িতে গিয়ে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ছেলের জন্য প্রাইভেট টিউটর ঠিক করতে ছোটাছুটি করতেও দেখা যাচ্ছে তাঁকে। তিনিই জানালেন, মেডিক্যাল কলেজে ফাইনাল ইয়ার চলছে মেয়ের। তাই তাঁকে নিয়ে আর চিন্তার তেমন কিছু নেই।
পরিবার-পরিজন ও পোষ্যদের নিয়ে মেতে থাকার চেষ্টা করলেও পিছু ছাড়ে না ‘টেনশন’। তাই মাঝেমধ্যেই বেড়ে যায় রক্তচাপ। ক’দিন আগেই জল্পেশে গিয়ে পুজো দিয়েছেন। মন্দির লাগোয়া এলাকায় তাঁর দফতর যে অতিথি নিবাস বানিয়েছে, সেখানে একটা রাত কাটিয়ে ‘শান্তি’ও পেয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy