কেন্দ্রের জোট প্রার্থী কংগ্রেসের। কিন্তু অনেক বুথেই তাঁর এজেন্ট নেই। কিন্তু সেই সব বুথে ডামি প্রার্থী এবং এজেন্ট দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখল সিপিএম।
আপাত নিস্তরঙ্গ বালিগঞ্জ কেন্দ্রে জোটের এই ‘ঐক্য’ই ছিল দেখার মতো। আশিস সরকার নামে ওই নির্দল প্রার্থী যে সিপিএমের সক্রিয় সমর্থক, তা দলীয় কর্মীদের কথাতেই স্পষ্ট। একই কথা উঠে এসেছে কেন্দ্রের ওজনদার তৃণমূল প্রার্থী ও বিদায়ী মন্ত্রী প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্যেও। সুব্রতবাবু বলেছেন, ‘‘আমার কেন্দ্রে কংগ্রেস কোথায়? আসলে সিপিএম-ই এখানে বকলমে আমার বিরুদ্ধে লড়ছে।’’
এ রকমই একটি বুথে কংগ্রেস প্রার্থী কৃষ্ণা দেবনাথের এজেন্ট কে? যাঁর বুকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নাম, তিনি বেজার মুখে বললেন, ‘‘আরে জোট হয়েছে যে! কংগ্রেসের এজেন্ট নেই তো কী হয়েছে? এই যে, ইনি, ইনি আছেন।’’ এ কথা বলে তাঁর ডান দিকে বসা এক জনকে দেখালেন। যাঁকে দেখালেন, তিনি আশিস সরকার নামে এক নির্দল প্রার্থীর এজেন্ট। মানে, কৃষ্ণাদেবীর ডামি প্রার্থীর।
পার্ক সার্কাসের কাছে গোরাচাঁদ রোডের আলবেনি হল পাবলিক স্কুল। ওই ভোটকেন্দ্রের ২১ নম্বর বুথে বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের জোটপ্রার্থী কংগ্রেসের কৃষ্ণা দেবনাথের এজেন্ট ছিলেন না। ২২ ও ২৪ নম্বর বুথেও একই অবস্থা। কিন্তু বুথের মধ্যে স্নায়ুর লড়াইয়ে এক ইঞ্চিও জমি তৃণমূলকে না ছাড়া নিশ্চিত করতে ছিলেন যে এজেন্টরা, তাঁরা ওই আশিস সরকারের। যাঁকে সিপিএম নিজেদের সক্রিয় সমর্থক বলে দাবি করছে।
ভোটের ফল কী হবে, সেটা পরের কথা। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে জোটটা করা, অর্থাৎ তৃণমূলকে উৎখাত করার
লক্ষ্যে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস একে অপরের দুর্বল জায়গা ঢাকবে একে অপরের শক্তি দিয়ে, সেটা অন্তত বুথের ভিতরকার লড়াইয়ে এ দিন জোট দেখিয়ে দিল বালিগঞ্জে।
বেনিয়াপুকুর রোডের ইসলামিয়া হাইস্কুলের ১ এবং ২ নম্বর বুথ, মনোহরপুকুর রোডের দেশবন্ধু শিশু শিক্ষালয়ের ২৮৬ নম্বর বুথের মতো জায়গায় কংগ্রেসের এজেন্ট ছিলেন না ঠিকই, কিন্তু সিপিএমের সরবরাহ করা ডামি প্রার্থীর এজেন্ট ছিলেন। যাঁরা কৃষ্ণা দেবীর এজেন্ট হিসেবেই কাজ করেছেন, বুথ আগলেছেন।
যে কারণে দুপুর ১২টা নাগাদ ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডে, বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের পিছনে পেয়ারাবাগান বস্তির কাছে প্রচুর লোক জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে কৃষ্ণা দেবনাথ ছুটে গেলে সেখানে শুধু কংগ্রেসের মানিলা চৌধুরী হাজির হন না, প্রবীণ সিপিএম নেতা, দলের পদ্মপুকুর-পূর্ব লোকাল কমিটির সদস্য পূর্ণেন্দু দাসও পৌঁছে যান তড়িঘড়ি। মানিলার সঙ্গে তিনিও কৃষ্ণাদেবীকে আশ্বাস দেন, ‘‘চিন্তা করবেন না, দেখছি।’’ কংগ্রেস প্রার্থীও বললেন, ‘‘বুথে, বুথের বাইরে সিপিএম প্রচুর সহায়তা দিচ্ছে।’’
সকালে মডার্ন হাইস্কুল, ন্যাশনাল হাইস্কুল ফর গার্লস ও মহাদেবী বিড়লা শিশু বিহারে যখন ‘বহিরাগত’ বলে কংগ্রেসের এজেন্টদের বার করে দেওয়ার চেষ্টা করে তৃণমূল, সেই সময়ে সরব হন কৃষ্ণাদেবীর ‘ডামি’ প্রার্থীর এজেন্টরা, মানে সিপিএমের লোকজনও। সিপিএমের একটি সূত্রের খবর, কংগ্রেসের ‘সরকারি’ এজেন্টদের প্রায় ৩৫ শতাংশ তাদেরই সরবরাহ করা আর ডামি প্রার্থীর অন্তত ৮০ শতাংশ এজেন্টও তাদের।
অথচ গত ২১ এপ্রিল এন্টালি কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী দেবেশ দাস আক্ষেপ করছিলেন, কংগ্রেসের কাছ থেকে যতটা সহায়তা তিনি আশা করেছিলেন, ততটা পাচ্ছেন না।
কিন্তু বালিগঞ্জে যেখানে জোটের প্রার্থী কংগ্রেসের, সেখানে কোন মন্ত্রবলে তাদের সঙ্গে সিপিএম এতটা কাঁধ মিলিয়ে লড়ল?
সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির সদস্য ও বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে বামফ্রন্টের নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, দলীয় বা বামফ্রন্টের প্রার্থী দাঁড়ালে দলের কর্মীরা যত পরিশ্রমী হয়ে কাজ করতেন, কংগ্রেস প্রার্থীর ক্ষেত্রেও ততটা করতে হবে বলে তাঁদের বোঝানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল গণ সংগঠনগুলোকেও।
সিপিএম সমর্থক কাজী আবুল হাসানকে শুক্রবার ভোট দিতে নিষেধ করে হুমকি দেওয়া হলেও তিনি কলকাতা পুরসভার স্কুলে ভোট দেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘জোট হয়েছে বলেই ভোট দেওয়ার সাহসটা পেয়েছি।’’
আর সিপিএম নেতা গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘২৭ এপ্রিল পার্ক সার্কাসে কংগ্রেসের সভায় রাহুল গাঁধীর সঙ্গে এক মঞ্চে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উপস্থিতি বালিগঞ্জ কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে কাজ করতে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়তি উৎসাহ জুগিয়েছে।’’
সেই উৎসাহদাতা নিজেও বালিগঞ্জ কেন্দ্রের ভোটার। পাম অ্যাভিনিউয়ের পাঠভবন স্কুলের প্রাথমিক শাখার ১৫৫ নম্বর বুথে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সস্ত্রীক ঢুকলেন দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে। এই কেন্দ্রে তো সিপিএম প্রার্থী নেই, তা হলে আপনার পছন্দ কি কংগ্রেস? প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘সেটা গোপনীয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy