বাড়ির পাশে পড়ে রয়েছে প্লাস্টিকে মোড়া থান, বোমা।—নিজস্ব চিত্র
নিতান্তই নিরীহ একটা প্লাস্টিকের প্যাকেট। ভিতরে সাদা থান আর সুতলি পাকানো নারকেলের মতো কী একটা। প্লাস্টিকের উপরে লেখা:
‘অংকুশ ও রবি = ২
তোর ছেলের জন্য (১৯)’
এ যেন সেই ধাঁধাঁ— ‘ত্রিনয়ন ও ত্রিনয়ন এট্টু জিরো’, যা দেখে ফেলুদা মগজাস্ত্র খাটিয়ে পেয়ে যাবে একটা নম্বর— 39039820!
বুধবার সকালে নদিয়ার চাকদহে সিপিএম কর্মীর বাড়ির পাশে পাওয়া প্যাকেটটি নিয়ে অবশ্য তত জটিলতা নেই। পাটের সুতলি পাকানো বস্তুটির ডাকনাম ‘পেটো’, ভাল নাম ‘বোমা’।
আর সাদা থান মানে, সাধারণত বিধবারা যা পরেন। কোনও সধবাকে তা দেওয়ার অর্থ সিপিএম অনেক দিন আগেই রাজ্যকে সমঝে দিয়ে গিয়েছে।
একটা সময় ছিল যখন কেশপুর, গড়বেতা, পটাশপুরের মতো এলাকায় সিপিএমের মাস্তানেরা বাড়ির কড়া নেড়ে গৃহকর্ত্রীর হাতে তুলে দিত সাদা
থান— ‘‘দাদাকে এট্টু সামলে রাখবেন। দিনকাল ভাল নয়, কখন কী ঘটে! তখন আপনাকে এই থান পরতে হবে...।’’
ক্ষমতায় আসার মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে যারা সাড়ে তিন দশকের জুতোয়পা গলিয়ে ফেলেছে, তাদের হয়তো এখনও বাড়ি গিয়ে থান দিয়ে যাওয়ার হিম্মত হয়নি। তাই চাকদহের মদনপুরে
শিকারপুর বাজার এলাকায় বামেদের বুথ এজেন্ট রবীন্দ্রনাথ শীলের টিনের ঘরের পাশে পাওয়া গিয়েছে প্লাস্টিকে মোড়া ওই থান, বোমা আর ধাঁধা।
সেই ধাঁধা কী বলছে?
‘রবি’ মানে যে রবীন্দ্রনাথ, (ঠাকুর হোক বা চট্টোপাধ্যায় বা শীল) তা তো শিশুও বোঝে। কিন্তু ‘অংকুশ’?
‘‘আমার ছোট ছেলের ডাকনাম অঙ্কুর। ক্লাস টুয়েলভে পড়ে। কিন্তু খুব সক্রিয়। আমার সঙ্গে মিটিং-মিছিলে যায়, টুকটাক বক্তৃতাও করে। তাই ও চক্ষুশূল হয়েছে। নামটা একটু ভুল করে ফেলেছে’’— বলছেন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী রবীন্দ্রনাথ। তাঁর স্ত্রী বাসনাই প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখেছিলেন। তিনিও পার্টিকর্মী।
রবীন্দ্রনাথ সিপিএমের মদনপুর ৪ নম্বর শাখার সদস্য। গত ২১ এপ্রিল কল্যাণী কেন্দ্রে রামমোহন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৮৪ নম্বর বুথে সিপিএম প্রার্থী অলকেশ দাসের এজেন্ট ছিলেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল ছাড়া আর এ সব কারা করবে? কাদের এত সাহস আছে? ওরাই তো এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’’
তা নয় হল, কিন্তু (১৯) মানে কী?
রবীন্দ্রনাথের মতে, ‘‘সম্ভবত ১৯ মে। ভোটগণনার দিন। ভালমন্দ কিছু ঘটলে ওরা যে ছেড়ে দেবে না, এটাই জানিয়ে দিয়েছে!’’ ভোটের পর থেকে যে সব এলাকায় ধারাবাহিক ভাবে গোলমাল হয়েছে, চাকদহের মদনপুর তার অন্যতম। বাসনার আক্ষেপ, ‘‘সকালে ফুল তুলতে বেরিয়ে পেলাম থান আর বোমা। কার ভাল লাগে?“
ওই বাড়ি থেকে খানিকটা দুরে শক্তিপদ তরফদার নামে এক বিজেপি সমর্থকের মুদি দোকানের সামনেও এ দিন বোমা পাওয়া যায়। পথচলতি লোকজন সেটি দেখতে পেয়ে ভিড় করছিলেন। পুলিশ এসে দু’টি বোমাই নিষ্ক্রিয় করে। তবে রাত পর্যন্ত কাউকে তারা ধরতে পারেনি। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘সাদা থানের কথা আমার জানা নেই। তবে, বোমাগুলো কে বা কারা রেখেছিল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’ কল্যাণী ব্লক তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস বিশ্বাসও থান-বোমার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা এ সবে বিশ্বাস করি না। মানুষের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক, বোমার সঙ্গে আমাদের দলের সম্পর্ক নেই।’’
যেন প্রায় প্রবাদে পরিণত হওয়া ‘বোম মারুন’ কথাটা তৃণমূলের কেউ বলেননি। শোনেনওনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy