তৃণমূলের রোষে পুড়ছে গাড়ি। ধনেখালিতে। ছবি: তাপস ঘোষ।
মুখ্যমন্ত্রী হুমকি দিয়েছিলেন ‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে’ নেওয়ার। নেত্রীর সুর ধরে রেখেই ভোট শেষে বিরোধীদের উপরে হামলা শুরু করল তাঁর দলের কর্মীরা।
বিরোধীদের অভিযোগ, হুগলি জেলা জুড়ে তাঁদের দলের এজেন্টদের উপরে আক্রমণ শুরু করেছে তৃণমূল কর্মীরা। বিরোধীদের অভিযোগ পেয়ে ইতিমধ্যেই দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর পাশপাশি সোমবার আরামবাগ-বর্ধমান রোডে বাইশ মাইলের কাছে রাস্তার ধারে একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে পাঁচটি বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার রাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত আরামবাগের পুইন, বসন্তবাটি, রাংতাখালি, চাঁদুর, ঘরগোয়াল, বাছানরী, সালেপুর, গোঘাটের কামচে, চুঁচুড়া ও ধনেখালির একাধিক এলাকায় সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, মারধর, অগ্নিরকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গোঘাটের কামচে গ্রামে সিপিএম সমর্থকদের হাতে তৃণমূলের দুই মহিলা কর্মী জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়-সন্ত্রস্ত এলাকাগুলিতে টহলদারি চলছে।
সোমবার সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চোধুরী, দেবব্রত ঘোষ, মিতালি কোনার সহ সিপিএম নেতৃত্ব হামলা অধ্যুষিত এলাকায় কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে যান। সুদর্শনবাবুর অভিযোগ, “ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে তৃণমূল। পুলিশের সামনেই আমাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুঠপাট চলেছে। মহিলাদের এবং শিশুকে মারধর করেছে তৃণমূলের লোকজন। তাদের পরোক্ষে এবং প্রত্যক্ষভাবে উৎসাহ দিচ্ছেন থানার ওসি। সমস্ত বিষয়টা আমরা জেলা পুলিশ সুপারকে জানাব।”
গোঘাটের কামচে গ্রামে সিপিএম সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুর। ছবি: মোহন দাস।
তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে আরামবাগ ব্লক সভাপতি তথা পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী বলেন, “সিপিএম মিথ্যা অভিযোগ করছে। পুইন, ঘরগোয়াল, চাঁদুর, গোঘাটের কামচে—সর্বত্র আমাদের লোকরাই সিপিএমের হাতে আক্রান্ত।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সোমবার সকালে গোঘাটের কামচে গ্রামে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি চড়াও হয়ে তৃণমূলের লোকজন মহিলাদের মারধর করে। তৃণমূলের অভিযোগ, সিপিএমের মারে মামনি সাঁতরা এবং মীরা সাঁতরা নামে তাদের দুই সমর্থক জখম হন। দু’জনকেই আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রবিবার সিপিএম অধ্যুষিত মোল্লাপাড়ায় বোমা-লাঠি-রড নিয়ে হামলার অভিযোগ ওঠে উঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অন্তত দশটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আহত হন দুই মহিলা সহ ১০ জন সিপিএম সমর্থক। মহিলাদের ধর্ষণের হুমকি এবং শ্লীলতাহানিরও অভিযোগ উঠেছে। আহতদের মধ্যে মোল্লা শাহেনশা বাদশা এবং আরিফ হোসেনকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রাংতাখালি এবং বসন্তবাটিতে সিপিআই সমর্থকদের মারধর এবং বাড়ি ভাঙচুর হয়। বসন্তবাটিতে সিপিআই নেতা জগন্নাথ শাসমলের বাড়ি ভাঙচুরেরও চেষ্টা হয়। পরে তাঁর খামারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। যদিও পুলিশ পৌঁছে যাওয়ায় আগুন ছড়াতে পারেনি। সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক তিমির ভট্টাচার্যর অভিযোগ, “পুলিশ শাসক দলের হয়ে কাজ করছে, বসন্তবাটি এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানোর কথা থাকলেও তা বসানো হয়নি।” রাংতাখালির সুদীপ দাস এবং বসন্তবাটির বাদল সামুইকে তৃণমূল কর্মীরা মারধোর করে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
শনিবার রাতে চুঁচুড়ার আদর্শনগর-পশ্চিমপাড়ায় সিপিএম সমর্থক রাজীব দত্তের বাড়িতে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। রাজীববাবু বলেন, ‘‘নির্বাচনে আমি স্থানীয় কানাগড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১১৩ নম্বর বুথে বাম এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছিলাম। স্থানীয় কিছু তৃণমূল সমর্থক নির্বাচনের দিনই বুথের ভিতর ঢুকে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাহিনীর তৎপরতায় তখন সেখানে কিছু না করতে পারায় আমার বাড়ির উপর হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে।’’ হামলার ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে স্থানীয় তৃণমূল সমর্থকদের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।
রবিবার দুপুরে ধনেখালির বান্দ্রা পঞ্চায়েতের আমিল্যা গ্রামে সিপিএমের নির্বাচনী এজেন্ট শেখ জসিমুদ্দিন ওরফে রাজার বাড়িতে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। হামলাকারীরা তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করে। প্রাণে বাঁচতে পরিবার নিয়ে তিনি প্রতিবেশীদের বাড়িতে আশ্রয় নিলে হামলাকারীরা তাঁর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। স্থানীয় লোকজন রুখে দাঁড়ালে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ তদন্তে আসে। দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। একই ভাবে ধনেখালি-২ পঞ্চায়েতের মহামায়া গ্রামে সিপিএমের আর এক এজেন্ট সত্য সিংহের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। পোড়াবাজার মাকালপুর এলাকার নান্টাজোল গ্রামে সিপিএম সমর্থক সইফুল হকের বাড়িতে হামলা হয় নির্বাচনে পোলিং এজেন্ট হওয়ার অপরাধে। সইফুলের অভিযোগ, পোলিং এজেন্ট হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূলের লোকজনদের অবাধে ভোট দিতে না দেওয়াতেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy