Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

তিনি নাকি ‘নজরে’, তবু অভিযুক্ত মারধরে

সকাল থেকেই বাড়ির বাইরে ভিড় কর্মী-সমর্থকদের। তিনি তবু বন্দি রইলেন তিনতলা বাড়ির ভিতরে। দুপুর পর্যন্ত এক বারও বাড়ির নীচে দলীয় ক্যাম্পেও দেখা যায়নি তাঁকে। পুলিশও বলল, নজরে রয়েছেন তিনি।

জখম হুমায়ুন লস্কর (বাঁ দিকে) ও সৈফুদ্দিন মোল্লা। শনিবার, মেটিয়াবুরুজে। —নিজস্ব চিত্র।

জখম হুমায়ুন লস্কর (বাঁ দিকে) ও সৈফুদ্দিন মোল্লা। শনিবার, মেটিয়াবুরুজে। —নিজস্ব চিত্র।

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০১:০২
Share: Save:

সকাল থেকেই বাড়ির বাইরে ভিড় কর্মী-সমর্থকদের। তিনি তবু বন্দি রইলেন তিনতলা বাড়ির ভিতরে। দুপুর পর্যন্ত এক বারও বাড়ির নীচে দলীয় ক্যাম্পেও দেখা যায়নি তাঁকে। পুলিশও বলল, নজরে রয়েছেন তিনি। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই অভিযোগ উঠল, তাঁর নেতৃত্বেই হামলা হয়েছে সিপিএম সমর্থকদের উপরে। আহত হয়েছেন তিন সিপিএম কর্মী।

তাঁর নাম রহমত আনসারি। মেটিয়াবুরুজ কেন্দ্রের অন্তর্গত কলকাতা পুরসভার ১৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। বিরোধীদের আশঙ্কা ছিল, শাসকদলের হয়ে মেটিয়াবুরুজে ভোট করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তাই বিরোধীদের ভয় দেখানো, একালায় গোলমাল হতে পারে তাঁর নেতৃত্বে। সেই চিন্তায় আগেভাগেই পুলিশে অভিযোগও জানানো হয়েছিল অপরাধীর তালিকায় নাম থাকা রহমতের বিরুদ্ধে।

বিরোধীদের ওই অভিযোগ পেয়ে শনিবার সকালে পুলিশ জানিয়েছিল, নিরপেক্ষ ভোটের জন্য রহমত আনসারির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন না তিনি। তাই বলেই কি দমিয়ে রাখা যায় তাঁকে? পুলিশের আশ্বাস যে তাঁর কাছে ঠুনকো, বুঝিয়ে দিয়েছেন রহমত। পুলিশের কথা মতো এ দিন পড়ন্ত দুপুরে সপরিবার ভোট দিতে বেরিয়েছিলেন তিনি। তার পরেই বিরোধীদের অভিযোগ এল, মেটিয়াবুরুজে লিচুবাগানের কটন লেনে সিপিএম কর্মী সমর্থকদের উপরে হামলা করেছেন রহমত ও তাঁর বাহিনী। যাতে আহত হয়েছেন তিন জন। রহমতের অবশ্য দাবি, তাঁর দেহরক্ষীর উপরে হামলা করেছে সিপিএম। যাঁকে বাঁচাতে গিয়ে লাঠি চালাতে হয়েছে পুলিশকে।

পুলিশ জানায়, সিপিএম অভিযোগ করেছে, দুপুরে রহমত আনসারি তাঁর দলবল নিয়ে কটন লেনে লিচুবাগান হায়দার পাড়ায় তাদের ক্যাম্প অফিসে ভাঙচুর চালান। অভিযোগ, ওই ঘটনায় সৈফুদ্দিন মোল্লা, হুমায়ুন লস্কর এবং সইফুল ইসলাম নামে তাঁদের তিন কর্মী আহত হয়েছেন। বাড়িতে শুয়ে জখম সৈফুদ্দিন এ দিন জানান, ভোট দিয়ে ফেরার সময়ে রহমতের বাহিনী তাঁর উপরে ঝাপিয়ে পড়ে। লোহার রড, বাঁশ দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। সৈফুদ্দিনের দাবি, তাঁদের এলাকায় ভোটের দু’দিন আগে থেকে সিপিএমকে ভোট না দেওয়ার জন্য শাসিয়েছিল রহমতের দলবল। তবু ভোট দিতে যাওয়ায় তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ সৈফুদ্দিনের।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনার পরে মোটরবাইক করে ফিরছিলেন রহমত আনসারির দেহরক্ষী, পুলিশকর্মী প্রদীপ ব্রহ্ম। তাঁকে ঘিরে ধরেন কিছু সিপিএম সর্মথক। প্রদীপের অভিযোগ, তাঁকে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে মারধর করা হয়। পরে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়ে লাঠিচার্জ করে সিপিএম সমর্থকদের উপরে। মেটিয়াবুরুজের সিপিএম প্রার্থী মনিরুল ইসলামের অভিযোগ, রহমতের নেতৃত্বে তাঁর দলের সমর্থকদের উপরে হামলা করে দুষ্কৃতীরা। রহমত অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।

শনিবারের ভোটের শুরুটা অবশ্য অন্য রকম হয়েছিল। পুলিশের নিষেধ থাকায় বাড়ির ভিতর থেকে ভোট পরিচালনা করলেও বাইরে যাননি রহমত। এ দিন বেলা এগোরোটা নাগাদ কারবালা লেনে রহমতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দরজা বন্ধ। সংবাদমাধ্যম তাঁর খোঁজ করছে শুনে বাড়ির ভিতরে ডেকে নেন ওই এলাকায় তৃণমূলের ‘শেষ কথা’। গাল ভর্তি সাবান নিয়ে ভিতরে তিনতলার ঘরে তখন চেয়ারে বসে রহমত আনসারি। দাড়ি কাটাচ্ছেন। রহমতের দাবি, কেউ তাঁকে বাড়িতে থাকতে বলেননি। তিনি স্বেচ্ছায় বাড়ি বসে। তবে মেটিয়াবুরুজ থানার ওসি তাঁকে ফোন করেছিলেন বলে জানান রহমত।

লালবাজার জানায়, পুলিশকর্মীকে মারধরের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। সিপিএমের পক্ষ থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

রহমতের মতো এ দিন নজরে রাখা হয়েছিল বন্দর মেটিয়াবুরুজের আর দুই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে। তবে তাঁদের বিরুদ্ধে অশান্তির কোনও অভিযোগ ওঠেনি। কংগ্রেস নেতা মোক্তার আহমেদ নিজেকে বন্দি করে রেখেছিলেন মুদিয়ালির বাড়িতে। এক বার শুধু ভোট দিতে বেরিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, পুলিশ নয়, স্বেচ্ছায় বেরোননি তিনি। অপর জন পুলিশ অফিসারকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকালে ভোট দেওয়ার পরে তিনি সোজা আয়রন সাইট রোডের বাড়ি থেকে চলে যান রামনগর লেনে দলীয় অফিসে। সেখানে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে তাঁকে বিরিয়ানি রান্না করতে দেখা গিয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

এ দিন সকালে মেটিয়াবুরুজ কেন্দ্রের পাঁচুরিতেও সিপিএম সমর্থকদের মারধর করার অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের প্রার্থী মনিরুল ইসলামের অভিযোগ, ওই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সিপিএম সমর্থকদের ভয় দেখিয়ে মারধর করেছে তৃণমূল। পাঁচুরির বাসিন্দা নুর ইসলাম মণ্ডলের অভিযোগ, এ দিন সকাল থেকেই তাঁদেরকে ভয় দেখাচ্ছিলেন এলাকার বেশ কয়েক জন তৃণমূল নেতা। পরে অবশ্য ওই এলাকা থেকে এক জন তৃণমূলকর্মীকে আটক করে পুলিশ।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy