টালমাটাল। ভোট দেখতে লঞ্চে উঠছেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার হলদিয়া ফেরিঘাটে। — সুদীপ্ত ভৌমিক
প্রথম দফা: ৪ এপ্রিল
বাঁকুড়ার ৩টি, পুরুলিয়ার ৯টি ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ৬টি মিলিয়ে ১৮টি আসন। মাওবাদী এলাকা। দিদির ভাইরা আশা করেছিলেন, ফাঁকা মাঠে এগোনো যাবে। ভোট শুরু হতে দেখা গেল, মাঠ ততটা ফাঁকা নয়। খোলাখুলি না বললেও সন্ধ্যায় হিসেবের খাতায় কিছু অদলবদল করলেন মুকুল রায়রা।
নসীম জৈদীর প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও দেখা গেল, কেন্দ্রীয় বাহিনীর চনমনে মেজাজ নেই। গ্রামের পর গ্রামে রাস্তায় তাদের দেখা যায়নি। দুধে জল মিশল, তবে আগের থেকে কম।
দ্বিতীয় দফা: ১১ এপ্রিল
বাঁকুড়ার ৯টি, পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৩টি ও বর্ধমান শিল্পাঞ্চলের ৯টি আসন। নারায়ণগড়ে প্রার্থী সূর্যকান্ত মিশ্র, সবংয়ে মানস ভুঁইয়া। ভোটের দিন দিদির ভাইদের হাতে হেনস্থা হলেন সূর্যবাবু, আগের দিন তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় মামলা হল মানসের বিরুদ্ধে। এলাকা বিশেষে শাসক দলের কর্মীরা বিরোধী ভোটারদের বেরোতেই দিলেন না। তবে বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলে বাধা পেল তৃণমূলের ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা এ দফাতেও আশানুরূপ ছিল না। তাই আসল ভোট কতটা পড়ল আর কতটা দিল ভূতেরা, ধন্দ থেকে গেল।
তৃতীয় দফা : ১৭ এপ্রিল
এ বার উত্তরবঙ্গ, সঙ্গে বীরভূম। উত্তরবঙ্গে শাসক দল যে ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মতো, তা দিদিই স্বীকার করেছেন। তাই মূল নজর ছিল বীরভূমে। গত ভোটে এখানে জোটের তুলনায় ৭টি আসনে এগিয়ে ছিলেন দিদি। আসন বাড়াতে না পারলে দক্ষিণের ভোটে চাপ বাড়বে শাসকের।
বীরভূম কেষ্টর খাসতালুক। আগের ভোটে এখানে সিপিএম এজেন্টদের ঘরে ঢুকিয়ে সিল করে দিয়েছিলেন বলে তাঁর নিজেরই দাবি। এ বার বলেছিলেন, ‘‘বিরোধীদের ভ্যানিশ করে দেব, বুথে বুথে গুড়ের বাতাসা বিলি হবে।’’ কমিশন অবশ্য তাঁকে নজরবন্দি করে ভোটের দু’দিন আগে। সাতটি থানার ওসি এবং পুলিশ সুপারও বদল হলেন। তার মধ্যেও ভেল্কি দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন কেষ্ট। তবু দিনের শেষে শরীরী ভাষায় যেন খামতি রয়ে গেল।
কমিশন নড়ে বসার ইঙ্গিত দিল এই দফাতেই। এই প্রথম তৃণমূলের সমর্থকদের বিরুদ্ধে লাঠি উঁচিয়ে ছুটে যেতে দেখা গেল বাহিনীকে। জৈদীর ওপর চাপ রেখে চললেন বিরোধীরা।
চতুর্থ দফা: ২১ এপ্রিল
এই দফার পিচ ছিল মিশ্র। মুর্শিদাবাদের ২২টি আসনের পাশাপাশি ভোট নদিয়ার ১৭টি, বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকার ১৬টি এবং উত্তর কলকাতার ৭টি আসনে। শুধু বিরোধী জোট নয়, এই প্রথম সাধারণ মানুষ রুখে দাঁড়ালেন শাসক দলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।
কমিশনের উপর ধারাবাহিক চাপ তৈরির ফলও মিলতে শুরু করল। দু’দিন আগেই কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে রাজীব কুমারকে সরিয়ে বসানো হয় সৌমেন মিত্রকে। এই প্রথম কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল ও নজরদারিতে যোগ্য সঙ্গত করল রাজ্য পুলিশের একাংশ। ডোমকলে অবশ্য সাতসকালেই খুন হলেন সিপিএম কর্মী।
পঞ্চম দফা: ২৫ এপ্রিল
ভোট এ বার দিদির বাড়ির কাছেই। হাওড়ার ১৬টি, বিধাননগর-সহ উত্তর ২৪ পরগনার ৩৩টি আসন। গত ভোটে ৪৩টি আসনেই এগিয়ে ছিলেন দিদি। ভোটের দিন দেখা গেল, সময় এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে শাসক শিবিরে স্বস্তি উবে যাচ্ছে। উল্টে অরূপ রায়-জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকরা বলছেন, ‘‘বাড়াবাড়ি করছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।’’
ভোটের এক দিন আগেই এলাকাছাড়া করে দেওয়া হয় শাসক দলের আশ্রিত দাদাদের। বাইক বাহিনীকে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি বুথের ধারে। দুই জেলাতেই ১৪৪ ধারা জারি করেছিল কমিশন। বিধাননগরে হৃতসম্মান ফেরত আনেন কমিশনার জাভেদ শামিম।
হাওড়ায় দু’টি বুথে ছাপ্পা ভোট দেওয়া চাক্ষুষ করে আনন্দবাজার। তবে সেটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা মাত্র। সামগ্রিক বিচারে পঞ্চাশ বছরে এই প্রথম যথার্থ ভোট দেখল বাংলা।
ষষ্ঠ দফা: ৩০ এপ্রিল
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৩১টি, হুগলির ১৮টি ও কলকাতার ৪টি আসনে ভোট। ভবানীপুরে প্রার্থী স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারি ছিল আরও কঠোর। তার থেকেও বেশি নজর কাড়ে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা। বুথের কাছাকাছি জটলা দেখলেই মেরে তাড়িয়ে দেয় তারা। ভোটগ্রহণ শেষ হতেই কমিশন ও পুলিশের মুণ্ডপাত শুরু করেন দিদি।
গত দফায় অভিযোগ যা-ও বা ছিল, ষষ্ঠ দফার শেষে বিরোধীরাই প্রশংসা করেন কমিশনের। মেরুদণ্ড দেখানোয় তার থেকেও বেশি বাহবা পায় রাজ্য পুলিশ।
সপ্তম দফা: ৫ মে
কোচবিহারের ৯টি ও পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টি মিলিয়ে মোট ২৫টি আসন। কোচবিহারে নাটাবাড়ি ও দিনহাটায় শাসক দলের দুই প্রার্থী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও উদয়ন গুহর ঘাবড়ে যাওয়া ছবিতে উদ্বেগ বেড়েছে শাসক দলেই।
পূর্ব মেদিনীপুরে ১৬-০ করে দেওয়ার প্রত্যয় দেখিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ভুতুড়ে ভোট পড়ার কিছু অভিযোগ উঠলেও মোটের উপরে খুশি বিরোধীরা।
কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশের নজরদারি ছিল আগের থেকেও বেশি। বাইকে করে অলিতে-গলিতে টহল দেন জওয়ানরা। এমনকী শুভেন্দুর এলাকাতেও বুথে ঝামেলা করার অভিযোগে কান ধরে ওঠবোস করানো হয় তৃণমূল নেতাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy