Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪

ভোটের ভূত ছাড়াতে চিরুনি চালাবে কমিশন

ভূত তাড়ানোর অভিযান চলেছে বহু বছর ধরে। তার পরেও অনেক ভূতই রয়ে গিয়েছে! এ বারে তাই রাজ্যের ভোটার তালিকা ‘ভূত-শূন্য’ করতে ঝাঁপাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৯
Share: Save:

ভূত তাড়ানোর অভিযান চলেছে বহু বছর ধরে। তার পরেও অনেক ভূতই রয়ে গিয়েছে! এ বারে তাই রাজ্যের ভোটার তালিকা ‘ভূত-শূন্য’ করতে ঝাঁপাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।

ভোটের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে এ রাজ্যে বরাবরই এই ভূতেদের একটা ভূমিকা থেকেছে। এ বারেও সেই ধারা বজায় থাকুক, চায় না নির্বাচন কমিশন। তাই বিধানসভার ফলাফল ভূত-নিরপেক্ষ করতে আসরে নেমে পড়েছে দিল্লির নির্বাচন সদন থেকে বুথ স্তরের অফিসারেরা। কমিশন চায়, ভোটের পাঁচ দিন আগে বুথভিত্তিক সম্ভাব্য ভূতেদের তালিকা তৈরি রাখতে, যাতে জাল-ভোট আটকানো যায়। শনিবার উপ নির্বাচন কমিশনার সন্দীপ সাক্সেনাও এ নিয়ে রাজ্যের জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করেন।

এ রাজ্যে ভোটার তালিকা থেকে ভূত তাড়ানোর চেষ্টা নতুন নয়। কমিশনের এক কর্তা জানান, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটের স্লিপ বিলি করার কথা তাঁদের। তা হলে প্রকৃত ভোটদাতার একটা সম্ভাব্য তালিকা পাওয়া যেতে পারে। এত দিন কমিশনের লোকেরা সেই কাজটা করতেন, কিন্তু বহু বার অভিযোগ উঠেছে তা নেহাতই দায়সারা ভাবে করা হতো। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার স্লিপ বিলির মূল কাজটা করত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। আর সেটা করতে গিয়েই তারা বুঝে নিত, তালিকায় থাকা নামগুলির মধ্যে কত জন ভোট দিতে যাবেন না। ভোটের দিন অনেক জায়গায় সেই সংখ্যাটাই ভোটের বাক্সে খেল দেখাত! ভুতুড়ে ভোটার হয়ে!

বুথভিত্তিক এই ভুতুড়ে বা ভুয়ো ভোটারের সংখ্যা নেহাত ফেলনা নয় বলেই মনে করে কমিশন। সেই কারণে এ বারে নিজেরাই ভোটার স্লিপ বিলির সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। যাতে ভুয়ো ভোটারদের সঠিক তালিকা কমিশনের হাতে থাকে। কমিশনের এক কর্তা জানান, আগেও এই ব্যবস্থা চালু ছিল। কিন্তু এ বার ভুতুড়ে ভোটার বাছাইয়ের কাজে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে কমিশন।

কী ভাবে? কমিশন সূত্রের খবর, এ রাজ্যে প্রতিটি ভোটারের সচিত্র পরিচয়পত্র রয়েছে। ভোটার তালিকাও সচিত্র। ভোটের স্লিপ দিতে বুথ স্তরের অফিসারেরা বাড়ি বাড়ি যাবেন। কমিশনের তরফে কোন এলাকায়, কোন দিন ভোটার স্লিপ বিলি করা হবে— তা আগাম জানানো হবে রাজনৈতিক দলগুলিকে। প্রয়োজনে বুথস্তরের অফিসারদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও স্লিপ বিলির সময় থাকতে পারবেন।

কমিশনের এক কর্তা জানান, বুথ স্তরের অফিসারেরা সংশ্লিষ্ট ঠিকানায় গিয়ে সশরীর হাজির ভোটারদের হাতে হাতে স্লিপ তুলে দিয়ে খাতায় সই করিয়ে নেবেন। সেই বাড়ির অনুপস্থিত ভোটারদের স্লিপ দিতে কমিশনের প্রতিনিধি আরও একবার যাবেন। তার পরেও কোনও ভোটারকে সামনাসামনি না পেলে বাড়ির অন্য কারও হাতে তাঁর ভোটার স্লিপ তুলে দেবেন তিনি। তবে তাতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সম্মতি থাকতে হবে। এই ভাবে ভোটের পাঁচ দিন আগে পর্যন্ত স্লিপ বিলির কাজ চলবে।

কমিশনের এক কর্তা জানান, এর পরেও যাঁরা স্লিপ পাবেন না, তাঁরা চাইলে রিটার্নিং অফিসারের দফতরে গিয়ে পরিচয়পত্র দেখিয়ে স্লিপ নিয়ে যেতে পারবেন। তার পরেও বুথভিত্তিক অবণ্টিত স্লিপের একটি রেজিস্টার তৈরি করে ভোটের দিন তা প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে রাখা থাকবে। কমিশনের চোখে, এই ভোটগুলি ভুতুড়ে বলে ধরে নেওয়া হবে। তাই এই নামে কেউ ভোট দিতে এলে প্রিসাইডিং অফিসারকে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে।

গত ১৫ মার্চ কলকাতায় এসে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদী বলেছিলেন, ‘‘ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ হয়ে গিয়েছে। এ বার মৃত, অনুপস্থিত এবং অন্যত্র চলে যাওয়া ভোটারদেরও চিহ্নিতকরণ করতে হবে। যাতে ভুয়ো ভোট না পড়ে।’’ জৈদী প্রথম থেকেই রাজ্যের নির্বাচনে ভুয়ো ভোটার তথা ভূতেদের খুঁজে বের করার কথা বলে এসেছেন। সেই সূত্র ধরেই উপ নির্বাচন কমিশনার শনিবার রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এই নিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন।

এ দিন ভিডিও কনফারেন্সের পর রাজ্যের বেশ কয়েক জন জেলাশাসকের বক্তব্য, ‘‘অতীতের অভি়জ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, প্রতি বুথে অন্তত ৩-৪% এমন ভোটার থাকে। যা বদলে দিতে পারে ভোটের ভবিষ্যৎ। সেই কারণেই এমন ভোটারদের আলাদা করে বাছাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমন ভোটার ভোট দিতে এলে নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।’’

প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘ভূত যাতে কোনও ভাবেই ভোট দিতে না পারে, তার জন্য এত চেষ্টা। কিন্তু শেষ রক্ষা হবে কি না, এতো কিছুর পরেও সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy