শিলিগুড়িতে পর্যবেক্ষক দল। নিজস্ব চিত্র।
মিটিং করুন, তাই বলে মিটিঙে যাতায়াত-আয়োজনে অযথা সময় নষ্ট করবেন না। তিন দিনের সফরের শেষ দিনে উত্তরবঙ্গের আধিকারিকদের এমনই বার্তা দিয়ে গেলেন নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক দল।
দার্জিলিঙে জেলার কেন্দ্রীয় বৈঠক হলে, শিলিগুড়ি থেকে যাতায়াতেই ন্যূনতম ৫ ঘণ্টা সময় লেগে যাবে শুনে, সোমবার শিলিগুড়িতেও পৃথক প্রস্তুতি বৈঠক ডাকার নির্দেশ দেন দিল্লির সিইও চন্দ্রভূষণ কুমার। গত শনিবার উত্তরবঙ্গে পৌঁছনোর পর থেকে নিজেরা এমনভাবে পদক্ষেপ করেছেন, যাতে ভোটের কাজে যুক্ত প্রশাসনের আধিকারিকদের সময় নষ্ট না হয়। দার্জিলিং ছাড়াও জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারের দায়িত্বে রয়েছেন চন্দ্রভূষণের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের দল। প্রতি জেলায় গিয়ে তাঁরা বৈঠক করবেন। অতীতে উত্তরবঙ্গে কমিশনের প্রস্তুতি বৈঠক কেন্দ্রীয় ভাবেই হতে দেখা গিয়েছে, বড়জোর তিন-চার জেলা ভাগ করে দু অথবা তিন দফায় বৈঠক হয়েছে। গত শনিবার উত্তরবঙ্গে পৌঁছেই চন্দ্রভূষণ জানিয়ে দেন, তাঁরাই প্রতি জেলায় গিয়ে বৈঠক করবেন। আলিপুরদুয়ার-কোচবিহার জেলা সদরের দূরত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার হওয়ায় দুই জেলার বৈঠক একসঙ্গে হওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল। যদিও, কমিশনের দল জানিয়ে দেন, দুই জেলাতেই পৃথক বৈঠক হবে। কেন না ২৩ কিলোমিটার যাতায়াতেও কিছুটা হলেও সময় নষ্ট হবে।
জলপাইগুড়ি সার্কিট হাউসের বৈঠক সেরে গত রবিবার সন্ধ্যায় দার্জিলিঙে পৌঁছন বিশেষ পর্যবেক্ষক দল। কথা ছিল, দার্জিলিঙেই শিলিগুড়ি সহ সব মহকুমার কর্তারা উপস্থিত থাকবেন। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যেতে কনভয় থাকলেও আড়াই ঘণ্টা লেগে যায় পৌঁছতে। সে হিসেবে যাতায়াতে ন্যূনতম ৫ ঘণ্টা লাগে। ভোটের আগে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা পাঁচ ঘণ্টা নিজেদের বিধানসভা কেন্দ্রের বাইরে থাকবেন, শুনেই চমকে উঠেছিলেন নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক দলের প্রধান। চন্দ্রভূষণ কুমার দার্জিলিঙের জেলাশাসককে ডেকে বলেন, ‘‘আজ বাদে কাল থেকে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া শুরু হবে, এ সময় কোনও আধিকারিক নিজের কেন্দ্র ছেড়ে বেশি সময় বাইরে যেতে পারবেন না।’’ জানিয়ে দেন, প্রয়োজনে গভীর রাত পর্যন্ত অফিস করতে হবে। চন্দ্রভূষণের নির্দেশেই গত রবিবার রাতে জেলাশাসক ঘোষণা করেন, দার্জিলিঙের বৈঠকে শিলিগুড়ি মহকুমার কোনও আধিকারিককে আসতে হবে না। শিলিগুড়িতে গিয়েই বিশেষ পর্যবেক্ষক দল বৈঠক করবেন। সেই মতো শিলিগুড়ির সিটি সেন্টার লাগোয়া একটি অভিজাত ক্লাবে বৈঠক হবে বলে ঠিক হয়। পর্যবেক্ষকরা তা শুনে জানিয়ে দেন, বৈঠক হবে সার্কিট হাউসে। সেই বৈঠক সেরে এ দিনই তাঁরা দিল্লি ফিরে গিয়েছেন।
কমিশনের সদস্যদের এই বার্তাকে যথেষ্ট সদর্থক বলে দাবি করেছেন প্রশাসনের সব স্তরের আধিকারিকরা। ভোটের আগে প্রতি সপ্তাহেই জেলা প্রশাসনের বৈঠক হওয়াই দস্তুর। দার্জিলিঙের বৈঠকে যেতে হয় শিলিগুড়ি, ফাঁসিদেওয়া, নকশালবাড়ির মতো দূরবর্তী এলাকার অফিসারদের। কালিম্পঙের থেকে দার্জিলিঙের দূরত্বও তুলনামূলক ভাবে বেশি। ওই এলাকার অফিসারদের দাবি, বৈঠকে যেতে আসতেই দিনকাবার হয়ে যায়। ভোট এগিয়ে এলে সপ্তাহে তিন-চার বার বৈঠকও হয়েছে। জলপাইগুড়ি জেলা সদরের বৈঠকেও ধূপগুড়ি, মালবাজারের অফিসারদের যাতায়াতে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। এ দিন কমিশনের সদস্যরা যে বার্তা দিয়েছেন, তা অনুসরণ করে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপের কথা জানিয়েছে কয়েকটি জেলা প্রশাসন। দার্জিলিং জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, বৈঠক করতে হলে এমন ভাবে করা হবে, যাতে সময় খুব নষ্ট না হয়।
এ দিনের বৈঠকে কমিশনের সদস্যরা পুলিশ এবং প্রশাসনের কর্তাদের আরও বেশিবার সব বুথে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আজ, মঙ্গলবার থেকে উত্তরবঙ্গে কোচবিহার বাদে বাকি জেলাগুলির বিধানসভা কেন্দ্রের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই রাজনৈতিক উত্তেজনা থেকে প্রশাসনিক কাজকর্ম সবই দ্বিগুণ বাড়বে আজ থেকেই। সে কারণেই জেলাশসাক, পুলিশ সুপার সহ অনান্য আধিকারিকদের প্রয়োজনে গভীর রাত পর্যন্ত অফিসে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন চন্দ্রভূষণ। এ দিন বৈঠকের পরে চন্দ্রভূষণ বলেন, ‘‘ভোটের প্রস্তুতি চলছে। এখন বৈঠকে যাতায়াতের জন্য বেশি সময় নষ্ট করা যাবে না। সে কারণেই শিলিগুড়িতে পৃথক বৈঠক হয়েছে। আগামীকাল থেকে মনোনয়ন জমা শুরু হবে জেলাশাসক সহ অনান্য কর্তাদের রাত পর্যন্ত অফিস করতে হবে। নষ্ট করার মতো সময় নেই।’’
এ বারের ভোটে কমিশনের কড়াকড়ির উদাহরণ যে অতীতে দেখা যায়নি তা স্বীকার করছেন প্রশাসনের আধিকারিকরা। তাতেই নতুন সংযোজন সময় নষ্ট না করার দাওয়াই। প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘রাত পর্যন্ত অফিসে থাকার নির্দেশ দিয়ে আসলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নজরদারি বাড়ানোই নিশ্চিত করে গেলেন কমিশনের পর্যবেক্ষকরা।’’ এ দিন দার্জিলিঙের বৈঠকে ভোট গ্রহণ কেন্দ্রগুলিতে পানীয় জল সমস্যা দ্রুত মেটানোর নির্দেশ দিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা। দার্জিলিঙে পানীয় জল সঙ্কটের কথা শুনেই পর্যবেক্ষকরা জেলাশাসককে এই নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy