Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
বুথে ঢুকে মার বড়জোড়ায়

নড়ল প্রশাসন, অভিযোগ নিলেন জেলাশাসক

ভোটের আগের রাতে বুথের ভিতরে ‘ভূতের’ খপ্পরে পড়েছিলেন প্রিসাইডিং অফিসার আর তাঁর সঙ্গী পোলিং অফিসারেরা। ‘ভূতের’ মার খেয়ে আধমরা হওয়ার পরেও কিছুতেই তাঁদের এফআইআর নিতে চায়নি পুলিশ। আনন্দবাজার পত্রিকায় সেই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই বদলে গেল ছবিটা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
মালিয়াড়া (বড়জোড়া) শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:২১
Share: Save:

ভোটের আগের রাতে বুথের ভিতরে ‘ভূতের’ খপ্পরে পড়েছিলেন প্রিসাইডিং অফিসার আর তাঁর সঙ্গী পোলিং অফিসারেরা। ‘ভূতের’ মার খেয়ে আধমরা হওয়ার পরেও কিছুতেই তাঁদের এফআইআর নিতে চায়নি পুলিশ। আনন্দবাজার পত্রিকায় সেই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরেই বদলে গেল ছবিটা।

মঙ্গলবার সকালে আহত প্রিসাইডিং অফিসার জয়ন্তকুমার নন্দীকে ডেকে তাঁর লিখিত অভিযোগ জমা নিলেন খোদ বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। জানিয়ে দিলেন, এই অভিযোগকেই যাতে এফআইআর হিসাবে যাতে পুলিশ গণ্য করে, সেই নির্দেশ তিনি দেবেন। জেলার এসপি নীলকান্ত সুধীর কুমারও জানিয়েছেন, অভিযোগ পেয়ে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু, বড়জোড়া কেন্দ্রের অন্তর্গত মালিয়াড়ার পরীক্ষাপাড়া প্রাথমিক কেন্দ্রের বুথে রবিবার রাতে আক্রান্ত হওয়ার পরে জয়ন্তবাবুরা প্রথমে যাঁকে সব জানিয়েছিলেন, সেই বড়জোড়া-র বিডিও পঙ্কজ আচার্য এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর স্মৃতি-ই নাকি ঠিকঠাক কাজ করছে না! ফলে ওই রাতে কী শুনেছিলেন, কিছুতেই মনে করতে পারছেন না।

কী হয়েছিল রবিবার? পেশায় শিক্ষক জয়ন্তবাবুর অভিযোগ, গভীর রাতে জনা ১৬-১৭ যুবক বুথে ঢুকে চেঁচিয়ে বলে, জয়ন্তবাবুরা সিপিএমের হয়ে ছাপ্পা ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। এর পরেই তারা ভোটযন্ত্র কেড়ে নিতে চায়। জয়ন্তবাবুরা বাধা দিলে কিল-চড়-ঘুষি মারে। মোবাইলও কেড়ে নেওয়া হয়। সঙ্গে ছিল গালাগাল।

সোমবার ভোটের দিন ঘটনাস্থলে আনন্দবাজার যেতেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এলাকার তৃণমূল সমর্থকেরা যেচে এসে জানিয়েছিলেন, সিপিএমের হয়ে ভোট দেওয়ার জন্য অফিসারদের পেটানো হয়েছে! বেশ হয়েছে। চায়না রায়, ঝুমু ফৌজদারের মতো অনেক মহিলা উত্তেজিত গলায় মন্তব্য করেন, ‘‘ভোট দেওয়ার আওয়াজ পেয়েছিলাম আমরা। ওরা সিপিএমের হয়ে ৯৬টা ভোট দিয়ে দিয়েছিল। আমরা তৃণমূল করি। সহ্য করব কেন? আমাদের ছেলেরাই তো মেরেধরে আটকালো।’’ পুলিশ তৃণমূলের দু’জনকে থানায় নিয়ে যাওয়ায় বেজায় গোসাও হয়েছিল তাঁদের।

কোন দু’জন? জবাব এসেছিল, ‘‘ওই যে লক্ষ্ণণ বাগদি আর হোদল বাউড়ি। ওরা সব বাপ্পা চন্দ্রাধূর্য-র ছেলেপিলে।’’

কে এই বাপ্পা চন্দ্রাধূর্য? জানা গেল, স্থানীয় রাজপরিবারের ছেলে। মালিয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য। ইদানীং জেলা তৃণমূলের অন্দরে নিজের প্রভাব বিস্তারে মরিয়া। ভোটের দিন তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ঝাঁঝিয়ে উঠে বলেছিলেন, ‘‘ঝামেলা রাখুন। এখন কিচ্ছু বলব না। আমাকে ভোটটা করাতে দিন।’’

মঙ্গলবার সেই বাপ্পা-র সঙ্গে আবার কথা বলতে যাওয়া হয়েছিল মালিয়াড়া। গোটা এলাকা এ দিন থমথমে। সোমবারের সেই ‘বেশ করেছি’ মনোভাব অদৃশ্য তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। রবিবার রাতের কথা জিজ্ঞাসা করতেই তাঁরা হয় ‘‘আমরা কিছু জানি না, কিছু দেখিনি’’ বলে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন বা দ্রুত হাঁটা লাগাচ্ছেন। লক্ষ্মণ আর হোদল কোথায়, জিজ্ঞাসা করতে সবাই এমন ভাবে তাকালেন, যেন নাম দু’টো প্রথম শুনলেন।

নাম গোপনের শর্তে এলাকার কয়েক জন তৃণমূল কর্মী কিন্তু জানালেন, ওঁরা বাপ্পা-র সঙ্গী আর রবিবার হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বাপ্পাই। কান্যকুব্জপাড়ায় বাপ্পার বাড়ি যাওয়া হল। প্রায় কুড়ি মিনিট বসিয়ে রেখে বাপ্পার শাগরেদরা জানিয়ে দিলেন, তিনি বাড়ি নেই। রাতের দিকে সেই বাপ্পা-ই আবার ফোন করে বললেন, ‘‘আমি প্রিসাইডিং অফিসারকে মারিনি। বরং যাঁরা একটা ভুল বোঝাবুঝির জন্য ওঁদের মারধর করছিল, তাঁদের থামাতে গিয়েছিলাম।’’

মারের চোটে প্রিসাইডিং অফিসার জয়ন্তবাবুর বাঁ কানের পর্দা ফেটেছে। এ দিন জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানানোর পর তিনি ও তাঁর স্ত্রী সীমা নন্দী বলেন, ‘‘প্রশাসনের সাহায্য পেয়ে এখন একটু সাহস পাচ্ছি।’’

২০১৪ সলে লোকসভা নির্বাচনে সোনামুখী কেন্দ্রে তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহা বুথে ঢুকে প্রিসাইডিং অফিসার সুখেন্দু রজককে মারধর করে ছাপ্পা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উছেঠিল। সেই সুখেন্দুবাবুর কথায়, ‘‘আমার সময় তবু প্রশাসনকে পাশে পায়েছিলাম। জয়ন্তবাবুদের সেটুকু পেতেও অনেক সমস্যা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy