জল কমেছে। তবে সামান্য। পরের দফা ভোটের আগে দুধ যাতে আরও ঘন হয় সে জন্য তড়িঘড়ি নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হল সিপিএম। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীর সঙ্গে দেখা করে মূলত পাঁচটি দাবি জানিয়ে এসেছেন। যার অন্যতম হল: বাকি ছ’দফা ভোটে বুথের ভিতরে যেন রাজ্য পুলিশ না থাকে এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী যেন এলাকায় আরও বেশি করে টহল দেয়। এ দিনই জৈদীকে ফোন করে একই দাবি জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
সোমবার জঙ্গলমহলের ১৮টি আসনে প্রথম দফার ভোটে কিছু কিছু জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ততটা তৎপর হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। কমিশনের নিষেধ সত্ত্বেও বুথের ভিতরে দেখা গিয়েছিল রাজ্য পুলিশকে। ফলে সব মিলিয়ে ভূতের ভোট কমলেও সরষের ঝাঁঝ যে আরও বাড়া দরকার, সেটা উপলব্ধি করেছেন বিরোধী নেতারা। সেই কারণেই এ দিন কমিশনের কাছে আবেদন জানানো। এবং সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে এ দিনই জেলা পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কমিশনের ফুল বেঞ্চের নির্দেশ, ভোটের দিন ভোটারদের লাইন ঠিক করা ছাড়া রাজ্য পুলিশ আর কিছু করবে না। প্রিসাইডিং অফিসার তলব না করলে তাদের বুথের ভিতরে ঢোকা পুরোপুরি নিষেধ। শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায় কোথায় টহল দিল সে খবর প্রতি দু’ঘণ্টা অন্তর দিল্লির নির্বাচন সদনে জানাতে হবে। দিল্লিতে বসে কমিশনের কর্তারাও প্রতিনিয়ত নজর রাখবেন সংবাদমাধ্যমে। কোনও গোলমালের খবর পেলেই তাঁরা নির্দেশ পাঠাবেন রাজ্যে। সেই নির্দেশ পালিত হল কি না, তা দু’ঘণ্টার মধ্যে জানাতে হবে সংবাদমাধ্যমকে।
সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম এ দিন বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন ভোটের আগে মানুষের আস্থা বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু চেষ্টা সত্ত্বেও প্রথম দফায় শাসক দলের বাহিনী কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রথম দফা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাকি ৬ দফায় কমিশনকে আরও কড়া হতে হবে।’’ অধীরেরও দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ভোটের এলাকার উপরে নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি, বুথে ঢোকার আগেই পরিচয়পত্র যাচাই করা উচিত। অথচ প্রথম দফার ভোটে সেটা করা হয়েছে বুথে ঢুকে যাওয়ার পরে!’’
বাম এবং কংগ্রেস শিবির বলছে, ভূতের ভোট কমা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের আবেগের যে ছবি জঙ্গলমহলের ১৮টি কেন্দ্রে উঠে এসেছে, তাতে তারা খুবই আশাবাদী। ইয়েচুরির কথায়, ‘‘ভোট পড়েছে বিপুল। মানুষ নিজেরা বেরিয়ে ভোট দিয়েছেন। বাংলায় পরিবর্তনের হাওয়া টের পাওয়া যাচ্ছে!’’ বস্তুত, ভোটের পরে বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলা নেতৃত্ব আলিমুদ্দিনে যা রিপোর্ট পাঠিয়েছেন, তার নির্যাসও এমনই।
বাম-কংগ্রেসের এই বক্তব্য অবশ্য মানতে নারাজ তৃণমূল। মুকুল রায়ের দাবি, ‘‘আগের তুলনায় জঙ্গলমহলে ভোটদানের হার কমেছে বলে যে প্রচার করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। তিন জেলায় ভোট আগের মতোই পড়েছে। এমনকী কোথাও কোথাও বেড়েওছে। সেটা বিরোধীদেরই চিন্তার কারণ।’’
যা শুনে জোট-নেতাদের বক্তব্য, চিন্তা তাঁদের নয়, তৃণমূলেরই। কারণ, যত দিন যাচ্ছে ততই জোরদার হচ্ছে বাম-কংগ্রেস জোট। মানুষও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যোগ দিচ্ছেন জোটের সভা-সমাবেশে। আর সেটাই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে শাসক দলের। মরিয়া হয়ে আক্রমণে যাচ্ছে তারা। এ দিনই প্রচার সেরে ফেরার পথে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের সিপিএম প্রার্থী মৃণাল বিশ্বাস তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
পাশাপাশি, এ দিন ভিড় উপচে পড়েছে বাঁকুড়ার সোনামুখী এবং ওন্দায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু আলাদা আলাদা সমাবেশে। যার খবর পেয়ে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতাও বলছেন, ‘‘গত ১০-১৫ দিন ধরেই দুই জেলায় বিরোধীদের সভায় বেশ ভাল ভিড় হচ্ছে। ভিড় বেশি হলেই ওরা ভাল ভোট পাবে, তার মানে নেই! তবু ভিড়টা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়।’’
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলছেন, ‘‘আমরা তো ঘরপোড়া গরু! সেই ২০১১ সাল থেকে যে ভোটই হয়েছে, সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়েছি। তাই এখন বুক বাজিয়ে কিছু বলতে যাওয়া মুশকিল! তবু খুব কম করে হিসাব করেও রিপোর্ট আসছে, এ বার আর আগের মতো হবে না!’’ তবে জনতার দিক থেকে ভাল সাড়া পেয়ে চালিয়ে খেলারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম। মাঠ ভি়ড়ে ঠাসা, আশেপাশের সব ছাদে জনতা! সোনামুখীতে এমন সভায় দাঁড়িয়ে সূর্যবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘এখানকার গ্রামের মানুষকে হাতির হামলা থেকে বাঁচতে হুলা পার্টি তৈরি করতে দেখেছি। মানুষের জোটও সেই হুলা পার্টির মতো! সেই জোট দেখে তৃণমূল ভয় পেয়ে গিয়েছে।’’ ওন্দা বাজারে বিমানবাবুর সভাতেও একই ছবি। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ক’দিন আগে উল্টো দিকের মাঠেই যে সভা করেছিলেন মমতা, সে দিনের ভিড়কেও ছাপিয়ে গিয়েছে জোটের ভিড়। বাজারের এক দোকানির কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার নামার পরে ভিড় কিছুটা পাতলা হয়েছিল। কিন্তু এ দিনের ভিড় অন্য রকম!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy