Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

চুরিতে দোষী, মমতার চোখে বেচারা

সারদা-কাণ্ডে মদন মিত্র জেলবন্দি। তবু তাঁকে প্রার্থী করা গিয়েছে। কিন্তু লোহা চুরির মামলায় আদালতের রায়ে দোষী সোহরাব আলিকে প্রার্থী করা যায়নি নিয়মের ফাঁসে। সে জন্য যেন আক্ষেপই ঝরে পড়ল তৃণমূল নেত্রীর গলায়!

রানিগঞ্জের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর পাশেই সোহরাব আলি। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

রানিগঞ্জের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর পাশেই সোহরাব আলি। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:২৮
Share: Save:

সারদা-কাণ্ডে মদন মিত্র জেলবন্দি। তবু তাঁকে প্রার্থী করা গিয়েছে। কিন্তু লোহা চুরির মামলায় আদালতের রায়ে দোষী সোহরাব আলিকে প্রার্থী করা যায়নি নিয়মের ফাঁসে। সে জন্য যেন আক্ষেপই ঝরে পড়ল তৃণমূল নেত্রীর গলায়! বৃহস্পতিবার রানিগঞ্জে ভোট-প্রচারে আসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু ‘বেচারা’ সোহরাবের পাশে দাঁড়ালেনই না, তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলা ‘সিপিএমের ষড়যন্ত্র’ বলেও দাবি করলেন।

বিরোধীরা পাল্টা বলছেন, দল চালাতে রানিগঞ্জে সোহরাব, ভাঙড়ে আরাবুল, লাভপুরে মনিরুলরাই ভরসা মমতার। লোকবল, পেশিশক্তি, দেদার টাকা— সবই জোগান এই নেতারা। ফলে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় নেই। এক বিরোধী নেতার কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল নেত্রী বাঘের পিঠে চড়েছেন। আর নামেন কী করে!’’

মাস সাতেক আগে রেলের লোহা চুরির মামলায় রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাবকে দু’বছর কারাদণ্ড দিয়েছিল আসানসোল আদালত। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সোহরাব উচ্চ আদালতে গিয়েছেন বটে, কিন্তু হারিয়েছেন জনপ্রতিনিধি হওয়ার অধিকার। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ফৌজদারি মামলায় কোনও বিধায়ক বা সাংসদ দু’বছরের বেশি কারাদণ্ড পেলে তিনি তৎক্ষণাৎ পদ হারাবেন। এবং মেয়াদ শেষের পরে ছ’বছর ভোটে দাঁড়াতে পারবেন না। এই নিয়মের কারণেই সাংসদ পদ হারিয়েছেন আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদবও।

সোহরাব অবশ্য বিধায়ক পদ খোয়াননি। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে রায়ের কপিই নাকি এসে পৌঁছয়নি বিধানসভায়! তবে নতুন করে ভোটে দাঁড়াতে পারেননি তিনি। সোহরাব প্রার্থী হতে না-পারায় তাঁর স্ত্রী নার্গিস বানোকে টিকিট দিয়েছে তৃণমূল। এ দিন নার্গিসেরই প্রচারসভায় মমতার আক্ষেপ, ‘‘বেচারা সোহরাব! এ বার ভোটে দাঁড়াতে পারল না! নিজেদের আমলে সিপিএম ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়েছে। কোর্টকে সম্মান করি। তাই নার্গিসকে দাঁড় করিয়েছি।’’ যা শুনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, ‘‘অভিযোগ আদালতের রায়ে প্রমাণ হয়েছে। এখন উনি ‘বেচারা’ বলে সহানুভূতি দেখাচ্ছেন!’’ আর সোহরাবের বক্তব্য, ১৯৯৪-এ নির্দল প্রার্থী হিসেবে আসানসোল পুরসভার কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকেই বামেদের সঙ্গে তাঁর শত্রুতার শুরু। তাঁর কথায়, ‘‘ওই হার সিপিএমের হজম হয়নি। তাই আরপিএফের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে মিথ্যে মামলা করে। নেত্রী সত্যি কথাই বলেছেন।’’

গত বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হতেই সোহরাবের বিরুদ্ধে লোহা চুরির অভিযোগের কথা তুলে রানিগঞ্জে পোস্টার পড়েছিল। সিপিএমের বর্ধমান জেলা নেতৃত্বের দাবি, টাকা এবং পেশিশক্তির জোরে সে বার ভোটে উতরে যান সোহরাব। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের মন্তব্য, ‘‘সোহরাব সম্পর্কে সবই লোকে জানে। কিন্তু তৃণমূল নেত্রীর তাঁকে ঝেড়ে ফেলার উপায় নেই। তাই সোহরাবের স্ত্রী-কে টিকিট দিতে হয়েছে।’’

ঝেড়ে ফেলার উপায় নেই বলেই এ দিন এক মঞ্চে মমতার পাশে বসেছেন ছাঁট লোহার ব্যবসায়ী এবং রানিগঞ্জের ‘মাসলম্যান’-দের নিয়ন্ত্রক বলে পরিচিত সোহরাব। সভা চলাকালীন বহু বার নেত্রীর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফাসও করেছেন।

ঝেড়ে ফেলার উপায় নেই বলেই এক বার ‘লোক দেখানো’ বহিষ্কার করার পরে ভোটের মুখে দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে শিক্ষিকাকে জলের জগ ছুড়ে নাম কেনা আরাবুল ইসলামকে। দলে ফিরেছেন শিল্প সংস্থায় তোলাবাজিতে অভিযুক্ত অলোক দাসও। আর পুলিশকে বোমা মারার পরামর্শ দেওয়া অনুব্রত মণ্ডল বা প্রকাশ্য সভায় পায়ের তলা দিয়ে তিন ভাইকে পিষে মারার দাবি করা মনিরুল ইসলাম তো বরাবরই দলে রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

সোহরাবের পক্ষে মমতার সওয়ালের সূত্র ধরে রানিগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে শাসক দলের নেতাদের ঘনিষ্ঠতার আরও উদাহরণ তুলে ধরেছে বিরোধী শিবির। তাদের দাবি, বছর দু’য়েক আগে সিঙ্গাপুর সফরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা-র জনৈক ঘনিষ্ঠকে দেখা গিয়েছিল।

কয়লাই হোক বা কাঠ—এ ধরনের সিন্ডিকেটের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নিয়ে এ দিন বিঁধতে ছাড়েননি ভোট-প্রচারে রাজ্যে আসা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। আসানসোলে তিনি ‘কয়লাওয়ালাদের সিন্ডিকেট’ নিয়ে কটাক্ষ করেন। আর আলিপুরদুয়ারে টিপ্পনী কাটেন ‘চন্দনকাঠের সিন্ডিকেট’ (লাগোয়া কালচিনিতে তৃণমূলের প্রার্থী চন্দন-কাঠ পাচারে নাম জড়ানো উইলসন চম্প্রমারি) নিয়ে।মোদীর অভিযোগ, গোটা রাজ্যটাই জড়িয়ে গিয়েছে ‘সিন্ডিকেট জাল’-এ।

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy