প্রয়াত গনিখান চৌধুরীর বিধানসভা কেন্দ্রে লড়াই করছেন তাঁরই পরিবারের দুই সদস্য। তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন গনির ভাই আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু)। কংগ্রেস থেকে লড়ছে ভাইপো ইশা খান চৌধুরীর। এই কেন্দ্রের দখল নিতে মরিয়া দুই দলই। জেলার মধ্যে সুজাপুরকেই যেন পাখির চোখ করে নিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই কখনও তিনি নিজেই এই কেন্দ্রে প্রচার করেছেন। আবার কখনও তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার এখানে সভা করেছেন। তৃণমূল সুজাপুর দখলে মরিয়া প্রয়াস চালালেও নিজেদের গড় হাত ছাড়া করতে নারাজ কংগ্রেস নেতৃত্বরাও। তাই শেষবেলায় সনিয়া গাঁধীকে দিয়ে সভা করে বাজিমাত করতে চাইছে কংগ্রেস শিবির। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সব ঠিক থাকলে আগামী ১৩ এপ্রিল মালদহে আসবেন সনিয়া গাঁধী। সুজাপুরের হাতিবাগান মাঠে সভা করবেন তিনি। সর্বভারতীয় নেতৃত্বকে দিয়ে নির্বাচনের শেষ লগ্নে জনসভা করিয়ে নিজের গড় অটুট রাখার জন্য মাস্টার স্ট্রোক দিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল।
ফলে নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই সুজাপুর কেন্দ্র নিয়ে সরগরম হয়ে উঠছে মালদহের রাজনীতি। জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম নূর বলেন, ‘‘সুজাপুরে জনসভা করবেন আমাদের সর্বভারতীয় নেত্রী সনিয়া গাঁধী। এই কেন্দ্র থেকে বরকত মামা জিতে এসেছেন। মানুষের জন্য কাজও করেছিলেন তিনি। তাই মানুষ আমাদের পাশে রয়েছে। আর তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা যতই এখানে সভা করুক না কেন, তাতে কোন লাভ হবে না।’’ ফল্টো দিকে, সুজাপুর সহ মালদহে ঘাসফুলের জয় হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘শুধু সুজাপুর নয়, জেলার সমস্ত বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাকেই প্রচারে আনা হোক না কেন মানুষ উন্নয়নের স্বার্থে ভোট দেবেন আমাদের দলকেই।’’
১২টি গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে ১৯৬২ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে কংগ্রেস। ১৯৬৭ সাল থেকে ৭৭ সাল পর্যন্ত সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন প্রয়াত গনিখান চৌধুরী। কংগ্রেস একচেটিয়া ভাবে এই কেন্দ্রে জয়ী হয়ে আসছে। গত ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রয়াত গনিখানের ভাই আবু নাসের খান চৌধুরী (লেবু) সিপিএম প্রার্থী হাজি কেতাবউদ্দিনকে ১৭ হাজার ৩৩৬ ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। মাস ছ’য়েক আগে লেবুবাবু কংগ্রেস ছেড়ে যোগ দেন তৃণমূলে। এ বারে তিনি চেনা জায়গায় তৃণমূলের প্রতীকে লড়ছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ১২টি বিধানসভার মধ্যে এই কেন্দ্রকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার আগে থেকে এই কেন্দ্রে একাধিক বার সভা করেছেন তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। এপ্রিল মাসের শুরুতেই লেবুবাবুর সমর্থনে জনসভা করেছেন মমতা। সেই জনসভা থেকে লেবুবাবুকেই বরকতদার আদর্শ উত্তরসূরি বলে দাবি করেছেন তিনি। তৃণমূল নেত্রীর পরে এই কেন্দ্রে সভা করেছেন যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তৃণমূলের প্রত্যেক নেতাই এখানে জনসভা করে বরকতবাবুর আদর্শ উত্তরসূরি হিসেবে তুলে ধরেছেন লেবুবাবুকে।
তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলেন, সুজাপুর বরাবরই কংগ্রেসের গড় থেকেছে। এই কেন্দ্রের দখল নিতে মরিয়া নেত্রী। তাই এই কেন্দ্রে একের পর এক হেভিওয়েট নেতা-নেত্রী সভা করতে হাজির হচ্ছেন। তৃণমূলের প্রার্থী লেবুবাবু বলেন, ‘‘দল ও মানুষ আমার পাশে রয়েছে। রাজ্য নেতৃত্ব যে ভাবে আমাকে সহযোগিতা করছে তাতে আমি জয়ের বিষয়ে আশাবাদী।’’
তবে নিজেদের গড় ধরে রাখতে মরিয়া কংগ্রেসও। এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে বরকতবাবুর ভাইপো ঈশা খান চৌধুরীকে। ঈশাবাবু বৈষ্ণবনগরের বিধায়ক ছিলেন। তাঁকে ওই কেন্দ্র থেকে এনে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে দল। আর ঈশাবাবুর বিধায়ক হিসেবে বৈষ্ণবনগরে বেশ সুনাম রয়েছে। ফলে সুজাপুর বিধানসভাকেন্দ্রে কাকা ভাইপোর লড়াই জমে উঠেছে। তৃণমূলের একের পর এক হেভিওয়েট নেতা-নেত্রীর পাল্টা হিসেবে কংগ্রেস শেষ বেলায় সনিয়া গাঁধীকে দিয়ে জনসভা করাতে চাইছে এই কেন্দ্রে। কংগ্রেস প্রার্থী সুজাপুরের ঈশা বাবু বলেন, ‘‘সুজাপুরের মানুষ এখনও হাতের সঙ্গে রয়েছেন। তাই এখানে অন্য কোন দল প্রভাব ফেলতে পারবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy