গরমের ভেল্কি!
এই একেবার লু বইছিল বুধ-বৃহস্পতিবার। গায়ে বিঁধছিল গরম হাওয়া। শুক্রবার সকালেই অন্য চেহারা। ভোরে ঘুম ভাঙল মেঘলা আকাশ দেখে। কোথাও কোথাও টিপটিপ বৃষ্টিও পড়েছে। দিনের বেলা তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকলেও আর্দ্রতা তুঙ্গে উঠে অস্বস্তি বাড়িয়েছে।
লু-য়ের মাঝখানে অস্বস্তি বাড়াতে হঠাৎ মেঘের আবির্ভাব কেন? হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওড়িশায় একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়। সেখান থেকেই মেঘ এসে সামান্য বৃষ্টি ঝরিয়েছে। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হয়নি। ওই মেঘের জন্য এ’দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃহস্পতিবারের ৪০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে নেমেছে ৩৭.৬ ডিগ্রিতে। বাঁকুড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি থেকে নেমেছে ৪৩ ডিগ্রিতে। কিন্তু তাপপ্রবাহের পরিস্থিতির বদল হয়নি। আসানসোল, পানাগড়, বীরভূমের সর্বত্র তাপপ্রবাহ বয়েছে এ দিনও। আর প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থীরা।
আবহাওয়া দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, ঝাড়খণ্ড থেকে শুকনো গরম বাতাস বয়ে আসার ফলেই এমন নাকাল করা গরম পড়ছে। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে সকাল ন’টা থেকেই লু বইছে। অস্বাভাবিক এই গরমের প্রভাব পড়ছে ভোটের প্রচারেও। বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সোহমের প্রচারের শেষ লগ্নে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। ভোটের টানে হুডখোলা জিপে ঘুরলেও গাঢ় শেডের সানগ্লাসকে চোখছাড়া করছেন না সোহম। প্রচারের ফাঁকে গলা ভেজাচ্ছেন গ্লুকোজ কিংবা ডাবের জলে। বীরভূমের ময়ুরেশ্বরে আর এক তারকা বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় তো বলেই ফেললেন, ‘‘অসুস্থ হয়ে পড়ার মতো গরম। কিন্তু বসে থাকতে তো আর পারি না!’’ এ দিন দুপুরে ঘণ্টা দুয়েক বিশ্রাম নিয়েই ফের প্রচারে বেরিয়েছিলেন তিনি।
গরমের জ্বালা এমনই যে আসানসোলে প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীকে দেখতেও আগেভাগে হাজির হচ্ছেন না মানুষজন। নরেন্দ্র মোদী-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বেলা দু’টো পর্যন্ত খালিই ছিল মাঠ। তিনটের পরে রোদের তেজ কমায় জড়ো হয়েছিলেন কর্মী-সমর্থকেরা। দিন কয়েক আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সভায় মেরেকেটে হাজার খানেক লোক জড়ো হয়েছিল বটে, কিন্তু চাঁদিফাটা রোদে মাঠ ছেড়ে যে যার মতো আনাচ-কানাচে ছায়া খুঁজে নিয়েছিলেন সমর্থকেরা। মাঠ ভরাতে শেষে মাইকে ঘোষণা করতে হয় খোদ রাজনাথকেই!
পশ্চিমের জেলাগুলির মতো না হলেও কলকাতাতেও ভরদুপুরে ঘরবন্দি থাকছেন প্রার্থীরা। দমদমের তৃণমূল প্রার্থী ব্রাত্য বসুর মেনুতে এখন শুধুই পাতলা ঝোল-ভাত। তবে তাঁর কথায়, ‘‘প্রচারে বেরিয়ে আমি কিন্তু টুপি-সানগ্লাস পরছি না।’’ টালিগঞ্জের বাম প্রার্থী মধুজা সেনরায় বেলা এগারোটায় প্রথমার্ধের প্রচার শেষ করে ঢুকে পড়ছেন নেতাজিনগরের অস্থায়ী ডেরায়। ফের প্রচার শুরু করে থামছেন রাত দশটা-এগারোটায়। গরমের ঠেলায় প্রচারে বেরিয়ে প্রতীক আঁকা টুপিতে মাথা ঢাকছেন শ্যামপুকুরের জোড়াফুল প্রার্থী শশী পাঁজা। সঙ্গী লেবু চা-ডাবের জল।
খাস পশ্চিমাঞ্চল হোক বা মহানগরী, কর্মীদের ভোট ডায়েটও কিন্তু গরমের দাওয়াই। বাঁকুড়ায় যেমন ভোটের বাজারে সব থেকে কদর ভাত আর পোস্তর। সঙ্গে টক দই। দুর্গাপুরের এক নেতার কথায়, ‘‘রোদে বেরোতে হচ্ছে। তাই তিন বেলা শুক্তো, ডাল, ছোট মাছের ঝোলেই ভরসা রাখতে হচ্ছে।’’
মাত্রাছাড়া গরমে ডিউটির সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে কলকাতার ট্রাফিক পুলিশের কর্মীদের। শুক্রবার কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা জানান, আপাতত দিন ৮ ঘণ্টার বদলে ৬ ঘণ্টা ডিউটি করতে হবে তাঁদের। কাউকে টানা ডিউটিও করানো যাবে না। গরমের হাত থেকে বাঁচতে পুলিশকর্মীদের সানগ্লাস ও নেক কুলার ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। গরম এড়াতে ট্রাফিক পুলিশের ক্রসবেল্ট ব্যবহারও আপাতত বন্ধ। এ দিন দুপুরে পার্ক সার্কাস মোড়ে পুলিশকর্মীদের গ্লুকোজ, ছাতা ও ওআরএস বিলি করেন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার।
এই আবহাওয়া থেকে যে এখনই রেহাই মিলবে না, তা জানিয়ে দিয়েছে হাওয়া অফিস। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, ‘‘তাপমাত্রা ফের বাড়বে। পশ্চিমাঞ্চলে তাপপ্রবাহ চলবে। দিন কয়েকের মধ্যে কলকাতাতেও তাপপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।’’ হাওয়া অফিসের খবর, সোমবার ভোটের দিন বাঁকুড়া, বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুরে আগুন ঝরাতে পারে সূর্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy