শিলিগুড়িতে সিপিএম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্যের সমর্থনে মিছিলে সূর্যকান্ত মিশ্র।
বেলা তিনটেয় শেষ হয়েছে প্রচার পর্ব। আর সন্ধ্যা নামতেই উত্তরবঙ্গের নানা এলাকায় শোনা যাচ্ছে মোটর বাইকের গর্জন। অভিযোগ উঠেছে, ফরাক্কার এ পার থেকে অসম সীমান্ত পর্যন্ত সাত জেলায় বাইক বাহিনী (স্থানীয় লোকজন যাদের সংক্ষেপে বলছেন বা-বা) দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মালদহের ইংরেজবাজার, দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর, উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার, কালিয়াগঞ্জে কয়েকটি এলাকায় ফ্লেক্স, পতাকা খুলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের চা বলয়েও কিছু এলাকায় ধমকানো-চমকানোর পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। আর এই অভিযোগের দৌড়ে পিছিয়ে নেই শাসক, বিরোধী কেউ-ই।
উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় এমনিতেই কংগ্রেস যথেষ্ট শক্তিশালী। সিপিএমের সংগঠনও জোরদার। জোট হওয়ায় অধিকাংশ এলাকায় বাম-কংগ্রেসিরা সুর চড়িয়েছেন গোড়া থেকেই। তৃণমূলের নেতাদের অভিযোগ, বাম-কংগ্রেস জোটই নানা এলাকায় ধমকে-চমকে এলাকা দখল করতে সক্রিয় হয়েছে। আবার জোটের পাল্টা অভিযোগ, জিততে পারবে বুঝতে পেরে এখন মরিয়া তৃণমূল-ই হুমকি দিচ্ছে ভোটারদের।
জেলা পুলিশ-প্রশাসনের তরফে অবশ্য আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, নির্বিঘ্নে যাতে ভোট-পর্ব মেটে, সে জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীও পৌঁছে গিয়েছে। তবু আমজনতার আশঙ্কা পুরোপুরি কাটছে না। কারণ, অনেক এলাকাতেই পুলিশের বিরুদ্ধে দায়সারা কাজের অভিযোগ উঠছে। পুলিশের দাবি, প্রচার পর্ব শেষ হওয়ার পরেও একযোগে কোথাও একাধিক বাইক নিয়ে ঘুরতে দেখলেই আটক করে জেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি তথা উত্তরবঙ্গের আইজি নটরাজন রামবাবুও বাড়তি নজরদারির জন্য প্রতিটি থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু, খাস শিলিগুড়ির কাছেই মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি কেন্দ্রে প্রচারের পালা ফুরানোর পরে একযোগে ৮-১০টি বাইককে চা বাগানের মধ্যে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গিয়েছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। ফাঁসিদেওয়ার মেঠো পথেও রাত ৯টায় ১০-১৫টি বাইক নানা এলাকায় হট্টগোল করছে বলে অভিযোগ। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির এনজেপি এলাকায় ৪-৫টি বাইক একযোগে কয়েকটি ওয়ার্ডে ঘোরাঘুরি করছে বলে পুলিশের কাছে খবর গিয়েছে। শিলিগুড়ি কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, তল্লাশি চালিয়েও কোনও বাইক বাহিনীর হদিস মেলেনি।
চম্পাসারি এলাকাতেও একই ভাবে ‘বা-বা’ লুকোচুরি খেলছে পুলিশের সঙ্গে। এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, চম্পাসারি মেন রোড থেকে বা-বা ঢুকে পড়ছে অলিগলিতে। সেখানে ঢুকে বাছাই করা দোকান ও বাড়ির সামনে গিয়ে চেঁচামেচি করে হুমকি দিয়ে সরে পড়ছে। আলিপুরদুয়ারের কালচিনি, জয়গাঁয় তো ‘বা-বা’র দাপট আরও বেশি। সেখানে ৮-১০টি বাইক নিয়ে জাতীয় সড়কে দেখা যাচ্ছে একদল যুবককে। কখনও গ্রামে ঢুকে বাজার এলাকায় গিয়ে থামছে। চটজলদি প্রতিপক্ষের ফ্লেক্স, পতাকা, ফেস্টুন খুলে নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
পুলিশ-প্রশাসনের দাবি, প্রচার শেষ হওয়ার পরে কোনও জায়গা থেকে ফ্লেক্স খোলা, পতাকা নিয়ে যাওয়া বা বাইক বাহিনীর তাণ্ডব নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েনি। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকারের দাবি, তাঁরা বাইক বাহিনী দিয়ে দখলের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন। তাঁর অভিযোগ, বাইক বাহিনীর রাজনীতি আমদানি করেছে সিপিএম। তিনি বলেন, ‘‘মাটিগাড়া-নকশালবাড়িতে আমাদের ফ্লেক্স খুলে দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে জানিয়েছি।’’ এই অভিযোগ উড়িয়ে সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার উল্টে দাবি করেন, ‘‘গোড়ায় আমাদেরই ফ্লেক্স খোলা হয়েছিল। এখন প্রচার শেষ। আর চমকানো-ধমকানোর চেষ্টা করলে লাভ হবে না। কারণ, মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।’’
মালদহ জেলা থেকেও একই অভিযোগ উঠেছে। জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সাংসদ মৌসম নূর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের দারস্থ হব।’’ অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের পাল্টা দাবি, ‘‘বাম-কংগ্রেস জোট বেঁধে আমাদের সব পতাকা ফেস্টুন খুলে ফেলছে। বাইক নিয়ে সন্ধের পর এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।’’ মালদহের জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদী বলেন, ‘‘অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক ও মনোজ মুখোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy