প্রতীকী ছবি।
একে গরমকাল, তায় ভোট মরসুম। শিবির কমেছে। ফলে, হুগলির ব্লাডব্যাঙ্কগুলিতে রক্তের আকাল শুরু হয়ে গিয়েছে।
বিভিন্ন হাসপাতাল কোনও রকমে অন্তর্বিভাগে রোগীদের রক্ত জোগান দিচ্ছে। কিন্তু অন্য হাসপাতাল বা নার্সিংহোম থেকে রক্তের খোঁজে আসা লোকজনকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। নির্বাচন-পর্ব শেষ হওয়া পর্যন্ত সঙ্কট আদৌ কতটা মিটবে, তা নিয়ে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ সন্দিহান।
বিভিন্ন ব্লাডব্যাঙ্কের আধিকারিকদের বক্তব্য, গরমে রক্তদান শিবির কম হওয়ায় রক্তের আকাল থাকেই। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনা পরিস্থিতি। সংক্রমিত কেউ রক্ত দিতে পারবেন না। টিকাকরণের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় টিকা নেওয়ার পরে এক মাস পর্যন্ত রক্ত দেওয়া যাবে না। এর সঙ্গেই রয়েছে নির্বাচন-পর্ব। নিয়ম অনুযায়ী ভোট-পর্ব চলাকালীন কোনও রাজনৈতিক দল রক্তদান শিবির করতে পারে না। অর্থাৎ, সার্বিক পরিস্থিতির প্রভাবই পড়েছে ব্লাডব্যাঙ্কে। এপ্রিল এবং মে মাসে রক্তদান শিবিরের আয়োজন বিশেষ নেই।
আরামবাগ হাসপাতালে অন্তর্বিভাগে ভর্তি রোগীদের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৪০ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। হুগলির বিভিন্ন এলাকা বাদেও পার্শ্ববর্তী পূর্ব বর্ধমান বা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন নার্সিংহোমের রক্তের বিপুল পরিমাণ চাহিদা মেটায় এই হাসপাতাল। চাহিদা যেখানে এই পর্যায়ে, সেখানে এখন প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ ইউনিটের বেশি রক্ত মজুত থাকছে না বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। ফলে, অন্য হাসপাতাল বা নার্সিংহোম থেকে আসা লোকজন খালি হাতে ফিরছেন। অনেক ক্ষেত্রে রক্তদাতা জোগাড় করে এনে রক্তের বিনিময়ে রক্ত নিয়ে যেতে হচ্ছে।
শ্রীরামপুর ওয়ালশ এবং চন্দননগর হাসপাতালে অন্তর্বিভাগের রোগীদের জন্য রক্ত দেওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বাইরে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এপ্রিলে ওয়ালশের তিনটি শিবির রয়েছে। চন্দননগর হাসপাতালের আগামী রবিবার একটি শিবির রয়েছে।
হুগলির চারটি সরকারি ব্লাডব্যাঙ্কের মধ্যে একমাত্র চুঁচুড়া ইমামবাড়া সদর হাসপাতালে রক্ত পৃথকীকরণের ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে, এক ইউনিট রক্ত ভেঙে একাধিক রোগীকে দেওয়া যায়। রক্তের অভাব এখানেও আছে। অন্তর্বিভাগে ভর্তি রোগীদের রক্তের জোগান দেওয়া যাচ্ছে। অন্য হাসপাতাল-নার্সিংহোমের ক্ষেত্রেও দেওয়া হচ্ছে। তবে, রক্তের বিনিময়ে রক্ত নিতে অনুরোধ
করা হচ্ছে।
এই ব্লাডব্যাঙ্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বিদ্যুৎ ঘোষ বলেন, ‘‘যে হেতু শিবির খুবই কম হচ্ছে, সেই কারণে আত্মীয়-পরিজনের জন্য যাঁরা রক্ত নিতে আসবেন, তাঁরা যদি হাসপাতালেই নিজেরা রক্ত দেন, তা হলে জোগান মোটামুটি ঠিক থাকবে। না হলে সমস্যা বাড়বে।’’ এক ব্লাডব্যাঙ্ক-আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের একাংশ শুরুতেই রক্তের কথা লিখে দেন। তার বদলে ওষুধ দিয়ে একটু দেখা যেতে পারে। অথবা যে টুকু প্রয়োজন, তাঁর বেশি যেন না লেখেন। এই সচেতনতা দরকার।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কম-বেশি সঙ্কট সব ব্লাডব্যাঙ্কেই আছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনে ব্লাডব্যাঙ্কের তরফে বিভিন্ন ক্লাব-সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। যাতে তেমন হলে তাঁরা অন্তত হাসপাতালে গিয়েও রক্তদান (ইনহাউজ ক্যাম্প) করতে পারেন।’’
শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে রক্ত পৃথকীকরণ ব্যবস্থা-সহ ব্লাডব্যাঙ্ক রয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, ব্লাডব্যাঙ্ক কার্যত শূন্য। শুধু কয়েকটি প্লাজ়মা রয়েছে, যা নির্দিষ্ট কিছু রোগীর প্রয়োজন হয়। আগামী রবিবার দু’টি শিবির রয়েছে। কিন্তু তার পরে শিবিরের আবেদন এখনও জমা পড়েনি।
এই অবস্থায় কী করে সঙ্কট মিটবে, চিন্তা বাড়ছেই।
তথ্য সহায়তা: পীযূষ নন্দী ও তাপস ঘোষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy