বীরপাড়ায় নরেন্দ্র মোদীর সভাস্থল পরিদর্শনে সিদ্ধার্থনাথ সিংহ ও বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী।
বাম-কংগ্রেস জোটের ধাক্কায় মাদারিহাট আসনকে ‘পাখির চোখ’ হিসেবে দেখাটা কতটা ঠিক হচ্ছে সেই প্রশ্নে বিজেপির অন্দরেই নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। কারণ, রাত পোহালে বৃহস্পতিবার মাদারিহাটের অদূরে বীরপাড়ায় সভা করার কথা বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। ওই দিনই শিলিগুড়ির গোঁসাইপুরে সভা করবেন মোদী। বীরপাড়া থেকে অন্ডালে সভা করতে যাবেন মোদী। ফেরার পথে শিলিগুড়ি ছুঁয়ে দিল্লি উড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে তাঁর। বিজেপির একটি সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের একাধিক এলাকায় সভা করতে আগ্রহী ছিলেন স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশ। কিন্তু, বীরপাড়া-মাদারিহাট আসনের নানা অঙ্ক মাথায় রেখে বীরপাড়ায় সেটি করার ব্যাপারে দলের স্থানীয়দের অনেকেই মত দেন বলে সূত্রের খবর।
নরেন্দ্র মোদীর সভার প্রস্তুতি দেখতে উত্তরবঙ্গে পৌঁছেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। তিনি শিলিগুড়িতে পৌঁছে সিপিএম, কংগ্রেস ও তৃণমূলের দিকেই তোপ দেগেছেন। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের আমলে যে উড়ালপুল ভেঙেছে, তার দায় বাম সরকারেরও। তিন বছর ধরে বামেরা একটি কালো তালিকাভুক্ত সংস্থাকে দিয়ে কাজ করিয়েছে। বাম এবং তৃণমূল দু’দল রাজ্যকে পতনের দিকে নিয়ে গিয়েছে। এখন নারদ ভিডিও ফুটেজ নিয়ে বামেরা নামমাত্র আন্দোলন করছে। বাম-তৃণমূলেরই জোট হয়েছে। মোদীজি বক্তব্যে এই বাম-তৃণমূল অশুভ জোট ভেঙে উন্নয়নের দিশা দেখাবেন।’’
বিজেপি নেতারা কয়েকজন জানান, মাদারিহাটে গত বিধানসভা ভোটে দ্বিতীয়স্থানে ছিল বিজেপি। সে বার বাম প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। শতাংশের হিসেবে ৪ শতাংশের কিছু ভোটে বিজেপি পিছিয়ে ছিল। বিজেপি নেতাদের দাবি, সে বার রাজ্যে বিজেপির কোনও ‘হাওয়া’ ছিল না। উল্টে বাম বিরোধী হাওয়ায় কংগ্রেসকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে বিজেপি দ্বিতীয়তে উঠে এসেছিল। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে মাদারিহাটে বিজেপি প্রার্থী ২৪ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে ছিলেন। এই অঙ্ক মাথায় রেখে গত বিধানসভায় মাদারিহাটে জোর লড়াই দেওয়া তরুণ নেতা মনোজ টিগ্গাকেই প্রার্থী করেছে বিজেপি।
হেলিকপ্টারে মহড়া দিয়ে সভার প্রস্তুতি। মঙ্গলবার রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।
কিন্তু, দলের অনেকেই মনে করছেন, বিজেপির কষে রাখা অঙ্কে ‘জল’ ঢেলেছে জোট। লোকসভা ভোটের মতো এবারে ‘মোদী হাওয়া’ নেই। তার জেরে গত লোকসভার ভোট যে ধরে রাখা সম্ভব নয় তা মানছেন বিজেপি নেতারাও। হালে বিজেপির নীচুতলার একাংশ এলাকায় বাম-কংগ্রেস জোটের দিকে ঝুঁকতে শুরু করায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন স্থানীয় বিজেপি নেতাদের অনেকেই। সেই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীকে এনে কিছুটা উদ্দীপিত হওয়ার চেষ্টা করছেন তাঁরা। তবে বীরপাড়া-মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্রে ১১টি চা বাগান অচল হয়ে রয়েছে। বিজেপি সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী কয়েকটি বাগান অধিগ্রহণের নির্দেশ দিলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি। ফলে, চা বাগানের একাংশ আশাহত।
তাই আলিপুরদুয়ারের সিপিএমের জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপির এত উল্লসিত হওয়ার কারণ নেই। রাজ্যে মানুষের জোট হয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব ভোট জোটের পক্ষেই পড়বে। সেখানে বিজেপির কোনও জায়গা নেই।’’ আলিপুরদুয়ারের সিপিএম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বরঞ্জন সরকারও বিজেপির ভূমিকার সমালোচনায় সরব হয়ে বলেন, ‘‘আচ্ছে দিন আসবে বলার পরে কী হয়েছে তা দেখছেন চা বলয়ের মানুষও। বন্ধ বাগান খোলা নিয়ে নাটক হচ্ছে। চা শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে রাজনীতির দিন শেষ হতে চলেছে। মানুষ জোট বেঁধেছেন। কপ্টার উড়িয়ে নেতা-নেত্রীদের এনে জোটবদ্ধ মানুষের মন পাল্টানো যাবে না।’’
ঘটনাচক্রে, তৃণমূলও বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন থাকলেও চা বাগানের জনয কিছু করেনি কেন সেই প্রশ্নে সরব হয়েছেন আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল প্রার্থী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে এনে ভাল দিন আনার ফাঁকা বুলিয়ে শুনিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা কেউ মেনে নেবেন না। মানুষ আমাদের সঙ্গেই ছিলেন ও থাকবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy