(বাঁ দিকে) শিলিগুড়ির গোঁসাইপুরে নরেন্দ্র মোদীর সভাস্থল পরিদর্শনে সিদ্ধার্থনাথ সিংহ ও অহলুওয়ালিয়া। (ডান দিকে) চলছে প্রধান মন্ত্রীর সভার প্রস্তুতি। মঙ্গলবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
লোকসভায় ছিল। এ বার পালে আর সেই হাওয়া নেই। তবু লোকসভা ভোটের ফলের উপরে ভরসা করেই মাদারিহাট আসনে বাড়তি গুরুত্ব দিতে চাইছেন বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। আর সে কারণে এই আসনে প্রচারে আসবেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু একটা কথা ভেবে এখন কপালে ভাঁজ বিজেপি নেতাদের— জোটের হাওয়ায় না শেষ পর্যন্ত দৌড়ে ছিটকে যেতে হয়! তা হলে প্রধানমন্ত্রীকে প্রচারে আনাও জলে যাবে। এই অবস্থায় তাই তারা মরিয়া, যে ভাবেই হোক মোদীর সভার ফসল তুলতে হবে।
যদিও কী ভাবে জোটের হাওয়া ঠেকাবেন, সেই সূত্র এখনও জানা নেই বিজেপির। তাঁরা শুধু চাইছেন, কাল, বৃহস্পতিবার মোদী এখানে এমন হাওয়া তুলুন যাতে জোট-প্রচারকে ঠেকিয়ে ফোটো ফিনিসে ম্যাচ বের করে গেরুয়া ব্রিগেড।
রাত পোহালেই আসছেন মোদী। সভা করবেন মাদারিহাটের অদূরে বীরপাড়ায়। ওই দিন পরে শিলিগুড়ির গোঁসাইপুরেও সভা করার কথা তাঁর। বিজেপির একটি সূত্রের খবর, মোদীর সভার জন্য জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ারের একাধিক জায়গার নাম নিয়ে চিন্তাভাবনা হয়। শেষে মাদারিহাট আসনের নানা অঙ্ক মাথায় রেখে বীরপাড়ায় সভা করার বিষয়েই বেশির ভাগ মত দেন।
কেন এখানে আশা দেখছে বিজেপি? দলের কয়েক জন নেতা জানান, মাদারিহাটে গত বিধানসভা ভোটে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বিজেপি। সে বার বাম প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। দু’দলের মধ্যে ৫ শতাংশের ব্যবধান ছিল। বিজেপি নেতাদের দাবি, সে বার রাজ্যে ছিল বাম-বিরোধী জোটের হাওয়া। তা সত্ত্বেও তখনকার জোট সঙ্গী কংগ্রেসকে তৃতীয় স্থানে ঠেলে দিয়েছিল তারা। গত লোকসভা ভোটে মোদী হাওয়ায় ভর করে মাদারিহাট বিধানসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী বাম প্রার্থীর থেকে প্রায় ২৪ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, সেই নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের ভোট এক করলেও বিজেপির ভোট তার থেকে ১৪ হাজার বেশি। এই অঙ্ক মাথায় রেখে গত বিধানসভায় মাদারিহাটে জোর লড়াই দেওয়া তরুণ নেতা মনোজ টিগ্গাকেই প্রার্থী করেছে বিজেপি।
কিন্তু, দলের মধ্যেই পাল্টা যুক্তিও রয়েছে। প্রথমত, লোকসভায় যে মোদী হাওয়ায় সওয়ার হয়েছিল বিজেপি, এ বার তার ছিটেফোঁটাও নেই। সেটা বিজেপি নেতারাও মানছেন। দ্বিতীয়ত, জোটের প্রচার ও বিক্রম দিন দিন বাড়ছে। তার প্রভাব এর মধ্যেই পড়তে শুরু করেছে এলাকায়। দলের নিচুতলার একাংশ জোটের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। ফলে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন স্থানীয় বিজেপি নেতাদের অনেকেই।
এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীকে এনে কর্মীদের মধ্যে কিছুটা উৎসাহ বাড়াতে চাইছেন তাঁরা। তবে মাদারিহাট বিধানসভা কেন্দ্রে ১১টি চা বাগান অচল হয়ে রয়েছে। বিজেপি সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী কয়েকটি বাগান অধিগ্রহণের নির্দেশ দিলেও তা এখনও কার্যকর হয়নি। ফলে, চা বাগানের একাংশ আশাহত। আলিপুরদুয়ারের সিপিএমের জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই সুর টেনে বলেন, ‘‘বিজেপির এত উল্লসিত হওয়ার কারণ নেই। রাজ্যে মানুষের জোট হয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব ভোট জোটের পক্ষেই পড়বে। সেখানে বিজেপির কোনও জায়গা নেই।’’ আলিপুরদুয়ারের সিপিএম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বরঞ্জন সরকারও বিজেপির ভূমিকার সমালোচনায় সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘অচ্ছে দিন আসবে বলার পরে কী হয়েছে তা দেখছেন চা বলয়ের মানুষও। এখন মানুষ জোট বেঁধেছেন। কাজেই বিমান, হেলিকপ্টার উড়িয়ে নেতা-নেত্রীদের এনে জোটবদ্ধ মানুষের মন
পাল্টানো যাবে না।’’
চা বাগান নিয়ে বিজেপির সমালোচনা শোনা গিয়েছে আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল প্রার্থী সৌরভ চক্রবর্তীর মুখেও। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে এনে ভাল দিন আনার ফাঁকা বুলিয়ে শুনিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা কেউ মেনে নেবেন না।’’
যদিও বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ তা মনে করেন না। নরেন্দ্র মোদীর সভার প্রস্তুতি দেখতে আসা সিদ্ধার্থ বলেছেন, ‘‘আসল জোট হয়েছে বাম-তৃণমূলের। কারণ, নারদ ভিডিও ফুটেজ নিয়ে বামেরা তো নামমাত্র আন্দোলন করেছে। মোদীজি এই অশুভ জোট ভেঙে উন্নয়নের দিশা দেখাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy