Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Election 2021

মনীষীর খোঁজে জেলায় জেলায় চলছে অভিযান

ভিন রাজ্য থেকে আসা নেতাদের কড়া নজরদারিতে দলের ব্লক-ভিত্তিক শাখা বা মণ্ডলেও, রীতিমতো ‘চার্জশিট’ তৈরি করে এলাকায় মনীষীদের স্মৃতির হিসেব-নিকেশের ধুম!

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৫০
Share: Save:

শৌর্যাঞ্জলী (ভুল)। শৌর্যাঞ্জলি (ঠিক)। জাতীয় গ্রন্থাগার চত্বরে বিচিত্র বানানে পাশাপাশি সাজানো শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ। যেখানে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিস্মৃত নায়কদের নিয়ে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করতে এসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণপত্রে ‘আনসাং হিরো’ শব্দটাও অদ্ভুত বাংলা অনুবাদে হয়ে গিয়েছিল ‘অসন্তুষ্ট নায়ক’।

এ সব ভুলচুকে রঙ্গব্যঙ্গ চললেও ভোট-আবহে পিছু হটার পাত্র নয় বিজেপি। প্রধানমন্ত্রীর মুখে রবীন্দ্রনাথ বা সুভাষচন্দ্রের উদ্ধৃতিতে বঙ্গবন্দনার পরে চলছে স্থানীয় স্তরে পরিচিত বরণীয় বাঙালিদের স্মৃতি উসকে দেওয়া রাজনীতি। ভিন রাজ্য থেকে আসা নেতাদের কড়া নজরদারিতে দলের ব্লক-ভিত্তিক শাখা বা মণ্ডলেও, রীতিমতো ‘চার্জশিট’ তৈরি করে এলাকায় মনীষীদের স্মৃতির হিসেব-নিকেশের ধুম!

হুগলির সাহাগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতাতেও শোনা গিয়েছে, স্বদেশি যুগের নায়ক মতিলাল ঘোষ, রাসবিহারী বসু, বিপিনবিহারী গঙ্গোপাধ্যায়, কানাইলাল দত্ত, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। এর আগে অমিত শাহও মেদিনীপুরে বিদ্যাসাগর, ক্ষুদিরাম, মাতঙ্গিনী হাজরাদের কথা বলেছিলেন। বিজেপি-র অন্যতম মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের অবশ্য দাবি, ‘‘স্বাধীনতা-সংগ্রামের বীরদের বিষয়ে বিজেপি বরাবরই দেশের সর্বত্র শ্রদ্ধাশীল। এখন এ রাজ্যে আমাদের দৃশ্যমানতা বেড়েছে। ভোটের সময়ে দলকে নিয়ে চর্চাও বেশি হচ্ছে বলে চোখে পড়ছে।’’ শমীকবাবুর দাবি, জাতীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের অনুষ্ঠানে বাংলার ৪০০র বেশি স্বাধীনতা-সংগ্রামীর বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে বিজেপি-র কয়েক জন উৎসাহী কর্মকর্তাই রয়েছেন। আজ, বৃহস্পতিবার নৈহাটির বন্দেমাতরম-ভবন ঘিরে কর্মসূচি রয়েছে বিজেপি-র জাতীয় সভাপতি জে পি নড্ডারও। শমীকবাবুর কথায়, ‘‘এও বিজেপি-র নতুন কর্মসূচি নয়। মুরলীমনোহর জোশী, রাজনাথ সিংহও ওই বাড়িতে গিয়েছেন।’’

শোনা যাচ্ছে, নৈহাটিতে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, কেশবচন্দ্র সেন থেকে সুকান্ত ভট্টাচার্য, সমরেশ বসুকেও শ্রদ্ধা জানাবে বিজেপি। এ বিষয়ে মতাদর্শগত বিভেদও তারা মানছে না। ‘‘বাংলার সংস্কৃতি বা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, দু’টির সঙ্গেই বিজেপি-র যোগ সূদূরতম’’, বলছিলেন ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায়। ‘‘তাই হয়তো বাছবিচার না-করে সবাইকেই কাছে টানার চেষ্টা।’’ রজতবাবুর মতে, ‘‘মনীষীদের শ্রদ্ধা জানাতে বাধা নেই। কিন্তু বিজেপি-র মতাদর্শগত প্রেরণা যাদের থেকে এসেছে, সেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ স্বাধীনতা-যুদ্ধে অংশই নেয়নি। হিন্দু মহাসভারও ব্রিটিশ-বিরোধী ভূমিকা ছিল না। সঙ্ঘ বরং ইংরেজ নয় মুসলিমদেরই দেশের শত্রু ঠাওরেছে।’’

বাম আমলে রাজনীতির মধ্যে মনীষী-চর্চা নিয়ে প্রচার অত চড়া সুরে ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই তাতে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এখন এলাকা ধরে ধরে স্থানীয় স্তরের বরণীয়দের খুঁজে বার করার রাজনীতিতে জোর দিচ্ছে বিজেপি। ইতিহাসবিদ সুগত বসুর মতে, ‘‘বিজেপি তো পোর্ট ব্লেয়ার বিমানবন্দরের নামকরণই করেছে বীর সাভারকরের নামে, যিনি মুচলেকা দিয়ে সেলুলার জেল থেকে বেরোনর পরে ব্রিটিশ-বিরোধিতার নামগন্ধ করেননি। সাভারকর-স্তুতির আড়ালে আন্দামানের বীর বাঙালি বিপ্লবীদের কীর্তি বরং তারা ঢেকেই দিয়েছে।’’ শমীকবাবুর অবশ্য দাবি, ২০০৯এ দিল্লিতে তাঁরাও আন্দামানের বিপ্লবীদের নিয়ে প্রদর্শনী করেছিলেন। তবে সুগতবাবুর প্রশ্ন, ‘‘এই বিপ্লবীদের আদর্শ কি ওঁরা গ্রহণ করেছেন? দীনেশ গুপ্ত ফাঁসির আগে বৌদিকে লেখা চিঠিতে গরু বা অন্য ধর্মীয় কারণে হিন্দু-মুসলমানে মারামারি করছে বলে আফশোস করেছেন! সব ধর্মকেই সমান চোখে দেখার শিক্ষা ওঁরা দিয়ে গিয়েছেন। সেই আদর্শই তো ওঁরা পদে পদে ক্ষুণ্ণ করে চলেছেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy