ডেরেক ও'ব্রায়েন।
অন্য বুথের ভোটারকে বিধানসভা কেন্দ্রের যে কোনও বুথে এজেন্ট করা যাবে না। এই দাবি নিয়ে এ বার দিল্লির নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হল তৃণমূল। এ ক্ষেত্রে তাদের হাতিয়ার হল বিজেপি নেতা মুকুল রায় ও শিশির বাজোরিয়ার কথপোকথনের টেপ। রবিবার তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও'ব্রায়েন বুথের ভোটারকেই এজেন্ট করার দাবি নিয়ে দিল্লির মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে চিঠি পাঠালেন। এই চিঠির যথেষ্ট তাৎপর্য রয়েছে বলেই মনে করছেন বাংলার রাজনীতির কারবারিরা। তাঁদের ব্যাখ্যায়, শনিবার বুথে এজেন্ট বসানো সংক্রান্ত মুকুল-শিশিরের যে কথোপকথনের টেপটি প্রকাশ্যে এসেছে সেই বিষয়টি নিয়ে কমিশনের উপর চাপ তৈরি করতে চাইছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। এই সুযোগে কমিশন যাতে বিজেপির দাবি খারিজ করে তৃণমূলের যুক্তিটি মেন নেয়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতেই কালবিলম্ব না করেই দিল্লির কমিশনের শীর্ষ কর্তাকে পত্রাঘাত করেছে তৃণমূল। উল্লেখ্য, শনিবার রাজ্যের প্রথম ভোটগ্রহণের দিনেই তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দলের ১০ সাংসদের প্রতিনিধি দল কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের দফতরে যায়। সেখানেই কমিশনের আধিকারিকদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁদের হাতে একটি লিখিত প্রতিবাদপত্র তাঁরা তুলে দেন। সেই চিঠিতে তৃণমূল দাবি করেছিল, অন্য বুথের ভোটারকে বিধানসভা কেন্দ্রের যে কোনও বুথে এজেন্ট করার যাবে না। অন্য বুথ থেকে এজেন্ট এনে বসানোর যে দাবি বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়েছিল প্রথম দফায় সেই নিয়ম কমিশন কার্যকর করলেও, পরের ৭টি দফায় যেন সেই নিয়ম তুলে নেওয়া হয়। পরে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে সুদীপ বলেছিলেন, ‘‘আমাদের ভোটগ্রহণ ব্যবস্থার মধ্যে এমন একটা পদ্ধতি ছিল যে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ভোট হচ্ছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পোলিং এজেন্টকে সেই বুথের অধীনেই ভোটার হতে হবে। এই পদ্ধতিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ছিল। তার কারণ, এক দলের এজেন্ট অন্য দলের এজেন্টকে চিনত। ফলে পরিবেশ কিছুটা হলেও ভাল হতে পারত। এলাকা থেকে যাঁরা ভোট দিতে আসছেন, তাঁদেরকে চিহ্নিত করা সহজতর হত।’’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘এ বার বিজেপি-র পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি করা হয়েছে, যেন সমস্ত বিধানসভা এলাকায় যে কোনও প্রান্ত থেকে দল যাঁকে মনে করবে তাঁকে বুথ এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করতে পারে। এবং সেটা গৃহীত হয়েছে।’’
এর পরেই তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে অন্য জায়গার একজনকে যখন বসানো হবে, সেই বুথের মধ্যে সেই ব্যক্তিকে এলাকার মানুষ চিনবেন কী ভাবে?’’ নিজেদের আশঙ্কা প্রসঙ্গে সুদীপ বলেছেন, ‘‘আমাদের তরফ থেকে বলা হয়েছে, তিনি যে ওই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের অন্য কোনও বুথ থেকে আসছেন, প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে সমস্ত তথ্য বা কাগজপত্র থাকছে না। দ্বিতীয় দফা থেকে শেষ দফা পর্যন্ত বুথের ভোটারকেই এজেন্ট করার দাবি নিয়ে আমরা সাক্ষাৎ করেছি।’’
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, যে নিয়মটি পরিবর্তন করা হয়েছিল তা হল-- বুথ এজেন্টের সেই অঞ্চলের বাসিন্দা বা পার্শ্ববর্তী বুথের সংলগ্ন অঞ্চলের বাসিন্দা হতে হবে। তবে নতুন নিয়ম অনুসারে বুথ এজেন্টরা নির্বাচনী এলাকার যে কোনও জায়গা থেকে আসতে পারেন। শনিবার ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটিতে স্পষ্ট, হিসাবে অনেকগুলি আসনে বিজেপির বুথ এজেন্ট না থাকার কারণে এটি করা হয়েছিল!অন্য কোনও পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ হয় নি। প্রসঙ্গত, মুকুল-শিশির অডিয়োটিতে শোনা যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিজেপি প্রতিনিধি দলের '২১ তারিখের’ আলোচনার প্রসঙ্গ। মুকুল সেখানে শিশিরকে জানাচ্ছেন, ভোটগ্রহণের দিন ‘যে কোনও লোক যাতে যে কোনও বুথে পোলিং এজেন্ট হতে পারেন’ নির্বাচন কমিশনে তদ্বির করে তা নিশ্চিত করতে হবে। জানিয়েছেন, শিশিরদের সঙ্গে তিনিও যাবেন নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করতে। মুকুলকে সেখানে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘তুমি আমার হয়ে দুটো পয়েন্ট করে দাও।’’ মুকুলের প্রথম পয়েন্ট, ‘‘বাংলায় আমরা চাইব, এজেন্ট হওয়ার জন্য কোনও নির্দিষ্ট কোনও নিয়মনীতি রাখলে হবে না। যে পারবে, যে কোনও বুথে সে এজেন্ট হতে পারবে।’’ শিশিরকে মুকুলের অনুরোধ ছিল, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার হলেই যাতে ভোটের দিন রাজ্যের যে কোনও বুথে এজেন্ট হওয়া যায়, নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করে তা নিশ্চিত করতে হবে। আবেদনের ভিত্তিতেই যে তা নিশ্চিত করা যাবে সে বিষয়টি শিশিরকে ব্যাখ্যা করে মুকুল বলেছেন, ‘‘এটা তো অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ (প্রশাসনিক) অর্ডারে হয়। এর জন্য কোনও লিখিত আইন নেই। এটা বলতে হবে এবং মুখে ‘এক্সপ্লেন’ (ব্যাখ্যা) করতে হবে, কেন এটা চাইছি।’’ এই অডিয়ো টেপের সত্যতা অবশ্য আনন্দবাজার ডিজিটাল যাচাই করেনি। শিশিরের সঙ্গে তাঁর ফোনালাপের অডিয়োর বিষয়ে মুকুল শনিবার বলেন, ‘‘ওই টেপটি ফেক (জাল)।’’ কিন্তু নির্বাচনের বাজারে এই ইস্যুটিকে হাতছাড়া করতে নারাজ বাংলার শাসকদল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy