প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের ‘স্বপ্নের বাংলা’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সোমবার রাজ্য কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনে দু’পাতায় ৮ অঙ্গীকার করে এই ইস্তাহারটি প্রকাশ করেছেন তিনি।
বাংলায় নিজেদের দলীয় ইস্তাহারকে বিজেপি নাম দিয়েছে ‘সংকল্পপত্র’। কংগ্রেস নাম দিয়েছে ‘বাংলার দিশা’। বাংলাকে দিশা দেখাতে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্রের করে যাওয়া কর্মকাণ্ডের উপরেই আস্থা রেখেছেন দলের বর্তমান সভাপতি। তাই ইস্তাহারের প্রথম পাতাতে সনিয়া-রাহুল-প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর সঙ্গে একেবারে উপরের দিকে ব্যবহার করা হয়েছে বিধানচন্দ্রের ছবি এবং একটি উদ্ধৃতি। সেখানে লেখা, ‘আমার তরুণ বন্ধুরা, আপনি স্বাধীনতার যুদ্ধের সৈনিক— আপনি মুক্তি চান ভয়, অজ্ঞতা, হতাশা এবং অসহায়তা থেকে। নিঃস্বার্থ সেবার দৌড়ে দেশের জন্য কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে আপনি আশা ও সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যেতে পারেন’।
এত বছর পর কেন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রীর শরণ? জবাবে অধীর বলেছেন, ‘‘মাত্র ১৪ বছর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বিধানবাবু। সেই ১৪ বছরেই রাজ্যের সব ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। যার সুফল আমরা আজও পাচ্ছি। সেই সময় বিদেশি বিনিয়োগ ছিল না। তা সত্ত্বেও কল্যাণী, দুর্গাপুর, আসানসোলের মতো শিল্পনগরী গড়েছিলেন। দেশভাগের পর উদ্বাস্তু সমস্যাও তাঁকে সামাল দিতে হয়েছিল। সেই সমস্যারও সমাধান করেছিলেন। পরিবহণ নিগম গঠন করে সাধারণ মানুষের সমস্যাও মিটিয়েছিলেন। আরও কত কী!’’ বিধানচন্দ্রের আমলের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ১০ বছরের শাসনকালের তুলনা টেনে অধীরের তোপ, ‘‘শেষ ১০ বছরে বাংলা ভিন্রাজ্যে শ্রমিক পাঠানোর জায়গা হয়ে গিয়েছে। অথচ এই বাংলা এক সময় শিল্প সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিল। আয়ের নিরিখে ৩৬টি রাজ্যের মধ্যে বাংলার স্থান ২৩-এ। আর মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, মানুষের আয় দ্বিগুণ, তিন গুণ হয়েছে। যদি এই দাবিতে ন্যূনতম সত্যতা থাকে তা হলে একটি ভোটও কেউ কংগ্রেসকে দেবেন না। এগুলো হয়নি বলেই আমরা বিধানবাবুর মতো স্বপ্নের বাংলা গড়তে চাইছি।’’
প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ থেকে এখনও পর্যন্ত বাংলায় চার জন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ১৯৪৮ সালের ২৩ জানুয়ারি মহাত্মা গাঁধীর নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদের দায়িত্ব নেন বিধানবাবু। প্রথম বার এই পদে মনোনীত হলেও, তার পর ১৯৫২ ও ৫৭ সালে দু’বার জিতে মুখ্যমন্ত্রী পদে প্রত্যাবর্তন হয় তাঁর। ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বৌবাজার ও শালতোড়া কেন্দ্র থেকে জিতে তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু ওই বছরই ১ জুলাই নিজের জন্মদিনের দিন প্রয়াত হন বিধান চন্দ্র। প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ, প্রফুল্লচন্দ্র সেন ও সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ও বিভিন্ন সময় কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু নিজেদের কার্যকালে এঁদের কেউই বিধানচন্দ্রের উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেননি। তাই নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে তাঁর ছবিকে কাজে লাগিয়েই ইস্তাহার প্রকাশ করে ভোটের সুফল পেতে চাইছে বাংলার কংগ্রেস।
মূলত আটটি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে কংগ্রেসের ইস্তাহারে। সেগুলি হল যথাক্রমে আইনের শাসন ও মহিলা নিরাপত্তা, সামাজিক সুরক্ষা, শিল্প প্রসার ও কর্মসংস্থান, অন্নদাতা কৃষকদের উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের গুণগত মানোন্নয়ন, জল ও পরিবেশ রক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য রক্ষা এবং দান খয়রাতির রাজনীতি নয়, স্থিতিশীল ও দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy