প্রতীকী ছবি। নিজস্ব চিত্র
কয়েকশো বছরের প্রাচীন জনপদ। পুরসভার বয়সই দেড়শো পেরিয়েছে। তবু এখনও জেলার ‘পিছিয়ে পড়া’ এলাকার তালিকাতেই থেকে গিয়েছে জয়নগরের নাম। বাম আমলে বরাবর এই কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল সরকার বিরোধী দল। তৃণমূল আমলে সেই রীতি বদলেছে। তবে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন থমকে আছে বলেই অভিযোগ।
যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে স্থানীয় মানুষের বিস্তর ক্ষোভ। রেল যোগাযোগ আছে। কিন্তু ট্রেনের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। ট্রেন বাড়ানোর দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হয়নি। জয়নগর স্টেশন থেকে আলাদা লোকাল ট্রেন চালানোর দাবিও উঠছে বহু দিন থেকে। কিন্তু সে ব্যাপারে প্রশাসন উদাসীন বলে অভিযোগ। দু’একটি বাস চলে। কিন্তু কলকাতার সঙ্গে জয়নগরের সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম কুলপি রোড দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল। ভোটের মুখে রাস্তার কাজ শুরু হলেও গত কয়েক বছর ধরে এলাকার মানুষের কাছে বিভীষিকা হয়েই রয়েছে এই পথ। কুলপি রোডের বিকল্প একটি বাইপাস নিয়েও এলাকায় চর্চা চলছে বহু দিন ধরে। কিন্তু সে ব্যাপারেও সদর্থক প্রশাসনিক পদক্ষেপ দেখা যায়নি। অনেকেরই অভিযোগ, কলকাতার ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত হয়েও বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্যই দীর্ঘ দিন ধরে অন্ধকারে রয়ে গিয়েছে শতাব্দী প্রাচীন এই জনপদ।
বহু প্রাচীন মন্দির-স্থাপত্য রয়েছে জয়নগরে। বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য, সঙ্গীতশিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়-সহ বহু নামী মানুষের স্মৃতিবিজড়িত এই এলাকা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে জনপ্রিয় হতে পারে বলে মত অনেকেরই। তবে আজ পর্যন্ত কোনও সরকারই সে ব্যাপারে উদ্যোগ করেনি। জয়নগরের মোয়ার বিশ্বজোড়া খ্যাতি রয়েছে। শীতের ক’মাসে কয়েক কোটি টাকার মোয়া কেনা-বেচা হয়। মোয়ার টানে এলাকায় বহু মানুষের আনাগোনা লেগে থাকে। বিদেশে রফতানিও হয় মোয়া। তবে মোয়াশিল্পকে সংগঠিত করতে এবং আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রশাসনিক তরফে তেমন পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ। অনেকের মতে, শুধু মোয়াকে হাতিয়ার করেই রাজ্যের শিল্প-ব্যবসা মানচিত্রে আলাদা জায়গা করে নিতে পারত জয়নগর। তবে প্রশাসনিক উদাসীনতায় তা হয়ে ওঠেনি।
১৯৭৭ সাল থেকে টানা এখানে ক্ষমতায় ছিল এসইউসি। ২০১১ সালে পরিবর্তনের বছরেও তৃণমূলের সমর্থন নিয়ে এই কেন্দ্রে জেতেন এসইউসি প্রার্থী। তবে পালাবদল হয় ২০১৬ সালে। সে বার একা লড়ে এই কেন্দ্র দখল করে তৃণমূল। বিধায়ক হন বিশ্বনাথ দাস। তৃণমূলের অন্দরের খবর, ইতিহাসের শিক্ষক বিশ্বনাথকে এই কেন্দ্রে প্রার্থী করা ও দীর্ঘ দিনের এসইউসি দূর্গ ভেঙে জিতিয়ে আনার অন্যতম কারিগর ছিলেন দলের পুরনো নেতা গৌর সরকার। কিন্তু ভোটের পরে সেই গৌরের সঙ্গেই সংঘাত বাধে বিশ্বনাথের। দু’জনের নেতৃত্বে দু’টি গোষ্ঠী তৈরি হয়ে যায় এলাকায়। বিশ্বনাথের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দলীয় নেতৃত্বের কাছে এ বার প্রার্থী বদলের দাবিও জানিয়েছিলেন গৌর। তবে বিশ্বনাথকেই ফের এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। প্রার্থীকে সমর্থনের প্রশ্ন নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন গৌর।
গোষ্ঠী-কোন্দল তৃণমূলের জয়ের পথে কাঁটা হতে পারে বলেই মনে করছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। তার উপর এই কেন্দ্রে লোকসভা ভোটে ভাল ফল করেছিল বিজেপি। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিজেপিই তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছে। মায়াহাউড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান রবিন সর্দারকে এখানে প্রার্থী করেছে বিজেপি। প্রার্থী নিয়ে অবশ্য দলের অন্দরে নানা ক্ষোভ রয়েছে। তবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্ব সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি সুনিপ দাসের দাবি, ‘‘বিধায়কের প্রতি মানুষ বীতশ্রদ্ধ। বিজেপিকেই তাঁরা ভোট দেবেন।’’
লড়াই অবশ্য এখানে মোটেই দ্বিমুখী নয়। সংযুক্ত মোর্চার তরফে এই কেন্দ্রে তরুণ মুখ অপূর্ব প্রামাণিককে প্রার্থী করেছে সিপিএম। সিপিএমের পাশপাশি কংগ্রেসেরও সংগঠন রয়েছে এলাকায়। বাম-কংগ্রেস যৌথভাবে ভোটের প্রচার শুরু করে দিয়েছে। জয়নগর মজিলপুর পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান কংগ্রেসের সুজিত সরখেল বলেন, ‘‘প্রকাশ্য রাস্তায় বোমা-গুলি চলার ঘটনা থেকে শুরু করে আমপান দুর্নীতি— এ সবের প্রতিবাদে জয়নগরের মানুষ আর এই বিধায়ককে চাইছেন না। সংযুক্ত মোর্চাই বিকল্প।’’ এলাকায় ভাল প্রভাব রয়েছে এসইউসিরও। প্রাক্তন বিধায়ক তরুণ নস্করকেই আরও একবার প্রার্থী করেছে তারা। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার
যাবতীয় উন্নয়ন হয়েছে এসইউসির আমলে। গত পাঁচ বছরে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। রাস্তাঘাট বেহাল। মানুষ তাই এসইউসিকেই ফিরিয়ে আনতে চাইছেন।’’
বিধায়ক অবশ্য জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তাঁর দাবি, বছরভর কাজ ও মানুষের পাশে থাকার ফল তিনি ভোটে পাবেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিশ্বনাথের আমলে আলো, কংক্রিটের রাস্তা, টিউবওয়েল-সহ বেশ কিছু কাজ হয়েছে। সেই সঙ্গে এলাকার আনাচে কানাচে চষে বেড়িয়েছেন বিধায়ক। কংক্রিটের রাস্তা, টিউবওয়েলের উদ্বোধন হোক বা কোনও কর্মীর বাড়িতে পারিবারিক অনুষ্ঠানেও পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। আমপান পরবর্তী সময়েও এলাকায় দেখা গিয়েছে।
বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘সারা বছর এলাকার মানুষের পাশে ছিলাম। প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। তার ভিত্তিতেই মানুষ আবার ভোট দেবেন। জিতে এসে আমার প্রথম কাজ হবে প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতেও নজর দেব।’’ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বা বিরোধীদের পাত্তা দিচ্ছেন না তিনি। বিশ্বনাথের কথায়, ‘‘সব তৃণমূল কর্মী এক হয়ে কাজ করছেন। কোনও দ্বন্দ্ব নেই। বিরোধীরাও কোনও সুবিধা করতে পারবে না। মানুষ তৃণমূলকেই ভোট দেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy