Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

WB election 2021 : ভোট এলে জেগে ওঠে এক আকাশ বিষণ্ণতা

এখন সেই ঘরে এলায়ে পড়েছে ছবি। ছোট ছোট দীর্ঘশ্বাসে ভরে রয়েছে মাজিদ আনসারির বাড়ি। পরিবারও। ভোট আসে। মনে পড়িয়ে দেয় ছাত্র রাজনীতি করা সেই তরুণের মুখ। গলা বুজে আছে সাজিদের।

পুত্রহারা: এখনও শোক ভোলেননি মাজিদের বাবা-মা, দাদা।

পুত্রহারা: এখনও শোক ভোলেননি মাজিদের বাবা-মা, দাদা। নিজস্ব চিত্র

নমিতেশ ঘোষ
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২১ ০৭:৩৫
Share: Save:

ওই আকাশটা, ওই নীল রঙ, প্রিয় ছিল ওর! সকাল হলেই মাঠে চলে যেত আকাশ দেখবে বলে। ঘাসের উপর বসে পড়ত। ফড়িংয়ের পিছনে দিত ছুট। সবুজ ঘাসে পা ফেলে নিত্য উপভোগ করত জীবন। আর ছিল দুই ভাইয়ের মধ্যে খুনসুটি। ওদের হাসিতে বাড়িটা ভরে থাকত যেন।

এখন সেই ঘরে এলায়ে পড়েছে ছবি। ছোট ছোট দীর্ঘশ্বাসে ভরে রয়েছে মাজিদ আনসারির বাড়ি। পরিবারও। ভোট আসে। মনে পড়িয়ে দেয় ছাত্র রাজনীতি করা সেই তরুণের মুখ। গলা বুজে আছে সাজিদের। মাজিদের দাদা। চোখের জল ঢাকতে মুখ লুকোন তিনি। মাজিদ ওঁর এক বছরের ছোট। দুই ভাই একই কলেজে পড়তেন। একই সঙ্গে সারা দিন কাটত। দু’জনেই প্রকৃতি ভালবাসতেন খুব। তাই মাঝে মাঝে বেরিয়ে পড়তেন চিলাপাতার জঙ্গলে। রাতে বাড়ি ফিরে এক বিছানাতেই ঘুম।

সাজিদের কথায়, “ভাই চলে গিয়েছে তিন বছর হল। আমি অনুভব করি, প্রতিটি মুহূর্তেই ও আমার সঙ্গে রয়েছে। আমরা একসঙ্গে ঘুরে বেড়াই। এক সঙ্গেই রাতে ঘুমোই।’’ বলেই চোয়াল শক্ত করেন সাজিদ। তিনি এখন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কোচবিহার জেলার সহ-সভাপতি। তিন বছর আগে মাজিদও টিএমসিপি-র ছাত্র নেতা ছিলেন। এটাও তাঁদের ভালবাসা, বোঝালেন সাজিদ। জানালেন, কখন যে পড়াশোনা করতে করতে রাজনীতিতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। বাবা মোস্তাকিন আনসারি, মা সালেয়া বেগম বারে বারে মানা করেছিলেন, “রাজনীতি ভাল নয়। তার মধ্যে যাস না। শুধু পড়াশোনাটা কর।” শোনেননি কেউ। যে দিন মাজিদের রক্তাক্ত গুলিবিদ্ধ দেহ রাস্তা থেকে তুলে নার্সিংহোমের দিকে ছুটেছিলেন আত্মীয়-পরিজন, সে দিন থেকেই পাল্টে গিয়েছিল আনসারিদের পরিবার। নার্সিংহোমের বিছানা থেকে মাজিদের নিথর দেহ ফিরছিল ওঁদের রেল ঘুমটির বাড়িতে। সারা শহর ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল সে দিন। অভিযোগ ছিল, দলীয় কোন্দলেই খুন হতে হয় মাজিদকে।

তার পর থেকে মোস্তাকিনের যেন সঙ্গী হয়ে পড়েছে অসুস্থতা। রক্তচাপ বেড়েছে, শরীরে শর্করার পরিমাণও বেড়েছে। মোস্তাকিন বলেন, “তরতাজা ছেলেটার এখন আমার সামনে ছুটে বেড়ানোর কথা। ও যে নেই, ভাবতেই পারি না।”

ভোট গমগম করছে চারদিকে। পতাকায় ছয়লাপ মাজিদদের গোটা পাড়া। সকাল-সন্ধ্যে মাইকের আওয়াজে ভেসে আসছে ভোটের শব্দ। সাজিদও ছুটছেন সকাল থেকেই, সেই ভোট-রাজনীতিতে। সালেয়া বেগম বলেন, “সব তো আগের মতোই আছে। ভোট আসছে। সবাই নেতা-মন্ত্রী হচ্ছেন। আমার ছোট ছেলেটাই শুধু নেই।’’ তার পরে বলেন, ‘‘বড়টা এখনও ছুটছে তার পিছনে। অথচ তাকে তো একটা চাকরিও দিল না কেউ।” ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন সালেয়া। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠেন, “ওই তো নীল রঙ।”

তাঁদের কথাই যেন তরঙ্গে ভেসে যায় দিনহাটার খট্টিমারিতে অলকনিতাই দাসের বাড়িতে। দিনহাটা কলেজের ছাত্র অলকনিতাইকে দিনের বেলা প্রকাশ্যে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল। দরমার বেড়া দেওয়া ছোট্ট ঘরের সামনে বসে কাঁদতে শুরু করেন মা কদমতলা দাস। পাশেই বসে থাকা বাবা হেমন্ত ও ভাই গৌরাঙ্গের চোখেও জল। হেমন্ত বলেন, “দলের লোকেরাই তো ছেলেটাকে খুন করল। কার কী হল? আমরা তো সেই তিমিরেই আছি।”

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy