ফাইল ছবি
কয়েক বছর আগেও দু’জন ছিলেন একই দলের দুই সাংসদ। বয়সে তরুণ ছিলেন লোকসভায়। প্রবীণ ছিলেন রাজ্যসভায়। প্রথমজন এখনও লোকসভার সাংসদ। দ্বিতীয়জন সাংসদপদ ছেড়েছেন। ছেড়েছেন দলও। বাংলা টেলিভিশনের রিয়্যালিটি শোয়ে দু’জনে বিচারকের আসনে থাকেন। একসঙ্গে শ্যুট করেন। ঠাট্টাতামাশাও হয়। খানিক গল্পগুজবও।
কিন্তু জীবনের ‘রিয়্যালিটি’ তার চেয়ে অনেক বেশি খরখরে। ধুলোবালিতে মাখা। বাতানুকূল স্টুডিওর মিঠে হাওয়া থেকে বেরিয়ে বাস্তবের রঙ্গমঞ্চে ঘামে জবজবে পরিধেয়। যে রঙ্গমঞ্চে একে অপরের বিরুদ্ধে যুযুধান। দেব অধিকারী এখন ‘দিদির সৈনিক’। আর মিঠুন চক্রবর্তী ‘মোদীর তারকা সেনাপতি’। যিনি বৃহস্পতিবার নেমে পড়লেন বাংলায় বিজেপি-র হয়ে ভোটের প্রচারে। ‘মহাগুরু’ মিঠুনের শো শুরু হল বাঁকুড়া থেকে। ‘পাগলু’ দেব অবশ্য আগেই নেমে পড়েছেন যুদ্ধক্ষেত্রে। বৃহস্পতিবার তিনি গেলেন পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে। এক ‘অধিকারী গড়ে’ প্রচার করলেন অন্য অধিকারী। শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে তাঁর বিরুদ্ধে প্রচারে নামলেন দীপক অধিকারী।
বৃহস্পতিবার মোট চারটি রোড শো করছেন মিঠুন। শুরু সকাল ৯টা থেকে। প্রথমে বাঁকুড়া, তারপর পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম। চার জেলায় ঘুরছেন মিঠুন। সকালে বাঁকুড়ার ছাতনা এলাকার রোড-শো শুরু হতেই উপচে পড়ে ভিড়। পাকা দাড়ি, কালো চশমা, মাথায় কালো বান্দানা, পরণে সাদা কুর্তা, গলায় মালা আর গেরুয়া উত্তরীয়। অন্য চেহারার দূরত্ব ঘুচিয়ে জনতা তখন ‘ডিস্কো ডান্সার’-কে একঝলক দেখতে, একবার ছুঁতে মরিয়া। যা দেখে অভিভূত মিঠুন বললেন, ‘‘আমি গর্বিত যে আমি বাঙালি। আমি এসেছি পুরুলিয়ার গরির মানুষের কাছে। তাঁদের এটা বলতে যে, অধিকার আদায় করে নিতে হয়।’’ সম্প্রতি তিনি কলকাতার কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রের ভোটার হয়েছেন। এতদিন পর বাংলার ভোটার হওয়া মিঠুনকেও ‘বহিরাগত’ তকমা দিচ্ছে শাসক তৃণমূল। তাচ্ছিল্যভরে সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ‘মহাগুরু’ বলেছেন, ‘‘ আমি যদি বাইরের লোক হই, তা হলে তো মাদার টেরিজা, ভগিনী নিবেদিতাও বাইরের লোক। বাঙালি ওঁদের মাথায় তুলে নাচে! কারণ, ওঁরা বাইরের লোক নন। সেটা প্রমাণিত হয়েছে ওঁদের কাজে। আসলে বাইরের লোক তাঁরা, যাঁরা বাংলায় থেকে বাংলার গরিব মানুষের কথা ভুলে গিয়েছেন। আমি বাইরের লোক না। নীতির লড়াই লড়ছি। তাই-ই লড়ব।’’ জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার মানবাজারে মিঠুনের ২ ঘণ্টার রোড শো করার জন্য মানবাজার মহাকুমা সদরের ইন্দকুরি থেকে নতুন বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত অনুমতি ছিল। কিন্তু সময় পেরিয়ে যাওয়ার ফলে ইন্দকুরী থেকে চকবাজার হয়ে পোদ্দার পাড়াতেই প্রচার শেষ করে হেলিপ্যাডে ফিরে যান তিনি।
পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের টিকরাপাড়া হাইস্কুল মাঠে প্রচারে নেমেছিলেন দেব। দুপুরে ছিল রোড শো। এরপর বিকেলের দিকে নন্দীগ্রামেও যাওয়ার কথা রয়েছে দেব-এর। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্রে প্রচার করবেন ঘাটালের সাংসদ। ক’দিন আগে গিয়েছিলেন পুরুলিয়াতে। বৃহস্পতিবার যেমন সেখানে মিঠুনকে দেখতে উপচে পড়েছে ভিড় (ভিড়ের চাপে একটা সময় হেলিকপ্টারেই মিনিট পনেরো আটক থাকতে হয়েছিল মিঠুনকে। চারদিক থেকে দাবি উড়ে আসছি, ‘‘ডায়ালগ বলুন। একটা ডায়ালগ!’’) সেদিন দেবের জন্যও ঢল নেমেছিল মানুষের। চড়া রোদ মাথায় করেও স্বচক্ষে নায়ককে দেখার ভিড়। গত সোমবার রঘুনাথপুর সাব স্টেশন সংলগ্ন ময়দানের হেলিপ্যাডে নামেন দেব। তার আগে থেকেই সেখানে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেছেন সাধারণ মানুষ থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। হেলিকপ্টার থেকে নেমে রঘুনাথপুর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হাজারি বাউরিকে সঙ্গে নিয়ে হুডখোলা জিপে রঘুনাথপুর শহরে প্ৰায় দু’কিলোমিটার রোড শো করেন ঘাটালের সাংসদ দেব। তার পর যান রেলশহর আদ্রায়।
কিন্তু বাংলার ভোটমঞ্চে দেব-মিঠুনের একইদিনে টক্কর এই প্রথম। কারণ, মিঠুন বৃহস্পতিবারের আগে প্রচারে নামেননি। তবে টক্কর এই শুরু হল। যত দিন যাবে, সেয়ানে-সেয়ানে লড়াই তত বাড়বে। স্বাভাবিক। এটা তো আবার বাস্তবের ‘রিয়্যালিটি শো’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy