চোখেমুখে আতঙ্কের রেশ। ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন অরিন্দম ঝা। পাশে মা চন্দ্রা ঝা। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র
হালিশহরের সায়ন্তিকা দিয়ে শুরু। ভোট ও ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের মাঝখানে পড়ে শিশু, নাবালক, নাবালিকাদের চোখ দিয়ে জল পড়েই যাচ্ছে। এ বার পালা বেহালার অরিমিত্রা ঝা-এর।
মঙ্গলবার রাত দেড়টা নাগাদ তার বাড়ির সামনে পরপর গুলির আওয়াজ। কাউকে লক্ষ করে নয়। তবে গুলি চালানোর উদ্দেশ্য ছিল তার বাবাকে ভয় দেখানো— এমনটাই দাবি করেছেন অরিমিত্রার বাবা অরিন্দম। আর গুলির শব্দে যখন তাঁর বাড়ির লোকজন ভীত, সন্ত্রস্ত, সেই সময়ে বারো বছরের অরিমিত্রা ঘুম ভেঙে উঠে কাঁদতে শুরু করে। তার ভয় হচ্ছিল এটা ভেবে যে, বাইরে যে বা যারা গুলি চালাচ্ছে, তারা বাড়ির ভিতরে ঢুকে এলে কী হবে?
এর আগে হরিদেবপুরের প্রীতি, বালিগঞ্জের পেয়ারাবাগানের ঈশানী, ভাঙড়ের সাহিল ও হালিশহরের সায়ন্তিকা আঘাত পেয়েছে ভোট ঘিরে গণ্ডগোলের মধ্যে পড়ে গিয়ে। বেহালার অরিমিত্রাকে শারীরিক আঘাত পেতে হয়নি ঠিকই, তবে চোট লেগেছে তার মনে। ভয়ে কার্যত কুঁকড়ে গিয়েছে ক্লাস সিক্সের মেয়েটি।
অরিমিত্রাদের বাড়ি ১৪/৪ বামাচরণ রায় রোডে। আর গুলি চলেছে তাদের বাড়ির ঠিক সামনে, রায়বাহাদুর রোড এবং বামাচরণ রায় রোডের মোড়ে। বুধবার সকালে অরিমিত্রাদের বাড়ির সামনেই কার্তুজের চারটি খোল মিলেছে।
রাত দেড়টা নাগাদ গুলির শব্দে অরিমিত্রার প্রতিবেশীদের অনেকেরই ঘুম ভেঙে যায়। গুলির শব্দ থামার পরে কেউ কেউ এক অপরিচিত যুবককে চলেও যেতে দেখেন বলে দাবি করেছেন।
যদিও বেহালার যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই ১২০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা ১৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুশান্ত ঘোষ বলছেন, ‘‘এই ওয়ার্ডে এমন কেউ নেই, যার নাম পুলিশের খাতায় আছে। গুলি চালাতে পারে, এমন কেউ এখানে নেই।’’
যদিও পুলিশের একাংশের সন্দেহের তির, পাশের ওয়ার্ডে ভাস্কর নামে এক দুষ্কৃতীর দিকে। তার নামে অতীতে এমন একাধিক ‘রেকর্ড’ আছে। স্থানীয়দের দাবি, ভাস্কর তৃণমূলের আশ্রিত।
যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই গলির মুখেই সিপিএমের বেহালা উত্তর-পূর্ব ১ নম্বর লোকাল কমিটির সদস্য অরিন্দম ঝায়ের বাড়ি। গত বছর পুর-নির্বাচনে সুশান্ত ঘোষের বিরুদ্ধে প্রার্থী ছিলেন অরিন্দমবাবু। তিনি জানান, শনিবার তৃণমূলের কোনও কোনও ক্যাম্প অফিসে ৩০ জনেরও বেশি ছিলেন। নিয়মানুযায়ী, যেখানে দু’জনের বেশি থাকার কথা নয়। অরিন্দমবাবু পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বিষয়টি জানানোর পরে কিছু ক্যাম্প অফিস থেকে অতিরিক্ত লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
ওই সিপিএম নেতার অভিযোগ, তার পর থেকেই তৃণমূলের রোষ গিয়ে পড়ে তাঁর উপরে। অরিন্দমবাবুর কথায়, ‘‘তৃণমূলের লোকজন বলতে থাকে, আমাকে শায়েস্তা করতে হবে। এটা তারই ফল। আমাকে ভয় দেখাতেই গুলি চালানো হয়েছিল।’’
যদিও তৃণমূল নেতা সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘আমাদের ক্যাম্প অফিস সম্পর্কে ওই অভিযোগ ঠিক নয়। আর আমিও চাই, গুলি চলার প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসুক।’’
এ দিন বেহালা থানায় দায়ের করা অভিযোগে অরিন্দমবাবু জানান, মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় তিনি ও তাঁর পরিবার আতঙ্কিত, পুলিশ যেন তাঁদের নিরাপত্তা দেয় এবং দুষ্কৃতী ও তাদের মদতদাতাদের গ্রেফতার করে।
এ দিন সকালেও অরিন্দমবাবুর বৃদ্ধা মা চন্দ্রা ঝায়ের গলায় আতঙ্কের রেশ। তাঁর কথায়, ‘‘অত রাতে আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। জানালা-দরজা খোলার সাহস পাইনি। সকালে বেরিয়ে দেখি, বাড়ির সামনে গুলির খোল। এখানে এমন আগে হয়নি।’’ অরিন্দমবাবুর কথায়, ‘‘আচমকা আওয়াজে বাড়ির কেউ কেউ ভেবেছিল, বাজি ফাটছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারি, ওটা গুলির আওয়াজ। বলি, দরজা-জানালা খুলো না।’’
অরিন্দমবাবু তখন মেয়ে অরিমিত্রাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। ওঁদের প্রতিবেশী উলূপী মণ্ডল বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পেরেছিলাম, বাজির আওয়াজ নয়। খুব ভয় করছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy