আপাদমস্তক জমজমাট পাড়া। গভীর রাত অবধি মোড়ে মোড়ে লাগাতার আড্ডা। মাত্র দুটো দিনেই বদলে গেল সব। ঘটনাস্থল ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের বাঘা যতীন।
অভিযোগ, ভোট মিটতেই দলের কর্মীদের মার খাওয়ার অজুহাতে শাসক দল রাতভর দাপিয়েছে পাড়ায়। ভোট পর্যন্ত যে পুলিশ মেরুদণ্ড সোজা রেখে গোলমাল হতে দেয়নি, সেই পুলিশের নীরব উপস্থিতিতেই বদলে গিয়েছে পাড়ার ছবিটা। সন্ধ্যা গড়ালেই জনশূন্য হয়ে পড়ছে গোটা পাড়া।
পরপর দু’দিন হামলা। আক্রমণের লক্ষ্য সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা। অভিযোগ, পুলিশ কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে ছিল দুই ঘটনাতেই। দু’টি ঘটনাতেই কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের দলবলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলে তিনি নিজেও এই হামলাকে দলীয় কর্মীদের ‘প্রত্যাঘাত’ বলে দাবি করেন।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা ছিল। সিসিটিভি ফুটেজে পরিষ্কার ভাবে দেখা যাওয়া হামলাকারীরা এলাকায় না থাকায় তাদের ধরা যাচ্ছে না বলে দাবি করেছিল পুলিশ। এমনকী ওসিকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহের ঘটনাতেও অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। তার পরে অভিযুক্ত ১৬ জন তৃণমূল সমর্থক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পায়। আদালতে পেশ হওয়া পাটুলি থানার কেস ডায়েরিতে জামিন খারিজ করার মতো কোনও শক্তিশালী কারণ ছিল না। বাকিরা বুক ফুলিয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভোটে শাসক দল জিতলে ‘উৎসবে’র কিংবা হারলে ‘প্রতিবাদে’র চেহারাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটাই এখন ভাবাচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। উপরন্তু পুলিশের ‘ভোলবদলে’র নিশ্চুপ অবস্থানে গোটা পাড়াটাই যেন আতঙ্কে সিঁটিয়ে গিয়েছে।
এখন তাই সন্ধ্যা হতে না হতেই পাড়ায় অষোষিত বন্ধ। ফুলবাগানের ৮৫ বছরের বেলারানি দে বলেন, ‘‘রবিবার যখন পুলিশ লাঠি মারল, ভেবেছিলাম, যাক ওরা শায়েস্তা হল। এখন তো দেখছি, ওই ছেলেগুলোই বাড়ির সামনে দিয়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরাই সিঁটিয়ে আছি।’’
পুলিশের উপরে ভরসা রাখতে না পেরে কেউ কেউ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। যেমন, সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বুধবার হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন বৃদ্ধা মায়ারানি ঘোষ। তাঁর আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় জানান, আবেদনে বলা হয়েছে, ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস বন্ধ করা এবং ভোট শেষে নির্বাচকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কমিশনের। তারা সেই দায়িত্ব পালন না করায় বৃদ্ধার বাড়িতে ভাঙচুর চলেছে। তাঁকে মারধরও করা হয়েছে। আবেদনকারী ক্ষতিপূরণও দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশনের কাছে।
খোদ পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র মেরুদণ্ড সোজা রাখতে বলেছেন পুলিশকে। তার মধ্যেই পাটুলি থানার পুলিশের এই ভোলবদলে বেজায় ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রপল্লির এক কলেজ ছাত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এক জন দায়িত্ব নিয়ে ওদের প্রথম বারের জন্য মাথা উঁচু করে থাকার সুযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু ওঁর বাহিনীর অনেকেই যে এখনও দলদাস হয়েই থাকতে চাইছেন, তা বোধহয় উনি জানেন না।’’ ফলে দিনেও বেশিক্ষণ প্রতিবেশীদের সঙ্গে আড্ডা বন্ধ হয়েছে। সন্ধ্যা হলেই ঘরে ঢুকে পড়ছেন বাসিন্দারা। কেন্দুয়া মোড়ের এক ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘এখানে রাত ১১টাতেও মানুষ আড্ডা মারত। এখন সন্ধ্যা সাতটার পরেও কাউকে পাবেন না। মানুষ জেনে গিয়েছে, পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তা দেবে না।’’ ফুলবাগানের এক গৃহবধূকে এখনও তাড়া করছে আতঙ্ক— ‘‘কাউন্সিলরের গাড়িটা দেখলেই এখন বুক কাঁপতে শুরু করছে। এই বুঝি বাইক-বাহিনী এল। ছেলেকে নিয়ে ঘরে আগল দিয়ে বসে থাকছি।’’ পুলিশকর্তারা অবশ্য এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ‘প্রথাগত’ আশ্বাস দিয়েছেন।
তবে এ নিয়ে তৃণমূলের কোনও নেতা-মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy